কলিন স্ট্রিটের সরু গলির ভিতরে একাধিক জটলা। আখতারের খানের বাড়ি জিজ্ঞাসা করতেই এক জন আঙুল তুলে দেখালেন পুরনো দোতলা বাড়ির দিকে। ঘিঞ্জি বসতি এলাকা। উঠোন থেকেই লম্বা খাড়া সিঁড়ি উঠে গিয়েছে উপরে। সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই দু’দিকে দু’টো ঘর। ‘আখতার’ বলে ডাকতেই বাঁ দিকের ঘরের ভিতর থেকে ভেসে এল এক মহিলা কণ্ঠ। বললেন, ‘‘ওই নামে এখানে কেউ থাকে না।’’
কিন্তু পুলিশ যে বলছে, আইএসআই চর সন্দেহে ধৃত আখতার খানের ঠিকানা এটাই? প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিতেই কিছু ক্ষণের নীরবতা। ফের ভেসে এল সেই মহিলা কণ্ঠ। জানাল, ‘‘হ্যাঁ আমার দেওর। আগে এখানেই থাকত। কিন্তু ওর সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না।’’
ইতিমধ্যেই ডান দিকের বেরিয়ে এলেন এক বৃদ্ধ। নিজের পরিচয় দিলেন আখতারের মামা মইনুদ্দিন হিসেবে। ওই বৃদ্ধই জানালেন, ৬ নভেম্বর থেকে আখতারের খোঁজ মিলছিল না। নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা পুলিশে জানিয়েছিলেন আখতারের পরিজনেরা। শনিবার রাতে পুলিশ আখতারের এক দিদি সুরাইয়াকে জানায়, আখতারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আখতার যে বেশ কয়েক বছর পাকিস্তানে ছিল, তা-ও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পাকিস্তানে গেলেই কি কেউ জঙ্গি হয়ে যায়!’’ তাঁর অভিযোগ, পুলিশ আখতারকে ফাঁসিয়েছে।
কে এই আখতার খান?
গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, আখতার আদতে পাক নাগরিক। কলকাতায় মামার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল সে। মইনুদ্দিনের পরিবারের দাবি, আখতার এবং তাঁর চার ভাইবোন কলকাতাতেই বড় হয়েছে। তাঁদের আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড রয়েছে। তবে আখতারদের জন্মস্থান ঠিক কোথায়, তার কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। মইনুদ্দিন বলেন, ‘‘কলিন স্ট্রিটের একটি পাড়ার স্কুলে ও পড়াশোনা করেছে। তার পর কয়েক বছর বিদেশে ছিল। ২০১১ সালে ফের ফিরে আসে।’’ মইনুদ্দিন জানান, এ দেশে ফেরার পর থেকে আখতার তপসিয়া এলাকায় সুরাইয়ার বাড়িতেই বেশি থাকত। বিভিন্ন হোটেলে বার টেন্ডারের কাজও করত। মকটেল-ককটেল তৈরিতে তার হাতযশও ছিল।
সুরাইয়া জানান, হাওড়ার একটি পার্টিতে বার টেন্ডারের কাজ করতে যাচ্ছে বলে ৬ নভেম্বর দুপুরে তপসিয়ার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল আখতার। তার পর থেকেই আর কোনও খোঁজ মিলছিল না। মোবাইল ফোনও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ৭ নভেম্বর তিলজলা থানায় মিসিং ডায়েরি করা হয়। ১০ নভেম্বর লালবাজারে গিয়ে গোয়েন্দা বিভাগে দেখাও করেন সুরাইয়ারা। এ দিন আখতারের নিখোঁজ রহস্য নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর পরিজনেরা। তাঁদের বক্তব্য, ৬ নভেম্বর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সে কোথায় ছিল, তা জানাক পুলিশ।
চুপচাপ থাকা ছেলেটার বিরুদ্ধে আইএসআই সংশ্রবের অভিযোগ কী ভাবে উঠল, তা ভেবে পাচ্ছেন না কলিন স্ট্রিটের বাসিন্দারাও। এ দিন গলির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনকে জিজ্ঞাসা করতেই জানা গেল, এলাকায় পরিচিত মুখ সে। কোনও দিন গোলমালে জড়াতে দেখা যায়নি তাকে। ‘‘আখতার ভাইকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। ২০১১ সালে বিদেশ থেকে ফেরার পরেই কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। কারও সঙ্গে মেলামেশাই করত না,’’ বলছেন কলিন স্ট্রিটের এক যুবক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy