Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

সন্তানেরা বাসে, নামতে গিয়ে পড়ে মৃত মা

পুলিশ জানায়, ভাগ্য যাদব (৩০) নামে ওই মহিলা চলন্ত বাস থেকে পড়ে মারা যান। মাথায় চোট লেগেছিল। এ জে সি বসু রোড এবং ক্যামাক স্ট্রিটের সংযোগস্থলে বি বা দী বাগ–একডালিয়া রুটের একটি মিনিবাস থেকে নামার সময়ে তিনি পড়ে যান।

তাঁর দুই ছেলে নীতিশ ও মনোজ। ছবি: সুমন বল্লভ।

তাঁর দুই ছেলে নীতিশ ও মনোজ। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৯ ০০:২৪
Share: Save:

দুই ছেলেকে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন মা। কিন্তু সময় পার হয়ে গেলেও বাড়ি ফিরছেন না দেখে স্বামী ফোন করেছিলেন স্ত্রীর মোবাইলে। কয়েক বার ফোন বেজে যাওয়ার পরে শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর ফোনটি ধরলেন এক পুলিশকর্মী। তিনি স্বামীকে হাসপাতালে পৌঁছতে বললেন। সেই ফোন পেয়ে স্বামী হাসপাতালে পৌঁছে দেখেন জরুরি বিভাগের ট্রলির উপরে পড়ে রয়েছে স্ত্রীর দেহ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে শেক্সপিয়র সরণি থানা এলাকায়।

পুলিশ জানায়, ভাগ্য যাদব (৩০) নামে ওই মহিলা চলন্ত বাস থেকে পড়ে মারা যান। মাথায় চোট লেগেছিল। এ জে সি বসু রোড এবং ক্যামাক স্ট্রিটের সংযোগস্থলে বি বা দী বাগ–একডালিয়া রুটের একটি মিনিবাস থেকে নামার সময়ে তিনি পড়ে যান। তবে তাঁর দুই সন্তান সুস্থ আছে বলেই পুলিশ জানায়। দুর্ঘটনার সময় ভাগ্যদেবী নিজে আগে বাস থেকে নেমে পরে সন্তানদের নামাতে চেয়েছিলেন। ফলে বাচ্চা দু’টি বাসের সিঁড়িতে দাঁড়িয়েছিল। তবে ভাগ্যদেবী পড়ে যাওয়ার পরপরই যাত্রীদের চেঁচামেচিতে চালক বাস দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন।

ভাগ্যদেবীর স্বামী সিকন্দর জানান, তাঁর স্ত্রী দু’ মাস আগেই দুই সন্তানকে নিয়ে বিহারের বাঁকা জেলা থেকে কলকাতায় এসেছিলেন। সিকন্দর লর্ড সিনহা রোডের বহুতল আবাসনের এক বাসিন্দার বাড়িতে পরিচারক হিসাবে কাজ করেন। সেখানেই তাঁরা সার্ভেন্টস কোয়ার্টার্সে থাকেন। এ দিন বালিগঞ্জে গৃহশিক্ষকের বাড়ি থেকে বাচ্চাদের নিয়ে ফিরছিলেন ভাগ্যদেবী। কার্যত তাঁদের বাড়ি থেকে মিনিট পাঁচেকের দূরত্বের মধ্যে ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পুলিশ সূত্রে খবর, ভাগ্যদেবী বাস থেকে কার্যত আছাড় খেয়ে পড়েছিলেন। তিনি ওই ভাবে পড়ে যেতেই বাসের অন্য যাত্রীরা হইহই করে ওঠেন। তাতে বাস চালক বাস থামিয়ে দেন। যাত্রীরাই বাস থেকে নেমে ক্যামাক স্ট্রিটের মোড়ে থাকা ট্র্যাফিক পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে ভাগ্যদেবীকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যায়। যদিও তত ক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানান।

পুলিশ জানায়, ভাগ্যদেবীকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করার পরে তাঁর দুই ছেলে নীতীশ এবং মনোজের কাছে তাদের বাড়ির ঠিকানা জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু দুই শিশু ঠিকানা বলতে পারেনি। ফলে তাদের সঙ্গে করেই পুলিশ ভাগ্যদেবীকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটে।

সিকন্দর জানান, স্ত্রী নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি না ফেরায় তিনি একাধিক বার তাঁর স্ত্রীকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু স্ত্রী ফোন ধরছিলেন না। সিকন্দর বলেন, ‘‘কয়েক বার ফোন করার পরে এক জন ব্যক্তি স্ত্রীর ফোনটি ধরেন। তিনি নিজেকে পুলিশ বলে পরিচয় দেন। তিনি আমায় তাড়াতাড়ি এসএসকেএম হাসপাতালে পৌঁছতে বলেন। দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি আমায় জানান।’’

সিকন্দর জানান, স্ত্রীকে শনাক্ত করার পরে নিজের পরিচয়পত্র দেখিয়ে বাচ্চা দু’টিকে পুলিশের জিম্মা থেকে নিজের কাছে নেন। এ দিন হাসপাতালে দাঁড়িয়ে হতাশ গলায় তিনি জানান, আপাতত বিহার থেকে তাঁর আত্মীয়দের কলকাতায় আসার জন্য তিনি অপেক্ষা করবেন। তিনি জানান, আট-ন’ বছর আগে তিনি কলকাতায় এসে লর্ড সিনহা রোডের ওই বাড়িতে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। সেই বাড়ির মালিকই তাঁর দুই ছেলেকে বালিগঞ্জের একটি স্কুলে ভর্তি করে দেন এবং একটি ট্রাস্টের গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার ব্যবস্থা করে দেন। তিনি জানান, প্রথমে স্ত্রী ও দুই ছেলে গ্রামের বাড়িতেই থাকত। মাস দুই আগে সিকন্দরের বছর দশেকের ভাইপোর হার্টের অস্ত্রোপচারের জন্য পরিবারের লোকজন কলকাতায় এসেছিলেন। তখন তাঁর স্ত্রী এবং দুই ছেলেও কলকাতায় এসেছিল। তার পর থেকে তাঁরা সপরিবার কলকাতায় রয়েছেন বলে সিকন্দর জানান।

তাঁর কথায়, ‘‘দুই ছেলে এখনও কিছুই বুঝতে পারছে না। ওরা শুধু দেখেছিল মায়ের মাথা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। জানি না ওদের কী বোঝাব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Shakespeare Sarani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE