ব্যবসায়ীদের ব্যস্ত বাজারে চলছে কেনাবেচা। (ইনসেটে) বাজারের সদর। নিজস্ব চিত্র।
বাজারে জোরালো আলো নেই, পানীয় জল নেই, শৌচালয় নেই, এক জন নিরাপত্তারক্ষীও নেই। এমনই অবস্থা খিদিরপুরের জিরাট ব্রিজ থেকে কালীবাবুর বাজারের শেষ পর্যন্ত একশো বিঘা জায়গা জুড়ে থাকা অরফ্যানগঞ্জ বাজারের। নিরাপত্তা রক্ষী না থাকায় এই বাজারে গত তিন মাস ধরে শুরু হয়েছে চোরেদের দৌরাত্ম্য। যার জেরে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা। উপযুক্ত পরিষেবা ও নিরাপত্তার দাবিতে গত ৫ জুলাই, বৃহস্পতিবারই বারো ঘণ্টা বাজার বন্ধ রেখেছেন তাঁরা।
তিন দশক আগেও এখানে ব্যবসায়ী ছিলেন ১৩০০ জন। এখন আটশোরও কম। বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছিলেন, যার অন্যতম কারণ হকারের দৌরাত্ম্য। অভিযোগ, চার দিকে প্রায় খোলা এই বাজার ধীরে ধীরে হকারের গ্রাসে চলে যাচ্ছে। এর জেরে ক্ষতি হচ্ছে দৈনন্দিন ব্যবসা এবং নিরাপত্তা। তাঁদের দাবি, এ নিয়ে বারবার জানিয়েও কোনও লাভই হয়নি। অথচ এ বাজারে ফল, আনাজ, মাছ, মাংস, মুদি, চা, মশলা, কাঠের গুদাম, ডালপট্টি সবই রয়েছে। পাইকারি ও খুচরো দুই-ই চলে এই সরকারি বাজারে।
কেনাবেচার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং পুরনো এই বাজারের বিপরীতেই রয়েছে ওয়াটগঞ্জ থানা। অথচ গত তিন মাসে পাঁচটি চুরির ঘটনা ঘটে গিয়েছে। শেষ চুরির ঘটনাটি ঘটে দিন আষ্টেক আগে। বাজারের শুকনো ফল ও মশলা ব্যবসায়ী শৌভিক বিড বলেন, ‘‘শেষ চুরিটা হয়েছে আমার দোকানের দুটো পরেই। রাত দেড়টা থেকে তিনটের মধ্যে দোকানের টিনের ছাউনি কেটে এক লক্ষ তিরিশ হাজার টাকা মূল্যের ছোট এলাচ আর জাফরান নিয়ে গিয়েছে চোরেরা। এমনকি দোকানের ভিতরে থাকা সিসি ক্যামেরাও ভেঙে দিয়েছে|’’ অভিযোগ, সব ক্ষেত্রেই চোরের লক্ষ্য দামি মশলা, বিস্কুট এ সব। অন্য এক ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, কিছু দিন আগের ঘটনা। সম্ভবত মুদির দোকান ভেবে আলমারির দোকানের চাল কেটে ঢুকে চোর ব্যাটার মুষড়ে গিয়েছিল। তাই রাগের বশে দোকানেই মল-মূত্র ত্যাগ করে যায়।
অরফ্যানগঞ্জ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক গৌর সাহা বলেন, ‘‘প্রায় এক বছর হল বাজারের ব্যবসায়ীদের ভাড়া তিন গুণ বাড়ানো রয়েছে। কিন্তু বহু বার বাজারে আলো, শৌচালয় আর পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনে আবেদন করেও কোনও পরিবর্তন হয়নি। এত বড় বাজারে নিরাপত্তার ব্যবস্থাই নেই কোনও। সিসি ক্যামেরা, আলো আর রক্ষী রাখার বিষয়ে পুলিশকেও আমরা বারবার বলেই যাচ্ছি।”
কলকাতা পুলিশের বন্দর বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এত চুরির কথা জানা নেই।
তবে দেড় মাস আগে পুলিশের তরফ থেকে চারটি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। প্রতি রাতে টহল দেওয়া হচ্ছে। ওঁদের মূল সমস্যা হকার। তাঁদের জন্যই বাজারের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এই নিয়ে হকার সমিতির সঙ্গে আলোচনাও শুরু হয়েছে।’’ যদিও এমন দাবি মানতে চাননি গৌরবাবু। তিনি জানান, কোনও পুলিশি টহল ছিল না এত দিন। বন্ধের আগের রাতে বসেছে চারটি সিসি ক্যামেরা। আর বন্ধের রাত থেকেই শুরু হয়েছে পুলিশের টহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy