Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Scam

ব্যক্তিগত ভিডিয়ো ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে প্রতারণা প্রৌঢ়কে

পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, দমদমের বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর ওই প্রৌঢ়ের আপাতত সর্বস্বান্ত হওয়ার দশা।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৩০
Share: Save:

ফেসবুকে এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল অভিযোগকারী প্রৌঢ়ের। অভিযোগ, তাঁর অনুরোধ রাখতেই প্রৌঢ় অনলাইনে তরুণীর সঙ্গে ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিয়ো শেয়ার করেছিলেন। তার পরে সেই তরুণীই ওই ভিডিয়ো ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ। তার পরে আবার তরুণী আত্মঘাতী হয়েছেন দাবি করে প্রৌঢ়কে ভয় দেখানো শুরু হয়। অভিযোগ, তরুণীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দেওয়ার দায়ে গ্রেফতার হতে পারেন, প্রৌঢ়কে এমনটা জানিয়ে, পুলিশকে ঘুষ দেওয়ার টোপ দিয়ে আরও কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকেরা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানার পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জামতাড়া গ্যাংয়ের কোনও যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, দমদমের বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর ওই প্রৌঢ়ের আপাতত সর্বস্বান্ত হওয়ার দশা। গত নভেম্বরে ফেসবুকে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় এক তরুণীর। তার পরে দু’জনের মধ্যে ভার্চুয়াল যোগাযোগ বাড়ে। গল্প-কথাবার্তা, সবটাই অনলাইনে চলত বলেই দাবি প্রৌঢ়ের আইনজীবী রজতশুভ্র দাসের। তিনি জানান, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ১৩-১৪ জনের একটি চক্র মিলে তাঁর মক্কেলের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে ওই প্রৌঢ় জানিয়েছেন, তিনি একটি নির্মাণ সংস্থায় কর্মরত। নভেম্বরে ফেসবুকে তাঁর সঙ্গে ওই তরুণীর পরিচয় হয়। তরুণীর তরফ থেকেই বন্ধুত্বের প্রস্তাব এসেছিল বলে দাবি অবিবাহিত ওই প্রৌঢ়ের।

তদন্তকারীরা জানান, প্রথমে ওই তরুণী প্রৌঢ়ের সঙ্গে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ রাখতেন। এর পরে তরুণী প্রৌঢ়ের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চান। প্রথমে দু’জনের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে স্বাভাবিক আলোচনা হলেও এক সময়ে সেই কথোপকথন অন্তরঙ্গ পর্যায়ে পৌঁছয়। ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে দু’জনের ব্যক্তিগত মুহূর্তের আদানপ্রদানও হত।

অভিযোগ, এক দিন তরুণী সেই সব ভিডিয়ো দেখিয়ে প্রৌঢ়ের থেকে ২৫ হাজার টাকা চেয়ে বসেন। টাকা না পেলে ওই সব ভিডিয়ো ভাইরাল করে দেওয়া হবে বলে হুমকিও দেওয়া হয় প্রৌঢ়কে। এর পরে তিনি ওই তরুণীর বলে দেওয়া একটি অ্যাকাউন্টে ১৫ হাজার টাকা পাঠান।

অভিযোগ, এর পরেই তাঁকে ধীরে ধীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় প্রতারণার চক্রব্যূহে। পুলিশ জানায়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, সামাজিক সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখতে ওই প্রৌঢ় প্রতারকদের একের পর এক চাহিদা মেটাতে থাকেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, তরুণীকে টাকা দেওয়ার পরেই প্রৌঢ়ের কাছে দিল্লি পুলিশের সাইবার শাখার নাম করে এক ব্যক্তির ফোন আসে। অভিযোগ, ওই ব্যক্তি প্রৌঢ়কে জানান, তাঁর এবং তরুণীর তিনটি ভিডিয়ো ইউটিউবের মাধ্যমে ঘুরছে। সেগুলি মুছে ফেলার জন্য ওই ব্যক্তি প্রৌঢ়কে একটি ফোন নম্বর দেন। সেই নম্বরে প্রৌঢ় ফোন করলে ভিডিয়ো মুছে দেওয়ার জন্য আড়াই লক্ষ টাকা চাওয়া হয়। একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর প্রৌঢ়কে দেওয়া হয়। সেই নম্বরে তিনি টাকা পাঠান।

এই ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রৌঢ়ের থেকে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রৌঢ়ের আইনজীবী রজতশুভ্র দাসের অভিযোগ, ‘‘সামাজিক সম্মান বাঁচাতে আমার মক্কেল সর্বস্বান্ত হয়েছেন। কখনও তরুণী আত্মঘাতী হয়েছেন, কখনও দিল্লি পুলিশ বাড়িতে হানা দেবে বলে প্রৌঢ়কে ফোন করা হয়েছিল। গ্রেফতারি এড়াতে চাইলে তাঁকে ১৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলা হয়। আমার মক্কেল তা-ও করেছেন।’’

বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, প্রতিটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, যে সব ফোন নম্বর প্রতারণার কাজে ব্যবহার হয়েছে, সেগুলির কল রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Scam Fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy