Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

এসি ক্যাবে আস্তানা গাড়ছে জীবাণুরা

কী ভাবে বদ্ধ ক্যাব সংক্রমণের আঁতুড়ঘর হিসেবে কাজ করে?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৯ ০১:২৫
Share: Save:

শহরের বেশির ভাগ এসি ক্যাবই জীবাণুর আঁতুড়ঘর! এক যাত্রীর থেকে অন্য যাত্রীর শরীরে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বদ্ধ ক্যাবগুলি অনুঘটকের কাজ করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্যাবের জানলা বন্ধ থাকে, ফলে কোনও সংক্রামক রোগ নিয়ে যাত্রী এক বার উঠলে তাঁর শরীর থেকে সেই জীবাণু ক্যাবের বদ্ধ বাতাসে থেকে যায়। তাই পরবর্তী যাত্রী উঠলে তাঁর ক্ষেত্রে সংক্রমণের আশঙ্কা বহু গুণ বেড়ে যায়। শহরের এসি ক্যাবগুলির উপরে পরীক্ষা চালিয়ে এমনই তথ্য পেয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড বায়োকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগ।

কী ভাবে বদ্ধ ক্যাব সংক্রমণের আঁতুড়ঘর হিসেবে কাজ করে?

গবেষকেরা জানাচ্ছেন, অনেক সময়ই যাত্রীরা রোগ নিয়ে ক্যাবে ওঠেন। সে জ্বর, সর্দি বা অন্য সংক্রামক রোগও হতে পারে। এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক যাত্রী নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অন্য যাত্রী তুলে নেন সংশ্লিষ্ট ক্যাবচালক। অথচ ওই রোগীর শরীরের জীবাণু তখনও ক্যাবের বাতাসে ঘোরাফেরা করছে। বেরোনোর সুযোগ না পেয়ে তারা বাসা বাঁধে পরবর্তী যাত্রীর শরীরে। জীবাণুর হামলায় পরবর্তী কালে কাবু হয়ে যায় শরীর। রোগ ছড়ানোর এই বৃত্ত এ ভাবেই চলতে থাকে।

‘মাইক্রোবিয়াল কন্টামিনেশন ইন এনক্লোজ়ড প্লেস’ নামে ওই গবেষণায় এমনও ধরা পড়েছে, ক্যাব-সংক্রমণের সব থেকে ‘বিপজ্জনক’ প্রভাব পড়ে শিশুদের উপরে। গবেষকদের পর্যবেক্ষণ, জীবাণু ভর্তি চলন্ত ক্যাবে অনেক সময়ে কিছু না কিছু খেতে থাকে শিশুরা। সে ক্ষেত্রে সরাসরি জীবাণু প্রবেশ করে তাদের শরীরে। কারণ, ক্যাবের ভিতরে জীবাণু থাকে সহনশীল মাত্রার থেকে কয়েক গুণ বেশি।

বদ্ধ জায়গায় জীবাণু সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে যদিও নির্দিষ্ট মাপকাঠির উল্লেখ নেই। তবে বহু ইউরোপীয় দেশের মাপকাঠি অনুযায়ী, প্রতি ঘন মিটারে জীবাণুর উপস্থিতি গড়ে ১০০০ সিএফইউ (কলোনি ফরমিং ইউনিট) হলে তা ‘অতি ক্ষতিকারক’। সেখানে গবেষকেরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, বদ্ধ এসি ক্যাবে জীবাণু উপস্থিতির মাত্রা ওই ‘অতি ক্ষতিকারক’ মাত্রার থেকে প্রায় আড়াই-তিন গুণ বেশি! পরীক্ষায় ধরা পড়েছে, শহরের এসি ক্যাবগুলিতে বদ্ধ অবস্থায় জীবাণুগুলি কী ভাবে নিজেদের ‘কলোনি’ গঠন করেছে। প্রসারিত করছে নিজেদের সাম্রাজ্য। তার পরে যখন মানুষের শরীরে আশ্রয় নেয়, তখন সেখানে জাঁকিয়ে বসেছে।

যাঁর তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সেই শিক্ষক প্রশান্তকুমার বিশ্বাস বলছেন, ‘‘কেউ হয়তো কোনও সংক্রমণ নিয়ে উঠলেন, তিনি নেমে যাওয়ার পরে জীবাণুগুলি বদ্ধ জায়গায় থেকে যায়। পরবর্তী যাত্রী উঠলে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে সেই

জীবাণু তাঁর শরীরে প্রবেশ করে। এ ভাবেই রোগ ছড়ায়। শুধু যাত্রীরাই নন, চালকদেরও শারীরিক সমস্যা হতে পারে।’’ এমনিতেই বর্ষায় বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় জীবাণুদের সক্রিয়তা বাড়ে। ফলে জীবাণু হানার বিপদও বাড়ে। সেই বিপদ সঙ্গী করেই ক্যাব চড়ছেন যাত্রীরা!

অন্য বিষয়গুলি:

Health AC Cab Bacteria
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy