বিধাননগর পুলিশের ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচিতে ওই যুবক। নিজস্ব চিত্র।
মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নেই। নিজের দু’হাতও আয়ত্তের বাইরে। নিয়ন্ত্রণ নেই গতির তুফান তোলা গাড়ি এবং মোটরবাইকেও!
শীতের রাত যত বাড়ে, সল্টলেক এবং নিউ টাউন জুড়ে দামি গাড়ির দাপট ততই বাড়তে থাকে বলে অভিযোগ। এই দৌরাত্ম্য চরমে পৌঁছয় বড়দিন থেকে বর্ষবরণের সময়ের মধ্যে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পার্টি ফেরত ওই সমস্ত গাড়ি সিগন্যালের তোয়াক্কা করে না। মানা হয় না পুলিশের বেঁধে দেওয়া গতি-সীমার নিয়মও। কখনও দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশি তৎপরতা বাড়ে। কিন্তু বাকি সময়ে যে কে সে-ই! সল্টলেকের এক বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘এই ধরনের গাড়ির এমন আওয়াজ যে মনে হয়, দূর থেকে কোনও জন্তু ছুটে আসছে। আর কিছু দিনের মধ্যেই এখানে পুরসভার নির্বাচন। কিন্তু এ সব নিয়ে কারও হুঁশ নেই।’’
ওই এলাকার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে দিনকয়েক আগেই নানা মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। বছর বাইশের এক যুবকের বেপরোয়া গতিতে মোটরবাইক ছোটানোর ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁর নিজেরই পোস্ট করা ওই সব ভিডিয়োর কোনওটিতে দেখা যাচ্ছে, নিউ টাউনের মেজর আর্টেরিয়াল রোড ধরে তিনি মোটরবাইক ছোটাচ্ছেন ঘণ্টায় ১৬০-১৭০ কিলোমিটার বেগে। কোনওটিতে দিনের ব্যস্ত সময়ে নিক্কো পার্কের কাছে বিশ্ব বাংলা সরণিতে গাড়ির জটের মধ্যে দিয়ে তিনি এঁকেবেঁকে বেরিয়ে যাচ্ছেন ১৫০-রও বেশি উদ্দাম গতিতে।
একই রকম ভিডিয়ো রয়েছে চিংড়িঘাটা থেকে নিউ টাউন পর্যন্ত রাস্তাতেও। প্রশ্ন উঠেছে, গতি-সীমা নির্ধারিত করা রয়েছে এমন রাস্তায় কেউ বিনা বাধায় দিনের পর দিন এমন ভাবে মোটরবাইক চালান কী করে? পুলিশের নাকা তল্লাশিও কি তবে থাকে না?
সমালোচনার মুখে পড়ে তড়িঘড়ি মহম্মদ শাকিব নামে ওই যুবককে ডেকে পাঠায় বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট। জানা যায়, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ‘ফলোয়ার’ প্রায় ৫০ হাজার। বাইকের বিপজ্জনক ভিডিয়ো পোস্ট করেই তিনি ওই পরিমাণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে ওই যুবকই সচেতনতা প্রচারের কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিধাননগর পুলিশ। দিন পনেরো আগে শুরু হওয়া বিধাননগর পুলিশের ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ সপ্তাহের সূচনায় তাঁকে দিয়ে ফিতেও কাটানো হয়।
এ দিন যোগাযোগ করা হয়েছিল শাকিবের সঙ্গে। মির্জা গালিব স্ট্রিটে তাঁর বাড়ি। বাবা নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। মা ছাড়াও তাঁর এক বোন রয়েছেন। ভবানীপুরের একটি কলেজের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া শাকিবকে তাঁর বাবা গত বছরের নভেম্বরে জন্মদিনের উপহার হিসাবে সুপার বাইকটি কিনে দেন। সেই বাইক নিয়েই গতির তুফান তুলে এর পর ভিডিয়ো শুট করা শুরু তাঁর। শাকিব বলেন, ‘‘গতি আমার প্রিয়। ধীরে মোটরবাইক চালানোর থেকে সাইকেল চালানো ভাল।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এখন আমি শহরের মধ্যে নিয়ম মেনেই বাইক চালাই। হাইওয়েতে গিয়ে যত জোরে খুশি পিক-আপ নিই।’’
কিন্তু এক জন শাকিবকে কাজে লাগিয়ে সচেতনতা প্রচার চালানোর চেষ্টা করা হলেও এ ভাবে নিয়ম ভেঙে আরও যাঁরা গাড়ি ছোটান শহরের রাস্তায়, তাঁদের কী হবে?
বিধাননগর পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এটা ঠিক যে শাকিবের ঘটনা শোরগোল ফেলে দিয়েছে। আসলে ওঁর বিপুল সংখ্যক ফলোয়ার দেখেই আমাদের মনে হয়েছে, সতর্কতার প্রচার ওঁর মাধ্যমেই যুব সমাজের বড় অংশের কাছে পৌঁছতে পারে। তবে গত চার বছরের বেশি সময় ধরে আমরাও সমাজের নানা স্তরের চালকদের নিয়ে প্রশিক্ষণমূলক ক্লাস করাচ্ছি। তা ছাড়া সুযোগ বুঝে বা অভিযোগ পেলে তল্লাশি অভিযানও চলে।’’ কিন্তু অভিযোগ আসার অপেক্ষা না করে কেন লাগাতার নাকা তল্লাশি চলে না? সেই উত্তর কিন্তু মেলেনি পুলিশ-প্রশাসনের তরফে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy