(বাঁ দিকে) বিবেক পাসোয়ান এবং রিনা পাসোয়ান। —ফাইল চিত্র।
রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু রক্তের গ্রুপে মিল নেই। এই অবস্থায় নিজের ২৪ বছরের ছেলেকে কিডনি দিয়ে বাঁচাতে চেয়েও পারছিলেন না মা। ছেলেকে নিয়ে ঘুরছিলেন শহরের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। দীর্ঘদিন ধরে চলছিল ডায়ালিসিস। চিকিৎসকেরা বুঝতে পারছিলেন, সময় কমে আসছে! দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন না করলে সুরাহা নেই। এ দিকে যুবকের দেহে প্রতিস্থাপনের যোগ্য কিডনি পাওয়া যাচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে গ্রহীতার হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা-সহ একাধিক বাধা সত্ত্বেও চিকিৎসকেরা মায়ের কিডনি সন্তানের দেহে প্রতিস্থাপন করলেন। প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ব্যবহার হল রক্ত ছেঁকে নেওয়ার বিশেষ পদ্ধতি।
সম্প্রতি বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতাল এই চিকিৎসা করেছে। বছর চব্বিশের রোগী বিবেক পাসোয়ান দুর্গাপুরের বাসিন্দা। তাঁর দাদা বিশাল পাসোয়ান জানান, বাণিজ্যে স্নাতক হয়ে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিবেক। কিন্তু দেখা দেয় কিডনির সমস্যা। পরিস্থিতি এমন হয় যে, ডায়ালিসিস করেও সুরাহা মিলছিল না। এমনকি, হৃদ্যন্ত্রের সমস্যাও শুরু হয়। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন কিডনি প্রতিস্থাপনের। কিন্তু বিবেকের শরীরের সঙ্গে খাপ খায়, এমন কিডনি পাওয়া যাচ্ছিল না। চিকিৎসকেরা জানান, চাইলে পরিবারের কেউ বিবেককে কিডনি দিতে পারেন। বিশালের কথায়, ‘‘মা নিজের কিডনি ভাইকে দিতে চান। কিন্তু সমস্যা হয় রক্তের গ্রুপ। ভাইয়ের বি-পজ়িটিভ, আর মায়ের এবি পজ়িটিভ।’’
হাসপাতাল সূত্রের খবর, চিকিৎসকের তরফে পরিবারকে বলা হয়, আলাদা রক্তের গ্রুপ হলেও প্রতিস্থাপন সম্ভব। বিপদ হতে পারে বুঝেও পরিবারটি রাজি হয়। ওই হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান, চিকিৎসক উপল সেনগুপ্ত জানান, সাধারণত এই ধরনের প্রতিস্থাপনের আগে রক্তের প্লাজ়মাফেরেসিস করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্লাজ়মা বার করে অন্যের প্লাজ়মা দেওয়া হয়। কিন্তু এতে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় সব অ্যান্টিবডিই শরীর থেকে বেরোতে পারে। পরে প্লাজ়মা দেওয়ায় অযাচিত অ্যান্টিবডি শরীরে ঢুকেও যায়। প্রতিস্থাপনে যা অন্যতম প্রতিবন্ধক হতে পারে।
উপল বলেন, ‘‘তাই এর বদলে গ্লাইকোসর্ব পদ্ধতি ব্যবহার হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এক ধরনের ছাঁকনির মধ্যে দিয়ে প্লাজ়মা নিয়ে যাওয়ায় দ্রুত অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি ছেঁকে নেওয়া যায়। বিষয়টি নতুন। এই পদ্ধতিতে প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া দ্রুত সেরে ফেলা সম্ভব হয়েছে।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মহিলাদের চেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের কিডনি সাধারণত বড় হয়। এটিও একটি সমস্যা ছিল। তার চেয়েও বড় সমস্যা ছিল, গ্রহীতার হৃদ্যন্ত্রের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা তিন মাসে ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়।
ওই হাসপাতালের হৃদ্রোগ চিকিৎসক প্রিয়ম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কিডনির সমস্যায় ভোগা রোগীর হার্ট এমনিতেই ঠিক মতো রক্ত পাম্প করে না। যত সময় যায়, এই সমস্যা বাড়ে। সফল প্রতিস্থাপনের পরে হার্ট ভাল কাজ করে। তাই দ্রুত প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয়।’’
কিছু দিন আগে এসএসকেএম হাসপাতালও ভিন্ন রক্তের গ্রুপের স্বামীর কিডনি স্ত্রীর দেহে সফল প্রতিস্থাপন করেছে। সেখানকার চিকিৎসক অতনু পালের বক্তব্য, ‘‘মা ছেলেকে দিলেন, বাবা মেয়েকে দিলেন বা ভাই তাঁর বোনকে দিলেন, মিল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আলাদা রক্তের গ্রুপের স্বামীর থেকে স্ত্রীর দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন বরং কঠিন। প্রমাণ হয়েছে, সেই বাধাও কাটিয়ে ওঠা যায়। এ বার রোগীর পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে।’’
বিবেকের বছর ৫৪-র মা রিনা পাসোয়ান বলছেন, ‘‘আমি বাঁচব, আর ছেলে কষ্টে শেষ হয়ে যাবে! এটা দেখা যায় না। আসলে চিকিৎসকেরা আমাদের দু’জনকেই বাঁচিয়ে দিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy