—প্রতীকী চিত্র।
চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। মুখের চামড়া কুঁচকে গিয়েছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারেন না। কারও হাত বা লাঠি না ধরে চলাফেরারও ক্ষমতা নেই। বছর সত্তরের এ হেন বৃদ্ধাকে নাকি ফেলে পিটিয়েছেন তাঁর ছেলে! পাশের বাড়ির লোকজন থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ গিয়ে দেখে, বৃদ্ধার সারা গায়ে কালো ছোপ। মুখের এক দিক ফুলে রয়েছে। কিন্তু বৃদ্ধা ছেলের বিরুদ্ধে পুলিশকে কিছু বলতে নারাজ। পুলিশ তাঁকে বলে, ‘‘আপনি বলুন, ছেলেই মেরেছে তো? বুঝিয়ে ছেড়ে দেব। যাতে এমন আর না করে!’’ মহিলা তবু অনড়। পুলিশকে তিনি বলেন, ‘‘বাথরুমে পড়ে গিয়েছি। ছেলে কিছু করেনি!’’ শেষে পুলিশ চলে গেলে ঘটনাস্থলে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছেলেমেয়েদের বৃদ্ধা জানান, যতই হোক, ছেলে তো! পুলিশকে বললেই বেধড়ক মারবে!বুধবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘প্রবীণ জনসংখ্যার ভবিষ্যৎ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা’ শীর্ষক আলোচনাচক্রে নিজের এই অভিজ্ঞতা শুনিয়ে ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট অব জেরন্টোলজি’র প্রতিষ্ঠাতা ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী বললেন, ‘‘মহিলা নিজে ছেলের হাতে মার খেতে পারেন, কিন্তু পুলিশ মারবে বলে ছেলের কথা বলবেন না! এই মানুষগুলোকে তো বাঁচাতেই হবে! সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষকে বোঝাতে হবে অ্যাবিউজ় আর ভায়োলেন্সের পার্থক্য।’’
আলোচনাচক্রে ছিলেন ‘অ্যালঝাইমার্স অ্যান্ড রিলেটেড ডিজ়অর্ডারস সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’র কলকাতা চ্যাপ্টারের সেক্রেটারি নীলাঞ্জনা মৌলিক, ‘সাপোর্ট এল্ডার্স’ সংস্থার প্রধান অপ্রতিম চট্টোপাধ্যায় ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট চিত্রাঙ্কনা বন্দ্যোপাধ্যায়। আলোচনার সঞ্চালনা করেন অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা সংস্থার আধিকারিক অনিন্দ্য দাস।
আলোচনার শুরুর দিকে চিত্রাঙ্কনা বলেন, ‘‘একটা বয়সের পরে অনেকেই জীবনের উদ্দেশ্য কী, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন। সেই সঙ্গে কারও কারও চলাফেরার ক্ষমতা থাকে না। তখন সমাজে বা চারপাশে নিজেদের গুরুত্ব কমে গিয়েছে বলে মনে করতে শুরু করেন তাঁরা। তাই বয়স্কদের মন বুঝে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। শরীরের আর পাঁচটা রোগের মতো মনের রোগকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।’’ এই সূত্রে নীলাঞ্জনা বলেন, ‘‘মাথা নিয়ে আমরা তেমন ভাবিই না। অথচ, এই মাথার জন্যই প্রচুর সমস্যা তৈরি হয়। এই যেমন ডিমেনশিয়া। ২০১৫ সালে ভারতে ৩০ লক্ষ মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। এখন তা ৮০ লক্ষে পৌঁছেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে সংখ্যাটা ২০০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু বয়স্ক নয়, যে কোনও মানুষের এমন লক্ষণ দেখা গেলে পরিবারের লোকজনকে সতর্ক হতে হবে। সমস্যা বেড়ে চলার গতিটা লক্ষ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’’
বয়স্কদের কাজে লাগতে পারে, এমন নানা প্রযুক্তির উদাহরণ দিয়ে অপ্রতিম বলেন, ‘‘শুধু দূর থেকে প্রযুক্তিকে কাজে লাগালেই হবে না, চাই নিবিড় যোগাযোগ। বয়স্কদের ভাল রাখার এর চেয়ে ভাল উপায় নেই।’’ এই সূত্রেই ইন্দ্রাণীর দাবি, বয়স্কদের জন্য আরও সরকারি উদ্যোগ চাই। ১৫ জুনের ‘ওয়ার্ল্ড এল্ডার অ্যাবিউজ় অ্যাওয়ারনেস ডে’ বা বিশ্ব বয়স্ক নির্যাতন সচেতনতা দিবসের কথা উল্লেখ করে সিনিয়র সিটিজ়েন আইন, ২০০৭-এর নানা দিক তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘‘বার্ধক্যের অন্য সব বিষয় নিয়ে ভাবলেও আমরা সামাজিক পরিকল্পনার দিকটা বাদ রেখে দিই। এ নিয়েও সচেতনতার প্রচারের প্রয়োজন।’’ উপস্থিত সকলেই একমত হয়ে বলেন, এর সঙ্গেই চাই আরও বেঁধে বেঁধে থাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy