দখলরাজ: ফুটপাত জুড়ে পসরার সম্ভার। বৃহস্পতিবার, শ্যামবাজার মোড়ের কাছে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
কথা ছিল, দু'পক্ষের বিরুদ্ধেই কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে। পুলিশ গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করবে। খোদ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, "এমন লেনদেনের পুরোটাই বেআইনি। আইনের পথে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।" পুরসভার মেয়র পারিষদ (হকার পুনর্বাসন কমিটি) দেবাশিস কুমারও বলেছিলেন, ‘‘দু’পক্ষেরই কড়া শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। যাতে সমাজের সমস্ত স্তরে একটা বার্তা যায়।’’ কিন্তু গ্রেফতারি তো দূর, মাস পেরোলেও শ্যামবাজারের ফুটপাত বিক্রি-কাণ্ডে কোনও রকম কড়া পদক্ষেপই করা হয়নি বলে অভিযোগ। উল্টে, ফুটপাতের যে দোকানটি ঘিরে অনিয়মের কথা সামনে এসেছে,সেটি পাঁচ হাজার টাকা ভাড়ায় নতুন ভাবে চালু করে দিয়েছে এক পক্ষ। অন্য পক্ষকে আবার পুলিশই বিকল্প জায়গা দেখে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল বলে দাবি!
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি 'টক টু মেয়র' অনুষ্ঠানে ফোন করে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছিলেন কাশীপুরের রতনবাবু রোডের বাসিন্দা, মণিকা জানা নামে এক মহিলা। তিনি জানান, বছরকয়েক আগে শ্যামবাজারের ভূপেন বসু অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাতের একটি দোকান পার্থ দাস নামে এক যুবকের থেকে মাসিক পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া নেন তিনি। পার্থ শ্যামবাজারেরই কৃষ্ণরাম বসু স্ট্রিটে থাকেন। দোকানের নিরাপত্তা বাবদ সেই সময়েপার্থকে তিনি ৩৫ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পার্থ দোকানটি তাঁকে বিক্রি করে দেন বলে মহিলার দাবি। দেড় লক্ষ টাকায় রফা হয়। আগে দেওয়া ৩৫ হাজার টাকা বাদে আরও এক লক্ষ ১৫ হাজার টাকা দেন তিনি। দু’পক্ষই কোর্ট পেপারে সই করেন। সবটাই ভিডিয়ো করা রয়েছে।
কিন্তু ওই বছরেরই ডিসেম্বরে পার্থ হঠাৎ হৃদ্রোগে মারা যাওয়ার পর থেকে তাঁর পরিবারের তরফে দোকানটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে মণিকা দাবি করেন। থানা-পুলিশ, মন্ত্রী, পুরপ্রতিনিধির কাছে ঘুরেও সুরাহা না হওয়ায় তিনি মেয়রকে ফোন করেছেন।
অনেকেই বলাবলি শুরু করেন, শহরের ফুটপাত বিক্রি হয় বলে দীর্ঘদিন ধরে যে অভিযোগ, তা সত্যি বলে প্রমাণ করল এই ফোন কল। এত দিন বিষয়টি সে ভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। তাই ফাঁপরে পড়ে তড়িঘড়ি বিবৃতি দিতে হয় প্রশাসনিক কর্তাদের। অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে মণিকা এর পরে ফুটপাত বিক্রির চুক্তি করা কোর্ট পেপার প্রকাশ্যে আনেন। তাতেই মেয়র পুলিশকে কড়া হাতে ব্যবস্থা নিতে বলেন। সেই ঘটনার এক মাসের মাথায় বৃহস্পতিবার খোঁজ করে জানা গেল, এত কাণ্ডের পরেও ভূপেন বসু অ্যাভিনিউয়ের ওই দোকানটি তুলে দিয়ে ফুটপাত পুনরুদ্ধারের কোনও চেষ্টা দেখা যায়নি পুলিশ-প্রশাসনের তরফে। এখন সেই দোকান চালাচ্ছেন বিকি দাস নামে এক যুবক। পার্থ মারা যাওয়ার পরে তাঁর কলেজপড়ুয়া স্ত্রী মঞ্জরী বসাক ও তাঁদের বছর দেড়েকের ছেলেকে সামনে রেখে দোকানটি পুনরুদ্ধারে নেমেছিলেন পার্থের দাদা বাবুয়া দাস। স্থানীয় সূত্রের খবর, মঞ্জরী দোকানটিতে বসতে চান না। তাই বাবুয়ার ভাবনা মতো মণিকার পরে মাসিক পাঁচ হাজার টাকায় দোকানটি ফের ভাড়া দেওয়া হয়েছে বিকিকে। যদিও এ ব্যাপারে বিকির বক্তব্য, "দোকানের মালিকেরাই এ সব বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন।" বাবুয়ার দাবি, "পুলিশ আর বাধা দিতে আসেনি। ভাইয়ের বৌয়ের কম বয়স, দোকানে বসতে পারে না। ওই মাসিক পাঁচ-ছ'হাজার টাকায় বিকির সঙ্গে কথা হয়েছে। যা বিক্রি হবে, এর পরে আধাআধি। তবে, আগের বারের ভুল আর করা হয়নি। কাগজপত্রে নয়, বিকির সঙ্গে সবটাই মৌখিক।"
তার মানে ফের ফুটপাত ভাড়ার কারবার শুরু? স্থানীয় হকার নেতা সুকুমার হাজরা বললেন, "আমাদের বাইরে কিছু বলা বারণ আছে। যা বোঝার প্রশাসন বুঝবে।" এলাকাটি শ্যামপুকুর থানার অন্তর্গত। সেখানকার পুলিশকর্মীরাও মন্তব্য করতে নারাজ। মণিকা যদিও বললেন, "দোকান তো পেলামই না, টাকাও ফেরত পাইনি। পুলিশ শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেটের বাইরে একটা বিকল্প জায়গা আমাদের দিতে চাইছিল। কিন্তু ওখানে বসলে দু'দিনে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে তুলে দেওয়া হত।"
পুলিশই বিকল্প জায়গা দেখিয়ে দিচ্ছে? মেয়র ফিরহাদ বললেন, "কী ঘটেছে, রিপোর্ট নিচ্ছি। কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy