বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, যে ভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, চেন্নাই-সহ দেশের একাধিক শহর যখন জলসঙ্কটের সম্মুখীন, সেখানে দোলের দিনে যে পরিমাণ জল খরচ হয়েছে কলকাতায়, তা শুধু দুর্ভাগ্যজনকই নয়, লজ্জার এবং চিন্তারও।
ফাইল চিত্র।
দোল উৎসবকে কেন্দ্র করে জল অপচয়ের যথেচ্ছাচার? না কি রঙেই জলের বিসর্জন?— কী ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে দোলকে কেন্দ্র করে জল অপচয়ের প্রবণতাকে?
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, যে ভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, চেন্নাই-সহ দেশের একাধিক শহর যখন জলসঙ্কটের সম্মুখীন, সেখানে দোলের দিনে যে পরিমাণ জল খরচ হয়েছে কলকাতায়, তা শুধু দুর্ভাগ্যজনকই নয়, লজ্জার এবং চিন্তারও।
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, প্রতি বছরই দোলে অতিরিক্ত চাহিদা সামাল দিতে বাড়তি জল পরিশোধন করে সরবরাহ করা হয়। চলতি বছরেও দৈনন্দিন চাহিদার অতিরিক্ত প্রায় ৭-৮ শতাংশ পরিশোধিত জল সরবরাহ করতে হয়েছে পুরসভাকে। জল সরবরাহ ও খরচ সংক্রান্ত পুরসভার রিপোর্ট বলছে, শহরে প্রতিদিন সরবরাহকৃত জলের পরিমাণ প্রায় ১১৮ কোটি লিটার। এর মধ্যে বাড়িতে (ডোমেস্টিক ইউজ়) প্রায় ৭৪ কোটি, শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে (ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ইউজ়) প্রায় ৪১ কোটি এবং সামাজিক কারণে সরবরাহ করা জলের পরিমাণ (সোশ্যাল ইউজ়) প্রায় ২ কোটি লিটার। সেখানে ৭-৮ শতাংশ অতিরিক্ত পরিশোধিত জল সরবরাহের অর্থ হল, প্রায় সাড়ে ৯ কোটি লিটার অতিরিক্ত জল সরবরাহ করা হয়েছে রঙের উৎসবের দিনে। উৎসব পালনে, উৎসবের পরে সেই রং দেহ ও পোশাক থেকে ধোয়ার জন্য!
বিশেষজ্ঞদের একাংশ একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। তা হল, সরবরাহ করা অতিরিক্ত জল পরিশোধন বাবদ খরচের বিষয়টি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের অধিকর্তা পঙ্কজকুমার রায় বলছেন, ‘‘এমন নয় যে, পুরসভা দোলের দিনে অপরিশোধিত জল, অর্থাৎ গঙ্গা থেকে জল তুলে তা সরবরাহ করছে বাড়িতে। বরং পাইপের মাধ্যমে যে জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছচ্ছে, অন্য দিনের মতো সবটাই পরিশোধিত। ওই জল উৎপাদনে নির্দিষ্ট খরচ রয়েছে। সেখানে জল খরচের এই বহর দেখলে খারাপ লাগে।’’
রঙের উৎসবের দিন অতিরিক্ত সরবরাহ করা জল পরিশোধনে কত খরচ হয়েছে?
পুরকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, শহরে বিনামূল্যে জল দেওয়া হয় বলে, অর্থাৎ জল-কর না থাকায় সেই হিসেবটা করা হয়নি। তবে পরিবেশ গবেষণাকারী সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর অতীতের এক বিশ্লেষণ বলছে, ২০০৫-’০৬ সালে প্রতি হাজার লিটার জল পরিশোধন করে তা সরবরাহের জন্য পুরসভার খরচ হত ৩.১৫ টাকা। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘বর্তমানে সেই খরচ কমপক্ষে আড়াই গুণ বেশি হয়েছে বলা যেতে পারে।’’ সেই হিসেবে, অতিরিক্ত জল পরিশোধন করে সরবরাহে পুরসভার ভাঁড়ার থেকে এক দিনে প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে! যার পরিবর্তে একটি টাকাও আসেনি বা আসে না পুরসভার ভাঁড়ারে! কারণ, জল-করে ক্রমাগত ‘না’ করেই চলেছে পুরসভায় ক্ষমতাসীন দল। এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘বিনামূল্যে জল পাচ্ছি বলেই তার কোনও মূল্য নেই। এই জল কিনলে বা তার জন্য কর দিতে হলে তখন দোলেও পরিমিত জল খরচ করতেন সবাই।’’ ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর প্রাক্তন অধিকর্তা অরুণাভ মজুমদার বলছেন, ‘‘অন্য দিন নিয়ন্ত্রিত ভাবে জল খরচ করে, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে বা জল পুনর্ব্যবহার করে দোলের মতো উৎসবে অতিরিক্ত খরচের ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব।’’
কিন্তু প্রশ্ন হল সেই ‘সম্ভব’ করবেটা কে? সেই সম্পর্কে সচেতনই বা কত জন? এ নিয়ে সচেতনতা থাকলে কি আর এক দিনে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি লিটার পরিশোধিত জল খরচ হত শুধু রং ধোয়ার জন্য? প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy