ফাইল চিত্র।
রাজধানীর বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি ১০ দফা ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। যার মূল উদ্দেশ্য, প্রতি বছর শীতে বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছনো দিল্লির বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা। কলকাতায় বায়ুদূষণের মাত্রাও শীতে নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে। ফলে এই শহরের ক্ষেত্রেও দিল্লির মতোই ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে পরিবেশবিদ মহল।
রাজ্য সরকারের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, বায়ুদূষণের বিষয়টি নিয়ে তারা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তা ছাড়া জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে আগেই বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের সাতটি ‘নন অ্যাটেনমেন্ট সিটিজ’ (ধারাবাহিক ভাবে বায়ূসূচকের স্বাভাবিক মাত্রা লঙ্ঘিত হয়েছে)— কলকাতা, আসানসোল, ব্যারাকপুর, দুর্গাপুর, হলদিয়া, হাওড়া ও রানিগঞ্জের জন্য ‘কম্প্রিহেনসিভ এয়ার কোয়ালিটি অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি হয়েছে। রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী রত্না দে নাগ বলছেন, ‘‘বায়ুদূষণের বিষয়টি সামগ্রিক দূষণ রোধের পরিকল্পনার মধ্যেই পড়ে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।’’
দিল্লি প্রশাসন সূত্রের খবর, ঘোষিত ১০ দফা ‘অ্যাকশন প্ল্যান’-এর মধ্যে বিশেষ দল তৈরি করে নির্মাণস্থল পরিদর্শন, সেখানে পরিবেশ-বিধি না মানলে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা, আবর্জনা পোড়ানো বন্ধ, দূষণের হটস্পটগুলির উপরে নজরদারি, যানদূষণ নিয়ন্ত্রণে পুরনো পেট্রল-ডিজেল গাড়ি বাতিল করা, যানজট-প্রবণ রাস্তায় গাড়ির দূষণ নিয়ন্ত্রণ শংসাপত্র (পিইউসি) রয়েছে কি না পরীক্ষা করা-সহ একাধিক পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশে ফসলের গোড়া পোড়ানোর ফলে দিল্লির বাতাসের মানের যে অবনমন ঘটে, তারও উল্লেখ করা হয়েছে। ‘দিল্লি পলিউশন কন্ট্রোল কমিটি’-র বরিষ্ঠ বিজ্ঞানী তথা রাজধানীর দূষণ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কান্ডারি মোহন পি জর্জের কথায়, ‘‘সংশ্লিষ্ট অ্যাকশন প্ল্যানে একেবারে স্থানীয় স্তরে গিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়া হয়েছে।’’
যার পরিপ্রেক্ষিতে এ রাজ্যের পরিবেশবিদদের একাংশের বক্তব্য, কলকাতাতেও দূষণের উৎসগুলি মোটামুটি এক। বিশেষত নির্মাণস্থল, ধুলো, যানবাহনের দূষণ— এগুলোই কলকাতা-সহ রাজ্যের দূষণের প্রধান উৎস। এ ক্ষেত্রে তাঁরা দেশের ৫০টি শহরের বায়ুদূষণ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সমীক্ষার প্রসঙ্গ উল্লেখ করছেন। যেখানে সালফার-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড এবং বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম ১০) পরিমাণ মাপা হয়েছে।
তাতে দেখা গিয়েছে, ‘ন্যাশনাল অ্যাম্বিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড’ (এনএএকিউএস) অনুযায়ী, সালফার-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড ও বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার নিরিখে যথাক্রমে ৫০টি, ৪২টি এবং ৭টি শহর নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে রয়েছে। আর ওই তিনটি দূষকের উপস্থিতির নিরিখে নির্ধারিত মাত্রা ছাপিয়ে গিয়েছে যথাক্রমে ০, ৮ ও ৪৪টি শহর। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকেরা আবার জানাচ্ছেন, এই তিনটি দূষকের নির্ধারিত মাত্রার বার্ষিক গড় হল (বসতিপূর্ণ/শিল্প/গ্রাম/অন্যান্য এলাকা) যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটারে ৫০, ৪০ ও ৬০ মাইক্রোগ্রাম। বাস্তুতন্ত্রের দিক থেকে স্পর্শকাতর এলাকায় ওই নির্ধারিত মাত্রা যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটারে ২০, ৩০ ও ৬০ মাইক্রোগ্রাম।
সে দিক থেকে ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান বলছে, কলকাতার বাতাসে সালফার-ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি সহনমাত্রার মধ্যে থাকলেও নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড ও পিএম১০, এই দু’টি দূষকের উপস্থিতিই নির্ধারিত মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিশেষত পিএম১০-এর উপস্থিতি সহনমাত্রার অনেক বেশি। কলকাতার ক্ষেত্রে তার পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ১০৪ মাইক্রোগ্রাম। আসানসোল, ব্যারাকপুর, দুর্গাপুর, হলদিয়া, হাওড়া ও রানিগঞ্জে পিএম১০-এর বার্ষিক গড় যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটারে ১৮৪, ১১৫, ১৭৩, ৮৬, ১৭৪, ১৮৬ মাইক্রোগ্রাম।
ফলে পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের একাধিক শহরেও দূষকের উপস্থিতি কোথাও সহনমাত্রার তিন গুণ, কোথাও দু’গুণ। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘করোনার কারণে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকায় দূষণের লেখচিত্র নিম্নগামী হয়েছিল। কিন্তু তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র। তার সঙ্গে সার্বিক দূষণ পরিস্থিতির যোগই নেই।’’ মোহন পি জর্জও বলছেন, ‘‘শুধু দিল্লি বা কলকাতাই নয়, লাহোর থেকে কলকাতা পর্যন্ত বায়ুদূষণের চরিত্র মোটামুটি এক। সে কারণে কলকাতার ক্ষেত্রেও স্থানীয় স্তরে দূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন।’’
ফলে শীতের জন্য অপেক্ষা নয়, দূষণ-রোধে এখন থেকেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy