Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জটিল অস্ত্রোপচারে স্বাভাবিক হল ঋতুচক্র

হুগলির প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা শিখা জানান, আট বছর আগে প্রবল পেটের যন্ত্রণা শুরু হয় তাঁর বোন, বছর একুশের বিভা লেজের। তাঁর ঋতুস্রাব হত না। উল্টে মাসের পাঁচ-দশ দিন প্রবল পেটের যন্ত্রণায় বোনকে ধরে রাখা যেত না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০২:১৩
Share: Save:

প্রতি মাসে পাঁচ-দশ দিন ধরে প্রবল যন্ত্রণা! বিছানায় পড়ে দিনরাত ছটফট করেন বোন। তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও সুরাহা করতে পারেননি দিদি শিখা মালি। একটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পরেও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি ঘটেনি। শেষে কলকাতায় স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরেই যন্ত্রণা-মুক্তির পথে ওই রোগী। জটিল অস্ত্রোপচারের পরে মঙ্গলবার তিনি বাড়ি ফিরেছেন।

হুগলির প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা শিখা জানান, আট বছর আগে প্রবল পেটের যন্ত্রণা শুরু হয় তাঁর বোন, বছর একুশের বিভা লেজের। তাঁর ঋতুস্রাব হত না। উল্টে মাসের পাঁচ-দশ দিন প্রবল পেটের যন্ত্রণায় বোনকে ধরে রাখা যেত না। ২০১৪ সালে বর্ধমানের এক বেসরকারি হাসপাতালে প্রথম অস্ত্রোপচার করানো হয় বিভার। ছ’মাস ভাল থাকলেও ফের পেটের অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয় তাঁর। এর পরে বিভিন্ন চিকিৎসককে দেখিয়ে শেষে ২০১৭ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নতুন করে অস্ত্রোপচার করানো হয় বিভার। এ বারও কয়েক দিনের মধ্যেই ফের ব্যথা শুরু হয়ে যায়।

অভিনিবেশবাবু বলেন, ‘‘বিভার যে সমস্যা ছিল, তা ৮০ হাজারে এক জন মহিলার হয়। আমরা অস্ত্রোপচারে সাফল্য পেয়েছি। চিকিৎসাশাস্ত্রের জন্য এ এক বড় ব্যাপার।’’ অভিনিবেশবাবু জানান, সাধারণ ক্ষেত্রে জরায়ুর সঙ্গে যোনিদ্বারের একটা সংযোগ থাকে। ঋতুচক্র শুরু হওয়ার পরে রক্ত জরায়ু থেকে জরায়ুমুখ বা সার্ভিক্সের দ্বারা যোনিদ্বার দিয়ে বার হয়। কিন্তু বিভার জরায়ু বা যোনিদ্বার থাকলেও জরায়ুমুখ ছিল না। ফলে স্বাভাবিক ভাবে রক্ত বেরোতে পারছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘এ এক মারাত্মক ব্যাপার! রক্ত বেরোতে না পেরে জরায়ুতে জমে যাচ্ছিল। জরায়ু, ডিম্বনালী বা ফ্যালোপিয়ন টিউব ফুলে গিয়ে ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি হয়েছিল। ফলে এমন যন্ত্রণা হচ্ছিল যে, রোগী সহ্য করতে পারছিলেন না।’’

স্ত্রীরোগ চিকিৎসক বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী আবার বললেন, ‘‘এ রকম হলে রক্ত পিছনের দিকে যেতে থাকে। পেটের মধ্যে পৌঁছে জমতে জমতে সংক্রমণ হয়ে যেতে পারে। সেই সংক্রমণ থেকে রোগী মারাও যেতে পারেন।’’

এর পরে নতুন করে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন অভিনিবেশবাবু। তবে তা ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে করবেন বলে ঠিক করেন। সঙ্গী ছিলেন তাঁর স্ত্রী, স্ত্রীরোগ চিকিৎসক পলি চট্টোপাধ্যায় এবং অ্যানাস্থেটিস্ট কল্যাণকুমার পাল। অভিনিবেশবাবুর কথায়, ‘‘আগে হওয়া অস্ত্রোপচারে যে অংশগুলি জুড়তে হয়েছিল, এ বার তা ছাড়িয়ে জরায়ু পর্যন্ত পৌঁছতে হয়। জরায়ু কেটে একটি নতুন রাস্তা তৈরি করতে হয়। এর পরে যোনি কেটে বার করা রাস্তার সঙ্গে জরায়ুর রাস্তার মধ্যে একটা সিলিকন ক্যাথিটার লাগানো হয়েছে। সেটাকে গাইড হিসেবে ব্যবহার করে জরায়ুর নীচের অংশ যোনিদ্বারের উপরের ভাগের সঙ্গে সেলাই করা হয়েছে। রক্ত এ বার ওই ক্যাথিটারের মাধ্যমেই বার হচ্ছে।’’ তিনি জানান, ছ’সপ্তাহ ওই ক্যাথিটার থাকবে। তার পরে তা বার করে দেওয়া হবে। স্বাভাবিক ভাবেই ঋতুচক্র চলতে পারবে এবং বিভা মা-ও হতে পারবেন বলে দাবি অভিনিবেশবাবুর।

বৈদ্যনাথবাবু বললেন, ‘‘কাজটা ভাল। এখন ক্যাথিটার সরিয়ে নেওয়ার পরে রাস্তাটা ফের বন্ধ হয়ে যায় কি না, সেটাই দেখার। সেটা না হলে চিকিৎসা শাস্ত্রের জন্য এ এক বড় সাফল্য।’’ অভিনিবেশবাবুর পরিকল্পনা, ছ’সপ্তাহ বাদে ক্যাথিটার বার করার পরে জরায়ুর ওই অংশে একটি ‘কপার টি’ পরিয়ে দেবেন তিনি। তাতে ঋতুচক্র স্বাভাবিক থাকবে।

বিভার বাবা সুশান্ত লেজ কৃষিকাজ করেন। বড় মেয়ে শিখার পাশাপাশি ছোট মেয়ে বিভারও তিনি বিয়ে দিয়েছিলেন। তবে শারীরিক যন্ত্রণার কারণে মেয়ে বাপের বাড়িতেই ফিরে আসেন। কলকাতার চিকিৎসকের হাত ধরে এখন নতুন করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। ফোনে গ্রামের বাড়ি থেকে বিভা বললেন, ‘‘আবার যন্ত্রণা হবে না তো! ভয় হয়। আর নিতে পারি না। ডাক্তারবাবু বলেছেন, আমি ভাল হয়ে গিয়েছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Health Woman Menstruation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy