—প্রতীকী চিত্র।
ন’বছরের দাদার অস্থিমজ্জায় নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে তিন বছরের ভাই। দিনকয়েক আগে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর শরীরে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
আদতে কোলাঘাটের বাসিন্দা, পেশায় ভিন্ রাজ্যের স্বর্ণশিল্পী গৌতম ধাড়ার ছোট ছেলে প্রিয়াংশু। জন্মের পর থেকেই তার জ্বর-কাশি লেগেই থাকত। বছরখানেক আগে ধরা পড়ে, প্রিয়াংশু থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। শুরু হয় চিকিৎসা। জানা যাচ্ছে, এক-দেড় মাস অন্তর রক্ত দেওয়া হলেও বার বারই ওই শিশুটির হিমোগ্লোবিন পাঁচ-ছয়ে নেমে যাচ্ছিল। এর পরে ছেলেকে এনআরএসে নিয়ে আসেন গৌতম। সেখানে হেমাটোলজির শিক্ষক-চিকিৎসক সন্দীপ সাহার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু হয়।
সন্দীপ বলেন, ‘‘এতটুকু বাচ্চাকে যাতে বার বার রক্ত দিতে না হয় এবং হিমোগ্লোবিন বেশি রাখার জন্য বিশেষ এক ধরনের ওষুধ দিতে শুরু করি। কিন্তু তিন-চার মাসের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, তাতেও কাজ হচ্ছে না।’’ এর পরেই অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, থ্যালাসেমিয়া পুরোপুরি সারিয়ে তুলতে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনই একমাত্র পথ।
অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্তের পরে দেখা হয় পরিবারের কার সঙ্গে প্রিয়াংশুর এইচএলএ-জিনের সাদৃশ্য (মিল) পাওয়া যাচ্ছে। সন্দীপ জানাচ্ছেন, সাধারণত বাবা-মায়ের সঙ্গে কখনওই পুরোপুরি সাদৃশ্য থাকে না। অর্ধেক সাদৃশ্য পাওয়া যায়। তাই প্রথমেই খোঁজ করা হয় প্রিয়াংশুর ভাই-বোন কেউ আছে কি না। কারণ, সে ক্ষেত্রে পুরো সাদৃশ্য পাওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু প্রিয়াংশুর ক্ষেত্রে সেটিও হয়নি। ন’বছরের দাদার সঙ্গে তার এইচএলএ-জিনের অর্ধেক সাদৃশ্য পাওয়া যায়। তবে রক্তের গ্রুপের মিল ছিল না।
বিভিন্ন ওষুধ ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেই সব সমস্যা মেটানোর পাশাপাশি একাধিক কেমো জাতীয় ওষুধ দিয়ে প্রতিস্থাপনের উপযুক্ত করে তোলা হয় প্রিয়াংশুকে। কারণ, বার বার রক্ত নেওয়ার ফলে তার শরীরে বিভিন্ন অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল। তাতে প্রতিস্থাপন ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে কোনও রেডিয়েশন দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি দাদা প্রিয়মের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয় প্রিয়াংশুর শরীরে।
ওই সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পীতবরণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রক্তের ক্যানসারে আক্রান্তের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হলেও থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে দেশের সরকারি স্তরের হাসপাতালে অন্তত আগে শোনা যায়নি। এ জন্য সরকার ও চিকিৎসকদের যৌথ প্রচেষ্টা সার্থক। নতুন দিশাও বলা যেতে পারে।’’
শুক্রবার ‘কাইমেরিজম রিপোর্ট’-এও দেখা গিয়েছে, প্রিয়াংশুর শরীরে প্রতিস্থাপন হওয়া অস্থিমজ্জা ১০০ শতাংশ কাজ করছে। আগামী সপ্তাহে বাড়ি ফিরবে প্রিয়াংশু। সেই অপেক্ষায় রয়েছে ছোট্ট দাদা প্রিয়মও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy