সংগ্রাম ভট্টাচার্য
কোভিড-কাঁটায় এ রাজ্যে থমকে গিয়েছিল অঙ্গদানের প্রক্রিয়া। পথ দুর্ঘটনায় মৃত ৩১ বছরের এক যুবকের পরিবারের হাত ধরে সেই প্রতিকূলতা শুধু দূরই হল না, অঙ্গদানের মাধ্যমে এক থেকে বহু হলেন ভাটপাড়া পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সংগ্রাম ভট্টাচার্য। মৃতের কিডনি পেয়েছেন লিলুয়ার বাসিন্দা ২৯ বছরের এক যুবক। লিভার প্রতিস্থাপিত হবে আগরতলার বাসিন্দা, ৫৯ বছরের এক প্রৌঢ়ের দেহে। যুবকের হৃৎপিণ্ড পাচ্ছে হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৭ বছরের এক কিশোর। বেসরকারি হাসপাতালের আই ব্যাঙ্কে যাচ্ছে চোখ। কিডনি এবং ত্বক গ্রিন করিডরের মাধ্যমে এসএসকেএমে পৌঁছয়। ৪২ বছরের এক যুবকের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়েছে বলে খবর।
‘রিজিয়োনাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজ়েশন’ (রোটো) সূত্রে খবর, গত ২০ মার্চ শহরে শেষ অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছিল। লকডাউন শুরু হওয়ার পরে ১৫ অগস্ট পর্যন্ত অঙ্গদানের প্রক্রিয়া কার্যত থমকে ছিল। সংগ্রামের পরিবারের সিদ্ধান্তে ফের এক জনের অঙ্গদানে এতগুলি প্রাণ বাঁচানো গেল। অঙ্গদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক-কর্মীদের বক্তব্য, কোভিড-ভীতির কারণে আক্রান্ত থেকে দূরত্ব তৈরি করা যখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন সংগ্রামের পরিবার অঙ্গদানে সম্মতি জানানোয় জয়ী হল মানবিকতা।
মৃত্যুর পরে এই জয়েরই শরিক হতে চেয়েছিলেন পেশায় ওষুধ সংস্থার প্রতিনিধি। মৃতের স্ত্রী জানিয়েছেন, মৃত্যুর পরে দেহ এবং অঙ্গদান করতে চেয়েছিলেন স্বামী। শুক্রবার দুপুরে মোটরবাইক নিয়ে কল্যাণী যাচ্ছিলেন ওই যুবক। নদিয়ার জাগুলিয়ার কাছে দুর্ঘটনার শিকার হন। বাড়ি থেকে দাদার সঙ্গে কল্যাণী যাওয়ার কথা ছিল সংগ্রামের। দাদার আসতে দেরি হওয়ায় একাই বেরোন। ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময়ে ভাইকে জখম অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন দাদা। সংগ্রামকে প্রথমে কল্যাণী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে অ্যাপোলো গ্লেনেগলস। দুর্ঘটনা ঘটল কী ভাবে? বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রের খবর, বাইকের স্ট্যান্ড নামানো ছিল। চলন্ত অবস্থায় স্পিড ব্রেকারে স্ট্যান্ড লাগলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান সংগ্রাম।
আরও পড়ুন: বম্বে গ্রুপের রক্ত নিতে দাতার বাড়িতে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা
রবিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসকেরা তাঁর ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করার পরে অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি পরিজনেরা। লিভার ও কিডনি অ্যাপোলোতেই চিকিৎসাধীন দু’জন পেয়েছেন। বাকি অঙ্গগুলি অন্যত্র পাঠানোর জন্য এ দিন গ্রিন করিডর করা হয়েছিল।
মৃতের মা দেবী ভট্টাচার্য বললেন, “বেরোনোর সময়ে জিজ্ঞাসা করলাম, খেয়ে যাবি না? বলল, এসে খাবে। অনেক দিনই বিকেলে ফিরে খেত। সে দিন ফিরল না।” বাবা সুসীম ভট্টাচার্য বলেন, “আমার দাদা দেহদানের অঙ্গীকার করেছিলেন। গত বছর তিনি মারা যান। ছেলে বোধহয় দাদার সিদ্ধান্তে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণার পরে বৌমা বলল, ছেলেরও অঙ্গদানের ইচ্ছা ছিল। পরিবারের সকলে মিলে সম্মতি দিই।”
‘রোটো’র জয়েন্ট ডিরেক্টর তথা নেফ্রোলজির চিকিৎসক অর্পিতা রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘এক সময়ে মনে হচ্ছিল, লকডাউন-পর্ব মেটা পর্যন্ত অঙ্গদানের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু কোভিড এখন অনেক দিন থাকবে। তত দিন কিডনির অসুখে ভোগা রোগীরা যদি ডায়ালিসিসে থাকেন, তাঁদের করোনায় আক্রান্ত হওয়া বা মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক বেশি। তার চেয়ে কিডনি প্রতিস্থাপিত হলে রোগীকে বাড়ি থেকে বেরোতে হবে না। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কাও কমবে। এটাও নিউ নর্মাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy