Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Kolkata People's' Film Festival

করাচি, বর্মার দূরের বন্ধুর ছোঁয়াচ শহরে

একেবারেই কাছের পড়শি, তবু অনেক দূরে। পরিচয় আড়াল করেই তাঁর তৈরি এক আশ্চর্য ছোট্ট ছবির মাধ্যমে কলকাতায় চলে এসেছেন মায়ানমারের ছটফটে তরুণ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:১৩
Share: Save:

প্রশ্ন করলেই ইমেলে ঝটপট জবাব দেন মায়ানমারের ২৪ বছরের তরুণ। সঙ্গে অনুরোধ, “আমার নামটা না-লিখে শুধু ‘জার্নি অব আ বার্ড’ ছবির পরিচালক বলে লিখবেন।”

একেবারেই কাছের পড়শি, তবু অনেক দূরে। পরিচয় আড়াল করেই তাঁর তৈরি এক আশ্চর্য ছোট্ট ছবির মাধ্যমে কলকাতায় চলে এসেছেন মায়ানমারের ছটফটে তরুণ। সামরিক অভ্যুত্থান পরবর্তী মায়ানমারের অদেখা বাস্তবতা, যুবকদের প্রতিরোধের কাহিনি নিয়ে তাঁর আধ ঘণ্টার ছবিতে এ ছেলেকে কলকাতার কোনও ঘরে ফেরা ব্যর্থ নকশালের প্রতিমূর্তি বলেই মনে হয়। উত্তম মঞ্চে আসন্ন ‘কলকাতা পিপলস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ ছবিটি দেখা যাবে।

এ সত্যিই অদ্ভুত সময়। যখন গোটা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ হাতের মুঠোয় এলেও আমাদের নিজের ঘর, এই দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে পায়ে পায়ে লোহার পর্দার প্রতিরোধ। “আমেরিকা, ইউরোপের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বোধহয় আজকাল অনেক সহজ! নানা রাজনৈতিক বাধায় আমরা পড়শিরাই দূরে সরে যাচ্ছি”, বলছিলেন কলকাতার এই চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্যোক্তা কস্তুরী বসু, দ্বৈপায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়রা। দ্বৈপায়নের কথায়, “অথচ আমাদের মিলটাও অদ্ভুত! সংখ্যাগুরুবাদের রাজনীতির অত্যাচার, দারিদ্র্য, শোষণ এবং অতিমারির নানা সঙ্কটের টানাপড়েন ভারত, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মায়ানমার— সর্বত্র কমবেশি সত্যি!”

তবু এর মধ্যেও কাছে আসা সম্ভব। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মায়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের পরে পথে নামা কয়েক জন তরুণ-তরুণী যেমন নাম, পরিচয় গোপন রেখেই কলকাতার মনে বসত গড়তে আসছেন। ২০২১ সালের শুরুতে তাঁদের নির্ভার জীবন রাতারাতি বদলে দেয় অভ্যুত্থান। কিছু না-করার থেকে প্রতিবাদ ভাল বলে ওঁরা পথে নেমেছিলেন। পরে ঘরে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।

তবে সব পাখি ঘরে ফিরলেও সেই ফিরে আসার ঘরটাও সব সময়ে আগের মতো থাকে না, মালুম হয় ছবিটা দেখলেই! ‘জার্নি অব আ বার্ড’-এর পরিচালক বলছিলেন, “এ ছবির চরিত্র আমাদের বন্ধুরা কেউ সীমান্ত এলাকায়, কেউ বা তাইল্যান্ডে। চুপচাপ এ ছবির মাধ্যমে মায়ানমারের অবস্থাটা পৌঁছে দিচ্ছি।” আন্তর্জাতিক সিনেমার একটি নেট-মঞ্চের মাধ্যমে ছবিটি পেয়ে লুফে নিয়েছেন কলকাতার উদ্যোক্তারা।

মায়ানমারের তরুণদের মতোই করাচির জামশিদ ইরানি, শাহজিব খালিদরাও এক ধরনের চমৎকার বন্ধুতার সূত্রে মনে মনে এখন কলকাতাতেই রয়েছেন। আন্তঃসীমান্ত সমন্বয়ের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পুণের শ্রেয়স দশরথেদের সঙ্গে শাহজিবদের অনলাইন সাক্ষাৎ আশ্চর্য কাণ্ড ঘটিয়েছে। মুখোমুখি দেখা না-হলেও ‘ভাইরাল’ নামে একটি স্বল্প দৈর্ঘের ছবি তাঁরা বানিয়ে ফেলেছেন। দুই পড়শি দেশের মানুষের পরস্পরকে আবিষ্কারে শ্রেয়স, শাহজিবেরা উদ্বেল। শ্রীলঙ্কার তামিল মুসলিমদের উচ্ছেদ-কাহিনি (অ্যামিড দ্য ভিলাস), আফগান কন্যার র‌্যাপ গান-অভিযান (সনম), বাংলাদেশে অতিমারির আতঙ্ক (ধূসর যাত্রা) বা ভোপালে রূপান্তরকামীদের নিজের ঘর খোঁজার লড়াইও (এক জগহ অপনি) থাকছে ৩৯টি ছোট, বড়, কাহিনিচিত্র, তথ্যচিত্রের সম্ভারে।

কাল, শুক্রবার উৎসবের উদ্বোধনী ছবি কানের সেরা তথ্যচিত্র, পায়েল কাপাডিয়ার ‘আ নাইট অব নোয়িং নাথিং’। ২৩ জানুয়ারি উৎসবের শেষ ছবি ‘জার্নি অব আ বার্ড’। অশান্ত দেশে পরিচয় গোপন রাখা পরিচালক কিন্তু আত্মবিশ্বাসী, ‘‘এক বছরের মধ্যে আমার প্রথম কাহিনি-চিত্রও তৈরি হয়ে যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Short Film Myanmar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy