অ্যাপ-ক্যাবে সেঁটে দেওয়া হয়েছে এমনই কাগজ। নিজস্ব চিত্র
চৈত্র ফুরোনোর আগেই ৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই গরমে ফুটছে চারপাশ। অথচ অ্যাপ-ক্যাবে এসি-র দেখা নেই। এসি চালানোর কথা বললেই সটান না বলে দিচ্ছেন চালকেরা। কেউ আবার এক ধাপ এগিয়ে ‘নো এসি’ বোর্ডও লাগিয়ে দিয়েছেন। কারণ জানতে চাইলে উত্তর মিলছে, ‘‘অফিস থেকে বারণ আছে’’।
চালকদের এমন অনড় মনোভাবের সামনে গরমে হাঁসফাঁস করেই যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এ নিয়ে সমস্যা বেড়ে চললেও পরিবহণ দফতর কার্যত নিশ্চুপ। তাদের দাবি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আধিকারিকদের একাংশের মতে, নির্বাচনের মুখে ভাড়া বৃদ্ধির বিতর্ক এড়াতেই নীরব তাঁরা।
দিন কয়েক আগে দুপুর আড়াইটে নাগাদ হাওড়া স্টেশন থেকে অ্যাপ-ক্যাব বুক করেন কসবার বাসিন্দা, বছর পঁয়ষট্টির জনার্দন শীল। এসি চালানোর কথা বললে চালক বলেন, ‘‘কেউ এসি চালাচ্ছে না। আপনি ট্রিপ ক্যানসেল করতে পারেন।’’ অসহ্য গরম আর যানজট পেরিয়ে বিকেল ৪টে নাগাদ বাড়ি পৌঁছে অসুস্থ বোধ করতে থাকেন ওই বৃদ্ধ। প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে বেহালার বাসিন্দা, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী মিলি সরকারের। বিমানবন্দর যেতে গিয়ে বেলা ১২টা নাগাদ অ্যাপ-ক্যাবে উঠে মিলি এসি চালাতে বললে চালক রাজি হননি। শেষে এ নিয়ে ক্যাব সংস্থার কাছে নালিশ জানানোর কথা বললে চালক জানান, ক্যাব সংস্থা যাত্রীর কাছ থেকে পাওয়া ভাড়ার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কেটে নেয়। তাঁরা যে টাকা পান, তা দিয়ে গাড়ির ঋণের কিস্তির টাকা মেটানো, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ, ডিজেলের চড়া মূল্য এবং সংসার চালানোর চাপ সামলাতে হয়। এসি না চালালে সারা দিনে ১০-১২টা ট্রিপে ডিজেলের খরচ থেকে মোট ২৫০-৩০০ টাকা বাঁচে। ওইটুকুই তাঁদের লাভ।
এ দিকে যাত্রীদের অভিযোগ, অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলি যা ভাড়া নিচ্ছে, তা যথেষ্ট বেশি, কিলোমিটার পিছু ২০-২২ টাকার কাছাকাছি। তার উপরে সার্জ প্রাইস মাঝেমধ্যেই আকাশছোঁয়া হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু, তার পরেও পরিষেবা পাচ্ছেন না তাঁরা।
এআইটিইউসি অনুমোদিত অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনের অভিযোগ, ক্যাব সংস্থাগুলিকে কমিশনের হার কমানো ও ভাড়া বাড়ানোর কথা বলা হলেও তারা মানেনি। অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলির দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে যাত্রী কমেছে। ফলে, ভাড়া বাড়লে যাত্রীর সংখ্যা আরও কমে যাবে বলে আশঙ্কা। তখন তাদের পক্ষে পরিষেবা সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এআইটিইউসি-র অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনের ও ট্যাক্সি সংগঠনের নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে একাধিক চিঠি দিয়েছি আমরা। কিন্তু সরকার নীরব। ক্যাব সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাই করছে না সরকার। মহারাষ্ট্র, দিল্লিতেও এ নিয়ে আন্দোলন চলছে। নির্বাচন মিটলে তীব্র আন্দোলন হবে।’’
ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ‘‘কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের নির্দেশিকা মেনে অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলি কিলোমিটার পিছু চালকদের ১৮.৭৫ টাকা ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করুক। সামাজিক সুরক্ষার জন্য বিমা-সহ যে সব শর্ত পূরণের কথা বলা আছে, তা মানুক। সরকারি হস্তক্ষেপে ভাড়ার ন্যায্য বণ্টন চাই আমরা।’’
কিন্তু দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে যাত্রীরা ভুগবেন কেন? নওলকিশোর ও ইন্দ্রনীল বলেন, ‘‘এসি বন্ধ রাখা সমাধান নয়। যে স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য যাত্রীরা টাকা দিচ্ছেন, তা না পেলে অন্য কোথাও চলে যাবেন। সে জন্যই চালকদের বোঝানোর পাশাপাশি আমরা সরকারি হস্তক্ষেপ চাই।’’ রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি। এলে ব্যবস্থা নেব। তবে বিষয়টি আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy