শেঠবাগানের সেই স্কুল। —নিজস্ব চিত্র।
এই স্কুলের করিডর দিয়েই এক দিন শিক্ষক হিসাবে হেঁটে যেতেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রধান শিক্ষক হিসাবে স্কুলের কার্যভার সামলাতেন বাম জমানার এক মন্ত্রী। পড়ুয়াদের কোলাহলে মুখরিত থাকত স্কুল চত্বর। আর এখন? সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে কম-বেশি ১৫০ জনে। প্রতি বছর স্কুলে ছাত্র সংখ্যা কমছে একটু একটু করে। এই অবস্থায় তাদের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেছে দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকার শেঠবাগান আদর্শ বিদ্যামন্দির। মঙ্গলবার সকালে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের পদযাত্রার মাধ্যমে স্কুলের ৭৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছে। এর পরে সারা বছর ধরে চলবে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান। আর তার ফাঁকেই স্কুলে কী ভাবে পড়ুয়াদের সংখ্যা বাড়ানো যায়, সে জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ নানা ধরনের প্রস্তাব দিচ্ছেন স্কুলশিক্ষা দফতরকে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, বাংলা মাধ্যমে পড়ার প্রবণতা হ্রাস এবং কোভিড-পর্ব— এই দুইয়ের ফলে গত কয়েক বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে কমেছে পড়ুয়ার সংখ্যা। ওই স্কুলের শিক্ষক পার্থ মুখোপাধ্যায় জানান, করোনার তিনটি ঢেউ তাঁদের স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে এক ধাক্কায় অনেকটা। কী ভাবে? পার্থ বলেন, ‘‘আমাদের স্কুল দক্ষিণ দমদমের এমন একটি জায়গায়, যেখানে অনেক পড়ুয়ার অভিভাবকই ছোটখাটো কাজের সূত্রে শহরের বাইরের কোনও এলাকা থেকে এসে থাকতেন। করোনার সময়ে কাজ হারিয়ে তাঁরা সকলে নিজেদের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান। করোনা-পর্বের পরেও তাঁরা আর শহরে ফিরে আসেননি। ফলে তাঁদের সন্তানেরাও আমাদের স্কুল ছেড়ে চলে গিয়েছে।’’
পার্থ জানাচ্ছেন, দক্ষিণ দমদমের শেঠ কলোনির এই স্কুলটি ৭৫ বছর আগে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে দমদমে এসে বসবাসকারী বাসিন্দাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে। সেখানে এক সময়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে কাজ করেছেন বাম জমানার মন্ত্রী সত্যসাধন চক্রবর্তী। ষাটের দশকের শেষ দিকে সেখানেই বাংলার শিক্ষক হিসাবে কয়েক মাস চাকরি করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
তাঁর সময়ে কাজ করা এক শিক্ষাকর্মী শান্তিময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সে সময় স্কুলের পরিবেশ ছিল অন্য রকম। এক-একটা ক্লাসের তিন-চারটি করে সেকশন ছিল। ছাত্র উপচে পড়ত স্কুলে। বুদ্ধদেববাবুকে তখন কাছ থেকে দেখেছি। উনি খুব শৃঙ্খলাপরায়ণ মানুষ ছিলেন। ঘড়ি ধরে ঠিক সময়ে ক্লাসে যেতেন। কয়েক মাসেই পড়ুয়াদের কাছে খুব প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তবে কয়েক মাস স্কুলে থাকার পরে দলের সর্বক্ষণের কর্মী হয়ে যাওয়ায় স্কুল ছেড়ে দেন বলেই আমরা জানি। সেই সময় স্কুলে পড়ুয়াদের আওয়াজে চার দিক গমগম করত।’’
সে সবই এখন অতীত। এখন স্কুলের ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাতও ঠিক নেই। দেড়শো জন পড়ুয়ার জন্য রয়েছেন ২৫ জনের মতো শিক্ষক! স্কুলের প্রধান শিক্ষক চিরঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিক্ষকেরাই চাইছেন, কী ভাবে স্কুলটাকে আবার পুনরুজ্জীবিত করা যায়,সেই উপায় খুঁজতে। আমরা স্থানীয় বিধায়ক তথা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে গিয়েছি। তাঁকে একাধিক প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের স্কুল এখন পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আছে। তার মধ্যে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ছেলেমেয়ে একসঙ্গে পড়ে। আমাদের প্রস্তাব, পঞ্চম শ্রেণি থেকেই স্কুলটিতে ছাত্রছাত্রীদের একসঙ্গে পড়ানো হোক। সেই সঙ্গে ইংরেজি মাধ্যম করা হোক। স্কুলটি যে এলাকায় রয়েছে, তাতে ইংরেজি মাধ্যম হলে পড়ুয়াদের সংখ্যা বাড়বে বলেই আমাদের মনে হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy