—প্রতীকী চিত্র।
তিনি ছেলে না মেয়ে, এই নিয়ে সংশয় তৈরি হয় তাঁর জন্মের সময় থেকেই! পরিবারের লোকজন ধরেই নেন, সদ্যোজাতের শরীরে স্ত্রী এবং পুরুষ— দু’ধরনেরই যৌনাঙ্গ বর্তমান। তাঁর বয়স যত বেড়েছে, ততই বেড়েছে এই নিয়ে অসম্মান, গঞ্জনা! স্কুল, কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন বাইরের সমস্ত কিছু থেকে। তাঁকে গ্রাস করে এক চরম অবসাদ। কারণ, একাধিক চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়েও সুরাহা মিলছিল না!
বাংলাদেশের বাসিন্দা, ২২ বছরের সেই তরুণীই স্বাভাবিক জীবনের রাস্তা খুঁজে পেলেন কলকাতায় এসে। এক জটিল অস্ত্রোপচারে রাস্তা দেখালেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক দম্পতি অভিনিবেশ এবং পলি চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা জানাচ্ছেন, অনেকেই যেটিকে পুরুষ যৌনাঙ্গ ভেবে ভুল করছিলেন, সেটি আদতে তরুণীর জরায়ুর মুখ। যা যোনিদ্বার থেকে বেরিয়ে ছিল জন্মের সময় থেকেই। মূলত যে লিগামেন্ট জরায়ুকে নিজের জায়গায় ধরে রাখে, সেটি জন্মগত ভাবে দুর্বল থাকার জন্যই এমনটা হয়েছিল। জটিল অস্ত্রোপচারে এই জরায়ুর মুখটিকেই নিজের জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অভিনিবেশ বলেন, ‘‘ছোট থেকে এই নিয়ে বাঁচার মধ্যেই তরুণীর একটি প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। বিয়েও হয়। জীবনসঙ্গীর এই সমস্যার পাকাপাকি সমাধানে ডাক্তার দেখাতে শুরু করেন পড়াশোনা জানা সেই তরুণ। জরায়ুর মুখ এই ভাবে এত বছর ধরে যোনিদ্বার দিয়ে বেরিয়ে থাকায় স্বাভাবিক মেলামেশাতেও সমস্যা হচ্ছিল। সবচেয়ে বড় কথা, জরায়ুর মুখ দিয়ে শুক্রাণু প্রবেশ করতে না পারায় সন্তানধারণ এক রকম অসম্ভব হয়ে পড়ে। সুরাহার খোঁজে এর পরে ওঁরা বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসেন। বাগবাজারের এক হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়।’’
চিকিৎসক জানান, এ ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে এক ধরনের মেশ (মশারির মতো জাল) ব্যবহার করা হয়। জরায়ুর দু’টি দিক থাকে। একটিকে বলে অ্যান্টেরিয়র লিপ অর্থাৎ সামনের দিকের অংশ। অন্যটি পোস্টেরিয়র লিপ বা ভিতরের দিকের অংশ। পোস্টেরিয়র লিপকে দু’টি পৃথক জায়গায় সেলাই করা হয় ওই মেশ দিয়ে। অ্যান্টেরিয়র লিপের অংশটিও সেলাই করতে হয় আর এক জায়গায়। পলি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুবই সাবধানে করতে হয় সবটা। জায়গাটি মূত্রত্যাগের রাস্তা। তার উপরে যে জায়গায় সেলাই করা হচ্ছে, সেখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু রক্তনালি থাকে। সামান্য এ দিক ও দিক হয়ে আঘাত লাগলে পরবর্তী কালে রোগীর পা কেটে বাদ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি হতে পারে। অতীতে বেশ কয়েকটি এমন অস্ত্রোপচার আমরা করেছি। কিন্তু সেক্ষেত্রে পোস্টেরিয়র লিপকে সেলাই করে দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কিছু ঘটনায় দেখা যায়, দু’বার সন্তান ধারণের পরে আবার জরায়ুর মুখ আগের মতো ঝুলে গিয়েছে। এই প্রথম বার দু’দিক থেকেই সেলাই করে দেওয়া হল। স্বাভাবিক ভাবেই এ বার ওই দম্পতি সন্তানধারণ করতে পারবেন।’’
এ বিষয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসক চৈতালি দত্তরায় বললেন, "বেশ কিছু ঘটনায় বয়স্ক মহিলাদের মধ্যেও এমনটা দেখা যায়। স্বাভাবিক নিয়মে যে জায়গায় জরায়ুমুখ থাকার কথা, সেখানে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আমরা করি। কিন্তু কম বয়সি মেয়ের ক্ষেত্রে এমন জিনিস দেখা গেলে প্রথমেই সতর্ক হতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে সেই বাচ্চা মেয়ের মা-কেও। তিনিও যেহেতু মহিলা, তাই এই অস্বাভাবিকতা প্রথম তাঁর বোঝার কথা। না লুকিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।’’
আর স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সেই তরুণী কী বলছেন? অভিনিবেশ বললেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের পরে জ্ঞান ফিরতেই তরুণীর প্রথম প্রশ্ন ছিল, আমার শরীরে ছেলেদের মতো ওই জিনিসটা বাদ দেওয়া গিয়েছে? তাঁকে নিজেই দেখে নিতে বলার পরে তরুণী অনুভব করা শুরু করেন। এর পরে আর কথা বলতে পারেননি। দু’চোখ দিয়ে শুধু গড়িয়ে পড়েছে জল।’’ সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ফোনে প্রথমে কিছুই বলতে পারছিলেন না ওই তরুণী। চাপা কান্না বোঝা যাচ্ছিল ফোনের অন্য প্রান্ত থেকেও। শেষে শুধু বললেন, ‘‘কলকাতার ডাক্তারেরা আমায় বাঁচিয়ে দিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy