Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Primary School

Primary School: গা ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিকের কারখানা, কোর্টে প্রাথমিক স্কুল

রাজারহাটে স্কুলের গা ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে এই কারখানাটি।

রাজারহাটে স্কুলের গা ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে এই কারখানাটি। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২২ ০৬:৩৫
Share: Save:

কংক্রিটের উপরে লোহার ছাউনি দিয়ে তৈরি হচ্ছে কারখানা। আর তাতেই ধীরে ধীরে ঢেকে যাচ্ছে ওই কারখানার ঠিক পিছনে থাকা একটি প্রাথমিক স্কুল। স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, ওই কারখানা তৈরি হওয়া নিয়ে তাঁরা যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছেন। কারণ, কারখানা চালু হলে সেটি থেকে দূষণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জািনয়েছেন, বিষয়টি তাঁরা বারাসত আদালতের নজরে এনেছেন। কিন্তু অভিযোগ, আদালত কারখানার নির্মাণকাজে স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরেও তা কিছুটা এগিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ রাজারহাট থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন এবং রাজারহাট এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতকেও জানিয়েছেন।

চিনার পার্ক থেকে রাজারহাট রোড ধরে বেশ কিছুটা এগিয়ে নিউ টাউন ঘেঁষা রাইগাছি বটতলায় রাস্তার ধারেই রয়েছে ডিউক ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমি নামে ওই বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলটি। তিরিশ বছরেরও আগে তৈরি, নার্সারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলটি এলাকার পুরনো স্কুল বলেই পরিচিত। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সম্প্রতি স্কুলের জমি নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে তাঁদের অংশীদারের ভাগাভাগির পরে স্কুলের সামনের অংশটি ছেড়ে দিতে হয়েছে। সেখানেই তৈরি হচ্ছে কারখানা।

স্কুলের প্রিন্সিপাল দেবযানী নন্দীর অভিযোগ, স্কুল ভবনের সামনের অংশে দেওয়াল তুলে দিয়ে কারখানার ছাউনি বানানোর কাজ শুরু হওয়ার পরে তাঁরা জানতে পারেন, সেখানে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক নিষ্পেষণের কাজ হবে। তার পর থেকেই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ তাঁরা জানতে পেরেছেন, প্লাস্টিক নিষ্পেষণের কাজ করতে গিয়ে প্লাস্টিক পোড়ানোও হতে পারে। তা থেকে দূষণ ছড়ানোরও যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। দেবযানীদেবীর অভিযোগ, “স্কুলের একদম সামনে এমন একটা কারখানা হলে দূষণের জেরে বাচ্চাদের পড়াশোনার পরিবেশ পুরো নষ্ট হয়ে যাবে।” তিনি জানান, কারখানার ছাউনির কাজ শুরুর পরেই তাঁরা বারাসত আদালতে কাজ বন্ধের আর্জি জানিয়ে মামলা করেন। রাজারহাট থানা এবং রাজারহাট এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতেও লিখিত অভিযোগ জানান।

সোমবার ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের উপরেই কার্যত হুমড়ি খেয়ে পড়েছে নির্মীয়মাণ কারখানার ছাউনি। অভিযোগ, কারখানা তৈরি করার সময়ে চার পাশে যতটা ছাড় দেওয়ার কথা ছিল, তা-ও দেওয়া হয়নি। স্কুলে এখন গরমের ছুটি চলায় কোনও পড়ুয়া না থাকলেও কিছু অভিভাবক স্কুলে এসেছিলেন কারখানা সংক্রান্ত উদ্বেগের কথা জানাতে। ফিরদৌসি পরভিন নামে এমনই এক অভিভাবক বলেন, “কারখানা থেকে দূষণ ছড়ালে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে কী ভাবে?” স্কুলের আর এক শিক্ষিকা কাশ্মীরা মণ্ডল থাকেন স্কুলের কাছেই। তিনি বলেন, “শুধু স্কুলই নয়, আমাদের এলাকার পরিবেশও তো দূষিত হয়ে যাবে। তাই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাড়াও এলাকার মানুষদের সই সংগ্রহ করা হচ্ছে।”

বারাসত আদালত স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরে এখন কাজ সাময়িক ভাবে বন্ধ রয়েছে। তবু যে ভাবে দ্রুত গতিতে কারখানা তৈরির কাজ চলছিল, তাতে স্কুল কর্তৃপক্ষের দুশ্চিন্তা কমছে না। রাজারহাট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বলেন, “আদালত স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরেই আমরা কাজ বন্ধ করিয়ে দিয়েছি। এর পরে আদালত যেমন নির্দেশ দেবে, তা মেনে চলা হবে।’’ রাজারহাট এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রঞ্জন দাস বলেন, “পঞ্চায়েতের তরফ থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং যাঁরা কারখানা তৈরি করছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি, দু’পক্ষকেই নোটিস দিয়ে ডাকা হয়েছে। দু’তরফের বক্তব্য শুনে প্রয়োজনে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ করা হবে।”

যে জমিতে কারখানা তৈরি হচ্ছে, তার মালিক দীনেশ সরোজ বলেন, “আমি জায়গাটা ভাড়া দিয়েছিলাম। তাদেরই কারখানা করার কথা ছিল। যিনি কারখানা তৈরি করছেন, তিনি এবং আমি স্কুলে গিয়ে অধ্যক্ষর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। জানিয়েছিলাম, ওখানে প্লাস্টিক পোড়ানোর কাজ হবে না। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন আইনমাফিক এগোতে। তবু যদি স্কুল কর্তৃপক্ষের কোনও অসুবিধা হয়, তা হলে আমি ভাড়াটেকে জানিয়ে দেব যে, ওখানে কারখানা করা যাবে না। আমার এই সিদ্ধান্তের কথা পঞ্চায়েতের সঙ্গে বৈঠকের দিন জানিয়ে দেব।”

অন্য বিষয়গুলি:

Primary School construction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy