প্রতীকী ছবি।
গর্ভাবস্থার ৩৮তম সপ্তাহে ধরা পড়েছিল, তাঁর গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি সে ভাবে হচ্ছে না। চিকিৎসার পরিভাষায় এই সমস্যাকে বলা হয় ‘ইন্ট্রাইউটেরাইন গ্রোথ রেস্ট্রিকশন’ (আইইউজিআর)। পাশাপাশি, আরও কিছু শারীরিক সমস্যা হচ্ছিল অন্তঃসত্ত্বার। বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে অবশেষে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে এসে শেষ মুহূর্তে ধরা পড়ে, তাঁর হৃদ্যন্ত্রের বিরল সেই সমস্যা। সেই সঙ্গে বাদ সাধে কোভিড। সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কোভিড সংক্রমিত সেই অন্তঃসত্ত্বা জন্ম দিয়েছেন এক কন্যাসন্তানের।
মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা, বছর ২৯-এর সুফিয়া খাতুনের জরায়ুতে আইইউজিআর-এর কারণে শিশুর বৃদ্ধি তার গর্ভস্থ সময়কাল মেনে যথাযথ ভাবে হচ্ছিল না বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। জন্মের আগে, পরে এবং জন্মের সময়ে এর জন্য শিশুর প্রাণের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। বাইপাসের ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা দেখেন, এর সঙ্গেই রয়েছে অন্তঃসত্ত্বার হৃদ্যন্ত্রের জন্মগত সমস্যা। যাকে বলা হয় অ্যাবস্টেন অ্যানোম্যালি। বিরল ওই সমস্যা প্রাণঘাতী বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশ্যালিটি হাসপাতালের স্ত্রীরোগ চিকিৎসক প্রিয়াঙ্কা সিংহের তত্ত্বাবধানে সুফিয়া চলতি মাসের ৮ তারিখে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বাড়ি ফিরে গিয়েছেন সুস্থ মা এবং সেই শিশু।
কী এই অ্যাবস্টেন অ্যানোম্যালি? হৃৎপিণ্ডের ডান দিকের দু’টি প্রকোষ্ঠের মাঝে থাকে ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ। তিনটি পাতলা ফ্ল্যাপ থাকে সেখানে, যেগুলি খুললে উপরের রাইট অ্যাট্রিয়াম থেকে রক্ত নীচের রাইট ভেন্ট্রিকলে প্রবাহিত হয়। কিন্তু অ্যাবস্টেন অ্যানোম্যালির ক্ষেত্রে ট্রাইকাসপিড ভাল্ভ ভুল অবস্থানে থাকে এবং ফ্ল্যাপগুলিও বিকৃত হয়। ফলে ভাল্ভ ঠিক ভাবে কাজ করে না এবং রক্ত ভাল্ভের মধ্যে দিয়ে আবার ফিরে যেতে পারে। হার্ট ফেল, অ্যারিদমিয়া অথবা হার্টের অস্বাভাবিক ছন্দ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় হৃদ্যন্ত্রের এই জন্মগত ত্রুটি।
প্রিয়াঙ্কা ছাড়াও সুফিয়ার চিকিৎসক দলে ছিলেন কোভিড চিকিৎসক শিবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, হৃদ্রোগ চিকিৎসক আশফাক আহমেদ এবং অ্যানাস্থেটিস্ট শুভব্রত পাল। চিকিৎসক প্রিয়াঙ্কা বলেন, “হৃদ্যন্ত্রের এই সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর যে কোনও অস্ত্রোপচারের সময়ে হার্ট ফেলের আশঙ্কা থাকে। সেই সঙ্গে সুফিয়ার কোভিড পজ়িটিভ ধরা পড়ায় ঝুঁকি আরও বেড়ে গিয়েছিল। মেরুদণ্ডে অ্যানাস্থেশিয়া প্রয়োগ করে সিজ়ারিয়ান করা হয়েছিল।”
এসএসকেএম হাসপাতালের হৃদ্রোগ চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল বলছেন, “যে কোনও কনজেনিটাল বা জন্মগত হৃদ্রোগ থাকলেই সন্তানধারণ করা ঝুঁকির। সেখানে অ্যাবস্টেন অ্যানোম্যালির ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও অনেকটাই বেশি। তা কাটিয়ে মাকে সুস্থ রেখে প্রসব করানো অবশ্যই কৃতিত্বের। তবে মায়ের পরবর্তী চিকিৎসা করাও অত্যন্ত জরুরি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy