Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Minor Girl

অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকা, তদন্তে পদে পদে গড়িমসি

গড়িমসির বিষয়টি স্বীকার করেছেন শিশু রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীও।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দীক্ষা ভঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২০ ০৩:৫২
Share: Save:

বছর বারোর মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা। চিকিৎসক চাইছেন, মেয়েটির যৌন নিগ্রহকারী শাস্তি পাক। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, সে ব্যাপারে তদন্তকারী অফিসার ও থানাকে বার বার অনুরোধ করায় তাঁকে শুনতে হল, “মেয়েটির বাবা-মা যখন চাইছে না, তখন আপনি মাথা ঘামাচ্ছেন কেন?”

এমনকি, দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটির গর্ভপাতের পরে তদন্তের স্বার্থে ভ্রূণটির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য বার বার তদন্তকারী অফিসারকে বলা হলেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান বলে অভিযোগ। শেষে রাজ্যের শিশু রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সনকে ওই চিকিৎসক ঘটনাটি জানালে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানার সেই অফিসার তড়িঘড়ি ভ্রূণের নমুনা সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠান।

অভিষেক আগরওয়াল নামে ওই অফিসারকে ফোনে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘যা বলার থানার আধিকারিকেরা বলবেন।’’

অভিযোগকারী চিকিৎসক শমীক ঘোষ বলেন, ‘‘মেয়েটির অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার সম্ভাব্য দিন হিসেব করে ও এবং ওর মায়ের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ও যৌন নিগ্রহের শিকার হয়।’’ যদিও তদন্তকারী অফিসার তদন্তের আগেই শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির সামনে ভিডিয়ো কলে নিগৃহীতাকে পেশ করে জানান, সে বাড়িতেই নিরাপদ। সমিতিও মেয়েটিকে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিতে নির্দেশ দিয়েছে। সমিতির চেয়ারম্যান মানিক চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘মেয়েটি আতঙ্কে রয়েছে। বাবা-মায়ের কাছেই ও নিরাপদ।’’

কী ঘটেছিল? শমীকবাবু জানান, গত ১৮ জুন সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে মেয়েটিকে তাঁর কাছে নিয়ে আসে তার পরিবার। ক্রমাগত বমি হচ্ছিল তার। আলট্রাসোনোগ্রাফি করিয়ে দেখা যায়, সে প্রায় দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা! মেয়েটির মায়ের পাশাপাশি বিষয়টি পুলিশকেও জানান শমীকবাবু।

তিনি জানান, গর্ভপাতের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি প্রয়োজন ছিল। ওই অফিসারকে তা এনে দিতে বলেন তিনি। শমীকবাবুর দাবি, ‘‘বার বার পুলিশকে বলেছি, বেশি দেরিতে অস্ত্রোপচার ঠিক হবে না। এত ছোট মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা মানে সে কোনও ভাবে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে। কিন্তু ওই অফিসার অস্ত্রোপচারের দিন পিছোতে বলেন। এমনকি ভ্রূণের নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রেও তিনি বলেন, ‘মেয়েটির বাবা-মা যখন চাইছেন না, তখন আপনি কেন মাথা ঘামাচ্ছেন’।’’ শমীকবাবুর বক্তব্য, ‘‘অত ছোট মেয়ের জরায়ু বড়দের মতো হয় না। ফলে ভিতরে ভ্রূণ বাড়তে পারে না। সেটা ঝুঁকির। আবার ভ্রূণ নষ্ট হয়ে গেলে ভিতরে সংক্রমণ হতে পারত।’’

২৩ জুন অস্ত্রোপচারের দিন ঠিক করে তা পুলিশকে জানান তিনি। কিন্তু অভিযোগ, ওই অফিসার দিন পিছোতে বলেন। জানান, রথযাত্রার জন্য ফরেন্সিক ল্যাব বন্ধ থাকবে।

সেই মতো অস্ত্রোপচার পিছোলেও ল্যাবে নমুনা পাঠানোর জন্য ওই অফিসার ওটি-র আগে শিশু কল্যাণ সমিতির কোনও নির্দেশ হাসপাতালে দেননি বলে অভিযোগ। অস্ত্রোপচারের পরে সেই রাতে নমুনা সংরক্ষণের নির্দেশ আসে সমিতির থেকে। অভিযোগ, তা সত্ত্বেও ওই অফিসার ২৬ জুন দুপুর পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করেননি। শমীকবাবুর দাবি, ‘‘শেষে আমিই ল্যাবের চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখনই জানতে পারি, রথে ল্যাব খোলা ছিল। আর ২৪ তারিখের আগে ওই অফিসার কোনও যোগাযোগই করেননি।’’

এর পরে শমীকবাবু বিষয়টি কমিশনে জানালে ওই অফিসার তড়িঘড়ি নমুনা নিয়ে যান। তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘২৬ তারিখ নমুনা নেওয়া হয়। আগের দিন কিছু না জানিয়েই ওই অফিসার মেয়েটিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। আমি হাসপাতালকে বলি, অফিসারকে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানাতে হবে।’’

গড়িমসির বিষয়টি স্বীকার করেছেন শিশু রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীও। শিশু কল্যাণ সমিতির লিখিত নির্দেশ না দেখিয়ে কি পুলিশ নিজের দায়িত্বে কোনও নাবালিকাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে পারে? পুলিশের উত্তর মেলেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Minor Girl Rape Pregnant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy