Advertisement
১২ অক্টোবর ২০২৪
Junior Doctors' Movement

ধর্মতলায় গাড়িতে বসেই মুষ্টিবদ্ধ হাতে প্রতিবাদের স্বর, শরীর সায় না দিলেও অটুট মনোবল সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধের

শনিবার জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন অষ্টম দিনে পড়ল। তাঁদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে প্রচুর সাধারণ মানুষও শামিল হয়েছেন। আট থেকে আশি সকলকেই দেখা গিয়েছে অনশনমঞ্চের সামনে।

শনিবার সকালে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনমঞ্চের অদূরে গাড়ির ভিতর থেকেই মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে প্রতিবাদ দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের।

শনিবার সকালে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনমঞ্চের অদূরে গাড়ির ভিতর থেকেই মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে প্রতিবাদ দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:৫৬
Share: Save:

ধর্মতলার সামনে থেকেই জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন নন। রোগী, আমজনতা, ডাক্তার, নার্স— সকলেই যে এক পক্ষ, তা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। পুজোর ক’টা দিন ধর্মতলার অনশনমঞ্চের সামনে যে ছবিটি ফুটে উঠল, তাতে দৃশ্যত সেটিই যেন বার বার ধরা দিল।

দশমীর সকাল। শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় তখন প্রচুর মানুষের ভিড়। কেউ এসেছেন অনশনমঞ্চে। কেউ এসেছেন শহরতলি বা মফস্সল থেকে কলকাতার ঠাকুর দেখতে। এরই মধ্যে অনশনমঞ্চের অদূরেই রাস্তার ধারে একটি ছোট চার চাকার গাড়ি দাঁড়িয়ে। গাড়ির সামনের জানলার কাচ খোলা। চালকের আসনে বসে রয়েছেন সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ। গায়ে সাদাটে ফতুয়া। গাড়ির পাশ দিয়ে পথচলতি কাউকে এগিয়ে যেতে দেখলেই হঠাৎ করে জানালা দিয়ে মুখ বার করছেন। সঙ্গে বেরিয়ে আসছে মুষ্টিবদ্ধ হাত। গলা খুলে স্লোগান দিচ্ছেন, “জাস্টিস ফর আরজি কর।’’ গাড়ির পাশ দিয়ে ছোট-বড় যিনিই যাচ্ছেন, প্রত্যেকের উদ্দেশেই একই ভাবে স্লোগান দিচ্ছেন তিনি।

রাস্তার ধার দিয়ে যেতে যেতে গাড়ির ভিতর থেকে আচমকা এমন স্লোগান ভেসে আসায় কম-বেশি সকলেই দৃশ্যত চমকে উঠছেন। কেউ কেউ পাশ ফিরে তাকাচ্ছেন বৃদ্ধের দিকে। তার পর আবার এগিয়ে যাচ্ছেন নিজের গন্তব্যের দিকে। প্রৌঢ়ের নাম দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। বাড়ি সল্টলেকে। সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের অধ্যাপক ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। বছর বাহাত্তরের দেবব্রতের হাঁটুতে সমস্যা। ভাল করে হাঁটতে পারেন না। কিন্তু নিজের মধ্যে থাকা প্রতিবাদের স্বরকে দমাতে দেননি। বৃদ্ধের স্ত্রী এবং পুত্র উভয়েই পেশায় চিকিৎসক। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই তিনি এসেছেন ধর্মতলার অনশনমঞ্চের সামনে। গাড়ি একটু দূরে থামানো। স্ত্রী-পুত্র গিয়েছেন অনশনমঞ্চে। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে সংহতির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা।

আর বৃদ্ধ দেবব্রত গাড়িতে বসেই সাধারণ মানুষকে আন্দোলনের সঙ্গে জুড়তে চেয়ে স্লোগান তুলে যাচ্ছেন ক্ষণে ক্ষণে। গাড়ির পাশ দিয়ে যিনিই যাচ্ছেন, তাঁর উদ্দেশে স্লোগান তুলছেন। তিনি বলেন, “এ লড়াইয়ের একদম শেষ দেখে ছাড়ব। আট থেকে আশি সকলেই শামিল হয়েছি।” বৃদ্ধ জানালেন, পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রতি দিনই অনশনমঞ্চের সামনে আসেন। তাঁর কথায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠার মতো মানসিক স্থিতিতে নেই তিনি। বললেন, “পুজোয় মেতে ওঠার কোনও স্পৃহা আমার নেই। বরং, প্রতিবাদের বজ্রমুষ্টি রইল।” তবে পুজোর মরসুমে ছোট ব্যবসায়ীদের যে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, সেটি নিয়েও উৎকণ্ঠায় দেবব্রত।

দু’মাসের উপর হয়ে গেল বিচারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। দু’দফায় কর্মবিরতির পর ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান। তার পর সেই অবস্থানমঞ্চ রূপ নিয়েছে অনশনমঞ্চের। শনিবার অনশনের অষ্টম দিন। পুজোর দিনগুলিতেও সমানে চলেছে প্রতিবাদ, আন্দোলন। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে সংহতির বার্তা নিয়ে পাশে থেকেছেন সিনিয়র ডাক্তারেরা। অনেক চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যেরাও শামিল হয়েছেন আন্দোলনে। নাগরিক সমাজেরও থেকেও টানা সমর্থন পেয়েছেন তাঁরা। দশমীর সকালে ধর্মতলায় অনশনমঞ্চের কাছে এই দৃশ্য আবার যেন সেটিই ফুটিয়ে তুলল।

অন্য বিষয়গুলি:

Junior Doctors RG Kar Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE