আচ্ছন্ন: ধাপায় আবর্জনার স্তূপে লাগানো আগুন থেকে উঠছে ধোঁয়া। শনিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা কী ভাবে কমানো যায়, তার দিশা পেতে ২০১৯ সালের নভেম্বরে একটি উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শদাতা কমিটি তৈরি করে কলকাতা পুরসভা। কমিটিতে ছিলেন আইআইটি খড়্গপুর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিরা-সহ পুর আধিকারিকেরা। ঠিক হয়েছিল, কমিটি বায়ুদূষণ রোধে ১৫ দিনের মধ্যে একটি স্বল্পমেয়াদি এবং ৪৫ দিন, অর্থাৎ দেড় মাসের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা-রিপোর্ট জমা দেবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সেই রিপোর্ট কমিটি গঠনের দেড় বছর পরেও পুরসভায় জমা পড়েনি!
পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য যুক্তি, করোনা অতিমারি এবং লকডাউনে সমস্ত কাজই ব্যাহত হয়েছে। তাই বিষয়টা এগোয়নি। যদিও এই যুক্তিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, করোনা অতিমারিতে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হলেও ভার্চুয়াল বৈঠক বা অনলাইনে কাজের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে সর্বত্র। এমনকি, পুর কর্তৃপক্ষও যেখানে ই-অফিসের উপরে গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেখানে এই যুক্তি খাটে না।
এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘পুরসভার অগ্রাধিকারের তালিকায় খাতায়কলমে বায়ুদূষণের গুরুত্ব থাকলেও বাস্তবে ততটা নেই।’’ অথচ শনিবারই ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উপলক্ষে পুরসভার তরফে চারা-রোপণের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার কথা বলা হয়েছে। এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘আসলে এগুলো নিয়ম পালন। এতে দূষণ রোধে পুরসভার সক্রিয়তা প্রমাণ হয় না।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি করোনা অতিমারির আগে বৈঠকে বসেছিল একাধিক বার। সেই সময়ে কমিটির তরফে শহরের বায়ুদূষণ সংক্রান্ত পর্যালোচনা পুরসভার কাছে তুলে ধরা হলেও চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। গত মার্চ-এপ্রিলে কমিটির সদস্যেরা ফের বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ। এমনিতে করোনা অতিমারির জেরে লকডাউনের কারণে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় বিশ্ব জুড়েই বায়ুদূষণের মাত্রা তুলনায় কম। রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ৭ শতাংশ কম হয়েছে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশবিদ মোহিত রায়ের বক্তব্য, ‘‘দূষণ কমানোর পথ লকডাউন নয়। কারণ, লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। বরং দূষণ-রোধে সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, ‘‘যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত হলে দূষণ কতটা কমে, তা লকডাউন দেখিয়েছে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়েই ডিকার্বোনাইজেশনের পথে হাঁটতে হবে।’’ পরিবেশবিজ্ঞানী তপন সাহা বলছেন, ‘‘পরিবেশ রক্ষায় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি ঠিক মতো বাস্তবায়িত হলে দূষণের মাত্রা এ জায়গায় পৌঁছত না। ফলে সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন জরুরি। না হলে শুধুই বৈঠক বা কমিটি করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ বা পরিবেশ রক্ষা সম্ভব নয়!’’
পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, গত মার্চেই বায়ুদূষণ রোধে অ্যাকশন প্ল্যানের বাস্তবায়নে ন’সদস্যের আরও একটি পুর কমিটি তৈরি হয়। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘দূষণ রোধে কোন খাতে কত বরাদ্দ হতে পারে, ওই কমিটি সেই বিষয় দেখভাল করছে। তবে দূষণ রোধের চূড়ান্ত রিপোর্ট বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছ থেকেই নেওয়া হবে।’’
কিন্তু সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’ কবে আসবে, তা জানেন না কেউই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy