গন্তব্যে যেতে এখনও অ্যাপ-ক্যাবই ভরসা শহরবাসীর একাংশের। ফাইল চিত্র
বছর আসে বছর যায়, যাত্রী প্রত্যাখ্যানের রোগ সারে না। নিত্য যাত্রীদের বড় অংশের অভিযোগ, বছর শুরুর আগেই যাত্রী প্রত্যাখ্যানের আরও এক নয়া পদ্ধতি বার করে ফেলেছেন অ্যাপ-ক্যাব চালকদের অনেকে। এতে ‘অপছন্দের’ গন্তব্যে যেমন তাঁদের যেতে হচ্ছে না, তেমনই এক জায়গায় দাঁড়িয়েই মিলছে বাতিল বুকিং পিছু ৫০-৬০ টাকা!
ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিজ্ঞতা, অ্যাপ-ক্যাব বুক করে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ক্ষণ। ক্যাবচালক হয় আসছেন না, নয়তো কারণ দেখিয়ে গ্রাহককে দিয়েই বুকিং বাতিল করাচ্ছেন। গন্তব্যে পৌঁছনো দূর, উল্টে গ্রাহককেই দিতে হয়েছে বুকিং বাতিলের জরিমানা। ক্যাব সংস্থায় অভিযোগ করলে জরিমানার টাকা মকুব হলেও ক্যাবচালকের কোনও শাস্তি হচ্ছে না! এই অভিজ্ঞতা যাঁদের হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগেরই গন্তব্য ছ’কিলোমিটার বা তার বেশি দূরে ছিল বলে জানা যাচ্ছে। উৎসাহ ভাতা পেতে কম সময়ে বেশি ট্রিপ করতে গিয়েই ক্যাবচালকেরা নতুন ধরনের প্রত্যাখ্যান পদ্ধতি শুরু করেছেন বলে অভিযোগ।
নারকেলডাঙা নর্থ রোডের বাসিন্দা এক অ্যাপ-ক্যাব চালক জানালেন, দূরের ‘ট্রিপ’ নিলে যাতায়াতে সময় বেশি লাগে, দিনের শেষে লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয় না। তিনি বলেন, ‘‘তাই বুকিং ঢোকার পরপরই ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিই। সেই অবস্থায় ‘রাইড অ্যাকসেপ্ট’ করে গ্রাহক কত দূর যেতে চান দেখে নিই। ছ’কিলোমিটারের মধ্যে হলে সমস্যা নেই। না হলে নেট বন্ধ রেখেই ক্যাবের অ্যাপ্লিকেশন ডেটা মুছে দিই। ফলে অ্যাপে যা জমা ছিল সব উড়ে যায়। এর পরে ফের ইন্টারনেট চালু করে লগ ইন করি। তখন ওই গ্রাহকেরই বুকিং ঢোকে ফোনে। আগের মতোই।’’ চালকের দাবি, ‘‘এর পরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকি। গ্রাহক ফোন করলে তাঁকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করি। যাতে কিছু ক্ষণ পরে বিরক্ত হয়ে তিনি নিজেই ট্রিপ বাতিল করেন। এতে টার্গেটও পূরণ হয়, বাতিল ট্রিপ পিছু টাকাও মেলে। তবে পুরো কাজটা দ্রুত করতে হয়। কারণ, বেশি সময় নিলে বুকিং অন্য নম্বরে চলে যাবে।’’
দমদম হরিসভা এলাকার বাসিন্দা বিপ্লব বিশ্বাস জানান, সম্প্রতি গড়িয়াহাটের এক রেস্তরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন। রাত ১২টা নাগাদ অ্যাপ-ক্যাব বুক করার চেষ্টা করেন তিনি। দীর্ঘ ক্ষণ পরেও চালক আসেননি। ফোনও ধরেননি। এর পরেই ক্যাব বাতিল করেন বিপ্লব। এতে তাঁর ৬০ টাকা জরিমানা করা হয়। মানিকতলার বাসিন্দা সুমিতা দাসের অভিযোগ, তিনি সম্প্রতি বড়বাজার এলাকা থেকে অ্যাপ-ক্যাব বুক করেন। কয়েকটি বাতিল হওয়ার পরে যে ক্যাবের জন্য তিনি কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করেছেন, সেটিও আসতে চায়নি। বললেন, ‘‘২০ মিনিটেরও বেশি অপেক্ষা করে বললেন, চাকা ফেটে গিয়েছে। বাতিল করে দিন, টাকা কাটবে না। তবু ৬০ টাকা জরিমানা হল।’’
ক্যাব সংস্থাগুলি জানতে পারে না? চালকের দাবি, ‘‘কেউ অভিযোগ করলেও প্রমাণ করবেন কী করে? সংস্থা জানতে চাইলে বলব, নেট গোলমাল করছিল, তাই বন্ধ করতে হয়েছিল।’’ অ্যাপ-ক্যাব সংস্থা উব্র-এর তরফে জানানো হয়েছে, নতুন ধরনের এই অভিযোগ আসছে। খতিয়ে দেখে সংস্থা ব্যবস্থা নেবে। ওলার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গ্রাহকেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। অকারণ জরিমানা করা হচ্ছে মনে করে অভিযোগ জানালে অনেক ক্ষেত্রে টাকা ফিরিয়েও দেওয়া হয়।’’
অ্যাপ-ক্যাব ব্যবহারকারীরা অবশ্য বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে টাকা ফেরানো হলেও চালকদের আচরণের জন্য ক্যাব সংস্থার অ্যাপে গিয়ে অভিযোগ জানানোর ঝক্কি পোহাতে কেন হবে? যাঁরা অ্যাপে সড়গড় নন, তাঁরাই বা কী করবেন? নতুন বছরের আগে এই রোগের ওষুধ খুঁজতে আপাতত জেরবার খোদ ক্যাব সংস্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy