n এই নির্মীয়মাণ বহুতল থেকেই পড়ে মৃত্যু হয় দিলশাদের। বুধবার, এন্টালিতে। নিজস্ব চিত্র
শহর ঘুরতে নয়, কাজের সন্ধানেই কলকাতায় এসেছিল এন্টালির নির্মীয়মাণ বহুতল থেকে পড়ে মারা যাওয়া বছর তেরোর মহম্মদ দিলশাদ। বুধবার পুলিশ সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে পুলিশের দাবি, ওই কিশোরের মঙ্গলবারের রেলের টিকিট সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনার দিন সকালেই যে হেতু সে কলকাতায় এসে পৌঁছেছিল এবং যে হেতু কোথাওই সে কাজ করেনি, তাই শিশু শ্রমিক রাখার ধারায় কারও বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। যদিও লালবাজারের এক কর্তার দাবি, এন্টালির ওই ঘটনার পরে শহরের নির্মাণস্থলগুলি ঘুরে সেখানে কোনও শিশু শ্রমিক রাখা হচ্ছে কি না, তা দেখতে বলা হয়েছে থানার ওসিদের।
এন্টালি থানার ১১৬ নম্বর ডক্টর লালমোহন ভট্টাচার্য রোডে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের নীচ থেকে মঙ্গলবার দুপুরে উদ্ধার হয়েছিল দিলশাদের মৃতদেহ। ওই বহুতলে কাজ করা শ্রমিকদের থেকে ফোন পেয়ে পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসকেরা জানান, কয়েক ঘণ্টা আগেই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এ দিন এন আর এস হাসপাতালেই দিলশাদের দেহের ময়না-তদন্ত হয়।
এন্টালি থানা থেকে কয়েক মিনিটের দূরত্বে ১৭তলা ওই নির্মীয়মাণ বহুতলে গিয়ে এ দিন দেখা যায়, কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। জানা গিয়েছে, দিলশাদের কাকাও ওই বহুতলে নির্মাণকর্মী হিসেবে কাজ করেন। বাবার সঙ্গে ওই কিশোরের কিছু দিনের মধ্যেই সেখানে কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। সে জন্যই কাটিহারের বাড়ি থেকে মঙ্গলবার আরও তিন-চার জন নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে সে কলকাতায় আসে। কাজের জায়গা ঘুরে দেখাতে নিয়ে আসা হয়েছিল ওই কিশোরকে। কিন্তু কখন যে সে সকলের চোখের আড়ালে গিয়ে লিফটের গর্তে পড়ে যায়, তা বলতে পারেননি কেউই।
এন্টালি থানায় গিয়ে দেখা গেল, গেটের বাইরে বেশ কিছু লোকের ভিড়। তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘অকারণে এত খোঁজখবর করা হচ্ছে। সবটাই মিটে গিয়েছে।’’ মৃত কিশোরের বাবা মহম্মদ রাবুলের সঙ্গে তাঁরা কথাই বলতে দিতে চাননি। সেই সময়ে কিছুই বলতে চান না জানালেও পরে রাবুল ফোনে জানান, তিনি হাওড়ার একটি নির্মাণস্থলে কাজ করছিলেন। দিন কয়েকের মধ্যে ভাইয়ের সঙ্গে এন্টালির ওই বহুতলে তাঁর কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। বিহারের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে তিন সন্তান। দিলশাদ ছিল সকলের ছোট। নির্মাণকাজে বাবার সঙ্গে সে-ও যোগ দেবে বলে মঙ্গলবার কলকাতায় আসে।
রাবুলের কথায়, ‘‘ছেলেকে পড়ানোর বহু চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পড়ায় ওর মন ছিল না। লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় সে কিছুতেই বই খুলে বসত না। সারা দিন খেলে বেড়াত। এ দিকে লকডাউনে আমাদের কাজ নেই, দু’বেলা ঠিক মতো খাওয়া জোটে না। ভাবলাম, স্কুল যখন হচ্ছেই না, ছেলেটা কলকাতায় কাজে ঢুকুক। সংসারে সুরাহা হবে। সেই কাজে এসে যে এ ভাবে সব শেষ হয়ে যাবে, ভাবিনি!’’ কয়েক মিনিট থেমে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে এত উঁচু বাড়ি কোনও দিন দেখেনি দিলশাদ। তাই হয়তো লাফিয়ে উপরে উঠে গিয়েছিল...!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy