আরম্ভ: যাত্রা শুরুর আগে কবি সুভাষ স্টেশনে মেট্রোর নতুন রেক। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
যাত্রীরা তো বটেই, আশা ছেড়ে দিতে বসেছিলেন খোদ মেট্রোকর্তারাও! পরীক্ষা–নিরীক্ষা চুকে গেলেও রেল বোর্ডের আস্থার মাপকাঠিতে কিছুতেই উতরোতে পারছিল না চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (আইসিএফ) থেকে আসা কলকাতা মেট্রোর নতুন এসি রেক। শেষমেশ দীর্ঘ অপেক্ষার পরে বুধবার সন্ধ্যায় আক্ষরিক অর্থেই ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষের। ওই সন্ধ্যায় রেল বোর্ডের সম্মতির চিঠি এসে পৌঁছয় পার্ক স্ট্রিটের মেট্রো ভবনে। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কারশেড থেকে বেরিয়ে যাত্রী নিয়ে ছুটল আইসিএফ থেকে আসা প্রথম রেকটি। বৃহস্পতিবার চালু হয়েছে দ্বিতীয় রেকটিও।
মেট্রো সূত্রের খবর, নির্বাচনের মরসুম হওয়ায় ধূপ-ধুনো, হইচই ছাড়াই এক রকম নীরবে ওই রেকটিকে নামানো হল যাত্রী পরিবহণের কাজে। প্রায় ৬ বছর পরে কলকাতা মেট্রোর যাত্রীরা নতুন এসি রেক পেলেন। প্রথম যাত্রায় বুধবার রাত ৮টা ৫০ মিনিটে দমদম থেকে রওনা হয়ে ট্রেনটি কবি সুভাষ পৌঁছয় ৯টা ৪১ মিনিটে। ফিরতি পথে ৯টা ৪৫ নাগাদ কবি সুভাষ থেকে ছেড়ে দমদমে ফেরে রাত ১০টা ৩৫-এ। রাতে রেকটিতে যাত্রী-সংখ্যা খুব বেশি ছিল না ঠিকই। তবে তার মধ্যেই বহু উৎসাহী যাত্রী চেনা এসি রেকের বাইরে কিছুটা অন্য রকম ট্রেন দেখে কৌতূহলী হয়ে মোবাইলে ছবি তোলা শুরু করেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে সেই সব ছবি।
নতুন রেকে প্রশস্ত দরজা, ভেস্টিবিউল ছাড়াও ডিসপ্লে এবং ঘোষণার মান উন্নত হয়েছে। পুরনো রেকের প্রতি কামরায় যেখানে ৪টি ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড ছিল, সেখানে নতুন রেকটির প্রতি কামরায় থাকছে ৬টি ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড। তাতে লাল, নীল এবং সবুজ আলোয় একসঙ্গে গোটা চারেক স্টেশনের নাম দেখা যাচ্ছে। পেরিয়ে আসা মেট্রো স্টেশনের নামের নীচে জ্বলছে লাল আলো। কোনও নির্দিষ্ট স্টেশন এলে সেটির নামের পাশে নীল আলো জ্বলছে। পরবর্তী স্টেশনগুলির ক্ষেত্রে জ্বলছে সবুজ আলো। বিশেষ লাল তিরচিহ্ন ট্রেনের গতিমুখ নির্দেশ করছে। ব্যাটারিচালিত অ্যালার্ম ঘড়ির মতো টিক টিক শব্দ জানান দিচ্ছে দরজা খোলা বা বন্ধ হওয়ার সময়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
নতুন রেকের এক যাত্রী পঙ্কজ বর্মণ বলেন, ‘‘অনেক অপেক্ষার পরে যে নতুন রেক চলল, সেটা দেখে ভাল লাগছে। মাইক্রোফোনে ঘোষণা আগের চেয়ে ভাল শোনা যাচ্ছে। ট্রেন ছাড়া বা চলার সময়ে ঝাঁকুনিও হচ্ছে কম।’’ তবে, নতুন রেকে চালকের কেবিন সংলগ্ন একটি কোচের ছাদ থেকে এসি-র জল চুঁইয়ে পড়ার সমস্যার কথা জানিয়েছেন যাত্রীদের কেউ কেউ। মেট্রো সূত্রের খবর, নতুন ট্রেনের সব যাত্রাতেই মেট্রোর একাধিক আধিকারিক উপস্থিত থাকছেন। ট্রেনের সমস্যার খুঁটিনাটি লক্ষ রাখছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে দু’বার ট্রেনটি চালানো হয়েছে বলে খবর।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে চেন্নাই থেকে এই রেকটি এসে পৌঁছলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্বে নানা গোলযোগ দেখা দিয়েছিল। চাকার কনিক্যাল স্প্রিং থেকে ছাদের রুফ মাউন্ট ইউনিট— সর্বত্রই কিছু না কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা দেখা দেয় সফটওয়্যার এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ থেকে বেরিয়ে আসা তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ নিয়েও। পরে ধাপে ধাপে সেই সব সমস্যা দূর করেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত প্রায় ২১ মাস পরে ট্র্যাকে দৌড়তে নেমেছে ওই রেক।
মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত দিনে সীমিত সংখ্যক ট্রিপ চালিয়ে ট্রেনটিকে নজরদারির মধ্যে রাখা হবে। সব কিছু ঠিকমতো চললে ধাপে ধাপে ট্রিপের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
এ প্রসঙ্গে মেট্রোর এক কর্তা বলেন, ‘‘খানিকটা হলেও রাহুমুক্তির স্বাদ পাচ্ছি। পুরনো রেকের খোলনলচে বদলে চালানোর পর্ব মনে হচ্ছে এ বার শেষ হবে। চিন থেকে আসা ডালিয়ানের রেকের পরীক্ষামূলক দৌড় চলছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই রেকও চালানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’ তিনি আরও জানান, আইসিএফ থেকে আসা বাকি তিনটি রেককেও ধাপে ধাপে পরিষেবার কাজে নামানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy