Advertisement
২১ জানুয়ারি ২০২৫
Crime

তিন দিনের মেয়েকে খুনের অভিযোগে ধৃত মা

ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসকের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, ওই শিশুকন্যার গলায় নখের দাগ মিলেছে।

অভিযুক্ত সোনিয়া সেন। ছবি—সংগৃহীত।

অভিযুক্ত সোনিয়া সেন। ছবি—সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২০ ০৪:২৮
Share: Save:

স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সংসারে একটা টাকাও দেন না তিনি। উপরন্তু, এক মহিলার সঙ্গে নাকি তাঁর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। তার উপরে দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পরে খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিল স্ত্রী। অভিযোগ, এত রকম দুশ্চিন্তা, হতাশা আর অবসাদ থেকেই তিন দিনের শিশুকন্যাকে খুন করেছিল সে। সেই ঘটনার ছ’মাস পরে রবিবার বিকেলে আনন্দপুরের আদর্শনগর নোনাডাঙার বাসিন্দা সোনিয়া সেন ওরফে সোনিয়া বারুইকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তিন দিনের মেয়েকে অচৈতন্য অবস্থায় বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায় সোনিয়া। কিন্তু চিকিৎসকেরা দেখেন, ওই শিশুটি তত ক্ষণে মারা গিয়েছে। কী ভাবে সে মারা গেল, তা জানতে চাওয়া হলে সোনিয়া হাসপাতালে জানায়, মেয়েকে খাওয়ানোর পরে বছর দেড়েকের ছেলের পাশে শুইয়ে বাড়ির কাজ করছিল সে। ঘণ্টাখানেক পরে গিয়ে দেখে, মেয়ের কোনও সাড়াশব্দ নেই। হাসপাতালের তরফে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে স্থানীয় আনন্দপুর থানা একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠায়।

পরের দিন ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসকের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, ওই শিশুকন্যার গলায় নখের দাগ মিলেছে। এর পরে ওই চিকিৎসক সোনিয়া, তার দেড় বছরের ছেলে, মা ও শাশুড়ির হাতের নখ পরীক্ষা করেন। কিন্তু সেই পরীক্ষায় কিছুই মেলেনি বলে থানা থেকে সে সময়ে জানানো হয়।

তবে লকডাউনের জেরে ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট আটকে যায়। তা আসে প্রায় পাঁচ মাস পরে। আর সেই রিপোর্ট দেখার পরেই গত ২৪ জুলাই থানার এক আধিকারিকের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ঘটনায় একটি খুনের মামলা রুজু হয়। সেই সময়ে থানা থেকে জানানো হয়েছিল, সম্ভবত দেড় বছরের দাদা তার গলায় চেপে ধরতেই শিশুকন্যাটির মৃত্যু হয়েছে। কারণ, তার নখের আঁচড়ই মিলেছে তিন দিনের বোনের গলায়।

কিন্তু এর ১৬ দিনের মাথায় তদন্তের অভিমুখ ঘুরে যায় অন্য দিকে। তদন্তকারী এক আধিকারিক জানান, আরও এক জন বিশেষজ্ঞ ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসককে দিয়ে পুনরায় পরীক্ষা করানোর পরে জানা যায়, নখের আঁচড়টি দেড় বছরের দাদার নয়। শুধু তা-ই নয়, সোনিয়া প্রথমে পুলিশকে জানিয়েছিল, সে মেয়েকে দুধ খাওয়ানোর কিছু ক্ষণ পরে ফিরে এসে দেখে, ওই শিশুকন্যা নিস্তেজ হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু ময়না-তদন্তে মৃত শিশুটির পেটে পুরো খাবার মেলেনি। আর সেখান থেকেই সন্দেহের সূত্রপাত। এর পরে টানা জেরা করা শুরু হয় সোনিয়াকে। আর তখনই ভেঙে পড়ে সে। জানায়, তিন দিনের শিশুটিকে সে নিজেই গলা টিপে খুন করেছে।

পুলিশের কাছে সোনিয়া দাবি করেছে, তার স্বামীর সঙ্গে অন্য এক মহিলার সম্পর্ক রয়েছে। তা ছাড়া, স্বামী সংসারে কোনও টাকাপয়সা দেন না। সেই কারণে সোনিয়া দ্বিতীয় সন্তান চায়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ে সে। গর্ভপাত করাতে গেলও দেখা যায়, সময় পেরিয়ে গিয়েছে। মেয়ের জন্মের সময়েও স্বামীর কাছ থেকে কোনও রকম সাহায্য মেলেনি বলে তার অভিযোগ।

ফেব্রুয়ারি মাসে মেয়ের জন্মের পরে সন্তানদের খরচ কী ভাবে চলবে, সেই চিন্তা চেপে ধরে সোনিয়াকে। সেই কারণেই তিন দিনের মেয়েকে গলা টিপে মেরে ফেলতে সে বাধ্য হয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে সোনিয়া। রবিবার গ্রেফতারের পরে সোনিয়াকে সোমবার আদালতে তোলা হয়।

মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেবের কথায়, “সন্তান প্রসবের পরে অনেক মা-ই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু খুনের ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না। তবে এই ঘটনা শুনে মনে হচ্ছে, মা হয়তো ভেবেছিলেন, দু’টি সন্তানকে নিয়ে চালাতে পারবেন না। ছোটটিকে মেরে দিলে হয়তো বড় সন্তানটিকে নিয়ে ভাল থাকবেন। আর এই মানসিকতা থেকেই খুন করেছেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy