Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Arrest In Agarpara

আক্রোশেই খুন বালককে, আগরপাড়ায় ধৃত পড়শি

গত ৩০ জানুয়ারি বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় আগরপাড়া নিউ লাইনের বাসিন্দা, আট বছরের ইন্তাজ হুসেন। খোঁজ না মেলায় সেই রাতেই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ইন্তাজের বাবা নাসিম।

An image of the boy

ইন্তাজ হুসেন। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:১৭
Share: Save:

আক্রোশ থেকেই আগরপাড়ার বাসিন্দা, বছর আটেকের বালককে খুন করেছে তার প্রতিবেশী যুবক। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম নুর হাসান ওরফে জালারকা। সে আগরপাড়ার নিউ লাইন এলাকার বাসিন্দা। শনিবার সকালে তাকে গ্রেফতার করে খড়দহ থানার পুলিশ। এ দিন ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে ধৃতকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

গত ৩০ জানুয়ারি বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় আগরপাড়া নিউ লাইনের বাসিন্দা, আট বছরের ইন্তাজ হুসেন। খোঁজ না মেলায় সেই রাতেই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ইন্তাজের বাবা নাসিম। এর পরে ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ইন্তাজের বাড়ি থেকে মাত্র দেড়শো মিটার দূরে, একটি পরিত্যক্ত ডেয়ারি কারখানার ভিতরের পুকুরে এক বালকের দেহ ভাসতে দেখা যায়। সেখানে গিয়ে নাসিম তাঁর ছেলের দেহ শনাক্ত করেন। হাত বাঁধা ও মুখে কাপড় গোঁজা অবস্থায় ইন্তাজের দেহ ওই পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এর পরেই পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ তুলে বিটি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান ওই বালকের পরিজন ও প্রতিবেশীরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর পরে দফায় দফায় কয়েক জন সন্দেহভাজনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। তাঁদের এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া সূত্র ধরেই এ দিন জালারকাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান ব্যারাকপুরের উপ-নগরপাল (সেন্ট্রাল) কুলদীপ সোনাওয়ানে। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেছিলেন, ৩০ জানুয়ারি বিকেলে ওই পরিত্যক্ত কারখানার পাঁচিলের এক দিক থেকে আর এক দিকে ওই বালককে টেনে নামাচ্ছে জালারকা। ওই যুবকের মানসিক অস্থিরতার সমস্যা রয়েছে। তা থেকেই পুরনো কিছু রাগের কারণে এমন ঘটনা বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে।’’

পুলিশ সূত্রের দাবি, জেরার মুখে জালারকা খুনের কথা স্বীকার করেছে। ইন্তাজকে কারখানার ভিতরে এনে প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করে সে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে জঙ্গলে পড়ে থাকা দড়ি দিয়ে ইন্তাজের হাত বাঁধে জালারকা। তার পরে ইন্তাজের জামা খুলে, সেটি ছিঁড়ে তার মুখে গুঁজে দিয়ে ছেলেটিকে পুকুরে ফেলে দেয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ঝোপজঙ্গলে ভরা ওই পরিত্যক্ত কারখানার ভিতরে মাঝেমধ্যেই নাসিমের সঙ্গে নেশা করত জালারকা। ৩০ জানুয়ারির কয়েক দিন আগে দু’জনের মধ্যে কোনও কারণে বচসা হয়। অন্য দিকে, জালারকাকে রাস্তায় দেখলেই বিভিন্ন ভাবে উত্ত্যক্ত করত ইন্তাজ। তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই ওই বালকের উপরে রাগ ছিল জালারকার। নাসিমের সঙ্গে ঝগড়ার পরে সেই আক্রোশ আরও বেড়ে যায়।

সূত্রের খবর, ঘটনার দিন দুপুরে বৃষ্টির পরে পরিত্যক্ত কারখানার সামনেই ঘোরাঘুরি করছিল
জালারকা। বিকেলে সেখানে ইন্তাজ আসতেই তার হাত ধরে টেনেহিঁচড়ে পাঁচিলের উপরে উঠে ভিতরে নামে জালারকা। ওই পরিত্যক্ত কারখানার ভিতরে অনেকেই নেশা করতে আসেন। তেমন দু’-তিন জন তা দেখে সেখান থেকে পালিয়ে যান। ঘটনার তদন্তে নেমে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে তাঁদের শনাক্ত করেন খড়দহ থানার তদন্তকারীরা। তাঁদের জেরা করে পুলিশের হাতে বিভিন্ন তথ্য আসে। এর পরে এ দিন ভোরে নিউ লাইন এলাকা থেকেই জালারকাকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, জালারকা একাই খুনের ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তবে তার সঙ্গে আরও কেউ ছিল কি না এবং আক্রোশের আরও কোনও কারণ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে জালারকার মানসিক অস্থিরতা রয়েছে বলে জেনেছেন তদন্তকারীরা। বালককে খুনের ঘটনার কয়েক দিন আগে সামান্য ঝগড়ার জেরে এক প্রতিবেশীর উপরেও জালারকা ছুরি নিয়ে হামলা করেছিল বলে জানা গিয়েছে। ডিসি বলেন, ‘‘ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আরও কিছু জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

arrest neighbour arrested Minor Boy Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE