—প্রতীকী চিত্র।
টিফিনের সময়ে স্কুলের ক্যান্টিন থেকে বন্ধুদের খাওয়াতে হবে। তাই রোজ ১০০ টাকা করে আনতেই হবে। অভিযোগ, শহরের এক নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রকে এমনই ‘নির্দেশ’ দিয়েছিল তার তিন সহপাঠী। না আনলে খাতা কেড়ে নেওয়া হবে বলে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রোজ কী ভাবে ১০০ টাকা জোগাড় করবে সে? বাড়ি থেকে তো টিফিন দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত বন্ধুদের চাপে পড়ে সেই ছাত্র বাবার মানিব্যাগ থেকে ১০০ টাকা চুরি করতে শুরু করে। এক দিন ধরা পড়ে যাওয়ায় বাবা-মাকে সব কথা বলতে বাধ্য হয় ওই ছাত্র।
আবার শ্যামবাজারের বাসিন্দা, চতুর্থ শ্রেণির এক পড়ুয়া এক দিন বাড়ি ফিরে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, স্কুলগাড়িতে সে আর চড়বে না। কারণ, স্কুলে যাওয়ার পথে ওই গাড়িতে জানলার ধারের সিট নির্দিষ্ট এক সহপাঠীকে ছেড়ে না দিলে সে পরীক্ষার খাতা বারান্দা থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়। স্কুলপড়ুয়াদের জিজ্ঞাসা করলে এমনই নানা ধরনের ঘটনার কথা জানা যায় বলে জানাচ্ছেন শহরের অভিভাবকদের অনেকেই। তবে, মনোবিদ বা মনোরোগ চিকিৎসকেরা একে ‘র্যাগিং’ বলতে রাজি নন। তাঁদের মতে, এটা ‘বুলিং’। অর্থাৎ, র্যাগিংয়ের তুলনায় খানিকটা কম মাত্রার হেনস্থা। তাঁরা জানাচ্ছেন, স্কুল স্তরে এই বুলিংয়ের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ভবিষ্যতের র্যাগিংয়ের বীজ। মনোরোগ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অন্যকে হেনস্থা করার এই প্রবণতা যদি স্কুল স্তরেই ছাড়ানো যায়, তা হলে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে র্যাগিংয়ের প্রবণতাও অনেকটা কমানো যাবে।
দক্ষিণ কলকাতার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অধ্যক্ষ বললেন, ‘‘আমাদের স্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী ভাল ক্যারাটে করত। ছেলেদের মতো চুলের ছাঁট ছিল তার। কথাবার্তার মধ্যেও কিশোরীসুলভ ভাব কম ছিল। এ নিয়ে তাকে তার কয়েক জন সহপাঠী এত বেশি উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে যে, শেষ পর্যন্ত মেয়েটি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে এবং ক্যারাটে ছেড়ে দেবে বলে জানায়। তার মা, বাবা আমাদের কাছে এসে অভিযোগ জানান। আমরা তখন ব্যবস্থা নিই।’’ মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলেন, ‘‘স্কুল স্তরে এ রকম বুলিংয়ের শিকার হওয়া ছেলেমেয়ে আমাদের কাছে অনেক আসে। দুর্বল কোনও পড়ুয়াকে কয়েক জন মিলে হেনস্থা করে। যারা হেনস্থা করে, তাদের মধ্যে এক জন সর্দার গোছের থাকে। বাকিরা তার শাগরেদ। যারা আজ বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে, তারা পরবর্তীকালে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে নিজেরা র্যাগিং করবে, এমনটা ঘটতেই পারে। কারণ, তাদের মধ্যে কোথাও একটা হেনস্থা হওয়ার আঘাত থেকে যায়।’’ অনিরুদ্ধের মতে, ‘‘স্কুল স্তরে এই প্রবণতা কড়া হাতে দমন করা উচিত শিক্ষকদের। যে সব স্কুলে হস্টেল আছে, সেখানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো র্যাগিং না হলেও সিনিয়রদের দাদাগিরি তো চলেই।’’
স্কুলের যে পাঠ্যক্রম রয়েছে, তাতে জীবন কুশলতার মধ্যে সমানুভূতির পাঠও দেওয়া দরকার। তা হলে স্কুল স্তরে হেনস্থা এবং কলেজ স্তরে র্যাগিং কমতে পারে। কিন্তু কোনও স্কুলেই এই সমানুভূতির পাঠ দেওয়া হয় না। এমনটাই মনে করেন মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ। তিনি বলেন, ‘‘কোনও স্কুলপড়ুয়ার মধ্যে বিশেষ একটি দুর্বল দিক থাকতেই পারে। সেই দুর্বল জায়গায় আঘাত করে তাকে মানসিক ভাবে আরও দুর্বল করে দেওয়ার উদাহরণ আমরা পেয়েছি। স্কুলে জীবন কুশলতার পাঠের অধীনে সমানুভূতির পাঠ দেওয়া খুবই দরকার। তা হলে এই বুলিং কমবে।’’
শহরের বেশ কয়েকটি স্কুলের অধ্যক্ষদের মধ্যে শ্রীশিক্ষায়তনের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য এবং রামমোহন মিশন হাইস্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাসের দাবি, স্কুল স্তরে এই ধরনের বুলিং কোনও কারণে হলেও তা আটকানোর জন্য নানা ভাবে নজরদারি চালানো হয়। যার ফলে সেই হেনস্থা কখনও মাত্রাছাড়া হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy