দমকলের যুদ্ধ। বুধবার রাতে, গঙ্গানগরে। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য
এ যেন আক্ষরিক অর্থেই আগুন লাগার পরে ঘুম ভাঙা!
লোকমুখে যা শিল্পাঞ্চল বলে পরিচিত, আদতে তা গ্রামের পাড়া। জমি কিনে বাড়ি তৈরির মতো যেখানে গড়ে তোলা হয়েছে কারখানা নয়তো গুদাম। মধ্যমগ্রাম থানার গঙ্গানগরের ঝাউতলা এমনই একটি এলাকা। বুধবার সন্ধ্যায় সেখানেই আগুন লেগেছিল একটি কারখানার গুদামে। যা নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৫ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায় দমকলের। আর এ দিনের ঘটনার পরেই জানা যায়, কাপড় রাখার নাম করে লাইসেন্স নেওয়া ওই গুদাম আদতে ঠাসা ছিল রাসায়নিকে। দমকল কর্তৃপক্ষও দাবি করেন, গুদামে এত বেশি পরিমাণে রাসায়নিক ও প্লাস্টিকের মতো দাহ্য বস্তু মজুত ছিল যে, এক জায়গায় নেভাতে না নেভাতেই অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ছিল আগুন।
বুধবারের ওই ঘটনার পরে বৃহস্পতিবার রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে ব্লক থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত। এলাকায় কত কারখানা রয়েছে, সেখানে কী তৈরি হয়, কোন গুদামে কী রয়েছে — এ হেন নানা তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে স্থানীয় চণ্ডীগড়-রোহন্ডা পঞ্চায়েত। বারাসত (২) নম্বর ব্লকের বিডিও অসীম ঘোড়ুই জানান, পঞ্চায়েত প্রধানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এলাকায় কত কারখানা রয়েছে তার তালিকা তৈরি করতে। তা পেয়েই কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলা হবে। আজ, শুক্রবার থেকেই ওই কাজ শুরু হবে বলে জানান পঞ্চায়েত প্রধান মালতী ঘোষ।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের এই উদ্যোগকে ঘিরেই। মাসখানেক আগে মধ্যমগ্রামের অদূরে জেসপ কারখানায় আগুন লাগে। স্থানীয়েরা জানান, অতীতে বারাসত, মধ্যমগ্রামে একাধিক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। কলকাতাতেও বিভিন্ন সময়ে কারখানা বা গুদামে আগুন লেগেছে। তা সত্ত্বেও এত দিনে কেন টনক নড়ল পঞ্চায়তে বা প্রশাসনের? এর অবশ্য সদুত্তর মেলেনি কোনও মহলেই।
চণ্ডীগড়-রোহন্ডা পঞ্চায়েতের প্রধান মালতীদেবীর কথায়, ‘‘বিশ-তিরিশ বছর ধরে ওই সব কারখানা রয়েছে। এত দিন কিছুই হয়নি। এ বার থেকে আমরা সতর্ক হব।’’ কিন্তু প্রতি বছরই তো লাইসেন্সের পুনর্নবীকরণ হয়। তা সত্ত্বেও কেন কারখানা বা গুদামগুলির বিষয়ে কোনও খোঁজ নেওয়া হয় না, এরও সদুত্তর মেলেনি কোনও মহলেই।
স্থানীয় মধ্যমগ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান তথা মধ্যমগ্রামের বিধায়ক রথীন ঘোষ জানান, পঞ্চায়েত ব্যবসার লাইসেন্স দেয় ঠিকই, কিন্তু সেখানে কী ধরনের ব্যবসা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার মতো পরিকাঠামো তাদের নেই।
এ দিকে পঞ্চায়েতের তরফে জানানো হয়েছে, আগুনে ভষ্মীভূত ওই গুদামটিতে জামাকাপড় রাখা হবে বলে পঞ্চায়েত থেকে লাইসেন্স নেওয়া হয়েছিল। প্রদীপ শর্মা নামে জনৈক ব্যক্তির নামে জমিটি রয়েছে। আর অলোক শর্মা নামে এক জন সেখানে জামাকাপড় মজুত করবেন বলেই লাইসেন্স নিয়েছিলেন। ঘটনাস্থলে অবশ্য দু’জনের এক জনকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেই দাবি পুলিশ ও দমকলের। দমকলের দাবি, ওই গুদামটি আদতে ঠাসা ছিল থিনার-সহ বিভিন্ন রাসায়নিকে। দেখা যায়, গুদামে সার ও রাসায়নিকের একটি সংস্থার বোর্ড ঝুলছে। যাদের ঠিকানা দিল্লির বারখাম্বা রোড।
বৃহস্পতিবার ঝাউতলার বাসিন্দারা জানান, ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের বসবাস এখানে। রবার, প্লাস্টিক-সহ বিভিন্ন জিনিসের কারখানা, নয়তো গুদাম রয়েছে। কোথাও কারখানার একেবারে গা ঘেঁষেই রয়েছে বসত বাড়ি।
এমনই একটি প্লাস্টিক কারখানার পাশের একটি বাড়ির বাসিন্দারা জানান, দিনের বিভিন্ন সময়ে রাসায়নিকের ব্যবহারে চোখ-নাক-মুখ জ্বালা করে তাঁদের। পঞ্চায়েত, বিডিও দফতর-সহ সব জায়গায় এ নিয়ে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।
বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, এলাকার কারখানাগুলি যেন বিচ্ছিন্ন কোনও এলাকা। বিশাল গেটগুলি সব সময়ে বন্ধ থাকে। মাঝে মাঝে বড় বড় ট্রাক মালপত্র নিয়ে ভিতরে ঢোকে। আদৌ কী চলছে, জানার উপায় নেই। বুধবারের অগ্নিকাণ্ডের পরে তাঁদের দাবি, কোন কারখানায় আদতে কী চলছে, সে বিষয়ে প্রশাসনেরই আরও সক্রিয় হওয়া উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy