নাজিরগঞ্জের ভাসমান জেটির ক্ষয়ে এমনই অবস্থা।
দুর্ঘটনার পরেও টনক নড়েনি কারও। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গঙ্গার দু’পাড়েই বেহাল অবস্থায় অধিকাংশ লঞ্চঘাট ও জেটি। যে কোনও দিন ঘটে যেতে পারে হুগলির তেলেনিপাড়ার থেকেও বড় কোনও অঘটন।
নিয়ম অনুযায়ী জেটি বা পন্টুন বাঁধা থাকে মোটা লোহার শিকল দিয়ে। সেই শিকল টানটান করে নোঙরের সঙ্গে গাঁথা থাকে নদীর তলদেশের মাটিতে। কোটালের বানে সেই নোঙরই সরে গিয়েছে অনেকটা। ফলে শিকলের বাঁধন এতটাই শিথিল হয়ে গিয়েছে যে, পন্টুন হেলে গিয়েছে এক দিকে। তা সামাল দিতে সাময়িক ভাবে লোহার শিকলের সঙ্গে মোটা দড়ি বেঁধে নোঙরের টান বজায় রাখার ব্যর্থ চেষ্টা হয়েছে ঠিকই, তবে তাতে বিপদ আরও বেড়েছে। মোটা দড়ি জেটির প্রান্তে ঘষে ঘষে পাতলা হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু ছিঁড়ে যাওয়ার অপেক্ষা। আর ছিঁড়ে গেলেই জেটির উপরে থাকা গ্যাংওয়ে (যার উপর দিয়ে হেঁটে যাত্রীরা জেটিতে পৌঁছন) পিছলে গিয়ে নদীতে পড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন খোদ লঞ্চকর্মীরাই।
ঠিক এমনই অবস্থা হুগলি নদীর অন্যতম ব্যস্ত লঞ্চঘাট নাজিরগঞ্জের। ‘হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি’র ব্যবহৃত এই ঘাট দিয়ে প্রতি দিন কয়েক হাজার মানুষ যাওয়া-আসা করেন। তবু বছরের পর বছর সেটির কোনও রকম সংস্কার হয় না। উপায় না থাকায় কার্যত প্রাণ হাতে নিয়েই যাতায়াত করতে হয়।
দীর্ঘ দিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কলকাতা ও হাওড়ার অধিকাংশ জেটির অবস্থাই যে শোচনীয়, তা মেনে নিচ্ছে জেটিগুলির রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত রাজ্য ভূতল পরিবহণ নিগমের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, এর আগে জেটিগুলির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়নি। ফলেই অধিকাংশ জেটির এমন ভগ্নদশা। কোথাও জেটির উপরের লোহার চাদরে মরচে ধরে পাঁপড়ভাজার মতো হয়ে গিয়েছে। কোথাও নোঙর ঠিক নেই। কোথাও জেটি বছরখানেক আগে কোটালের বানে ভেঙে পড়ার পরে তা চালু হয়নি।
শিবপুরের এই জেটির অবস্থাও নড়বড়ে
রাজ্য ভূতল পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য বলেন, ‘‘জেটিগুলির রক্ষণাবেক্ষণ যে ঠিকমতো হয়নি, তা ঠিক। ধীরে ধীরে সব ক’টি জেটিই সারিয়ে ফেলব।’’
হুগলি নদীতে যাত্রী পরিবহণের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হল ‘হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি’। এই সমিতির নিয়ন্ত্রণে ২০টি ঘাটে লঞ্চ চলাচল করে। রোজ গড়ে ৭০ হাজার মানুষ পারাপার করেন। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে এতগুলি ঘাট থেকে লঞ্চ চললেও হাওড়া ছাড়া কংক্রিটের জেটি কোথাও নেই। সবই ভাসমান পন্টুনের উপরে তৈরি জেটি। এবং দীর্ঘ দীন ধরে সংস্কারের অভাবে প্রত্যেকটিরই হালই বেশ খারাপ। একটু জোরালো জোয়ার বা কোটালের বান এলেই টলোমলো অবস্থা। নোঙর ছিঁড়ে পন্টুন ভেসে যাচ্ছে। ভেঙে পড়ছে গ্যাংওয়ে। যেমনটি হয়েছে শিবপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জেটির। গত বছর কোটালের বানে এই ঘটনা ঘটলেও আজ পর্যন্ত তার মেরামতি না হওয়ায় যাত্রীদের রামকৃষ্ণপুর ঘাট থেকে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
জল পরিবহণের সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত ‘হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি’র এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘কয়েক বছর ধরে রাজ্য পরিবহণ দফতর ঘাটগুলির সংস্কারের কাজে হাত দিলেও অতিরিক্ত জেটির অভাবে সব মেরামতির কাজই হচ্ছে দায়সারা ভাবে। ফলে প্রতি বছর বানের ধাক্কা নেওয়ার মতো ক্ষমতা জেটিগুলির থাকছে না। এগুলির দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রয়োজন।’’ ওই সমবায় সমিতির সম্পাদক তথা ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনুপ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে অধিকাংশ জেটির সংস্কারের কাজ হচ্ছে। দু’-একটি খারাপ জেটি সারিয়ে ফেলা হবে।’’
(ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy