জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে এ বার চিঠি দিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স-এর তরফে তাঁদের বিভিন্ন দাবির কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার যে ইমেল পাঠানো হয়েছিল, তারই জবাবি ইমেলে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষবায় ‘স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে’ অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
অন্য দিকে, স্বাস্থ্যভবনের তরফে শুক্রবার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জুনিয়র ডাক্তারের দাবির তালিকায় থাকা বিভিন্ন কাজের খতিয়ান দেওয়া হয়েছে। অনশনের জেরে চাপের মুখে পড়েই স্বাস্থ্যভবনের এই পদক্ষেপ বলে দাবি আন্দোলনকারীদের একাংশের। দেড় পাতার ওই বিবৃতি জানাচ্ছে, চিকিৎসক এবং চিকিৎসাকর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ জুড়ে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। লেখা হয়েছে, ‘‘আমরা মোট ৭০৫১ট সিসিটিভি, ৮৯৩টি নতুন ডিউটি রুম এবং ৭৭৮টি ওয়াশরুম তৈরি করছি। পাশাপাশি, যথাযথ আলোর ব্যবস্থা, অ্যালার্ম সিস্টেম এবং বায়োমেট্রিক অ্যাক্সেস কন্ট্রোল রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালগুলিতে বসানো হচ্ছে।’’
রাজ্য সরকার শুধুমাত্র মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এই প্রকল্পগুলির জন্য ১১৩ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করেছে বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। আরজি কর ছাড়া অন্য হাসপাতালগুলিতে কাজ ৯০ শতাংশ শেষ। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে বলেও আশাবাদী স্বাস্থ্যভবন। সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থার থেকে আরজি করে কাজ চালুর জন্য প্রয়োজনীয় এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) পাওয়ার পরে মাত্র দু’দিন হল আরজি করে কাজ শুরু হয়েছে বলে ওই বিবৃতি জানাচ্ছে। হাসপাতালগুলিতে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১১১৩ জন মহিলা পুলিশকর্মী নিয়োগের কথাও জানিয়েছে স্বাস্থ্যভবন।
আরও পড়ুন:
গত দু’মাস ধরেই আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য। আঙুল উঠেছে রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশার দিকেও। প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। বুধবার রাতে মুখ্যসচিবের সঙ্গে স্বাস্থ্যভবনে বৈঠকে বসেছিলেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি বলেই দাবি তাঁদের। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সরকার নতুন কিছু বলছে না। শুধু মৌখিক আশ্বাস দিয়ে অনশন তুলে নেওয়ার কথা বলছে। যদিও অনশন যে এ ভাবে উঠবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
আরও পড়ুন:
১০ দফা দাবিতে শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ধর্মতলায় আমরণ অনশন শুরু করেন কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের ছ’জন জুনিয়র ডাক্তার। স্নিগ্ধা ছাড়াও সেই তালিকায় রয়েছেন তনয়া পাঁজা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায় এবং পুলস্ত্য আচার্য। রবিবার অনশনে যোগ দিয়েছিলেন আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতোও। বৃহস্পতিবার রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় অনশনরত অনিকেতকে আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের অপসারণ। ঘটনাচক্রে, শুক্রবার মুখ্যসচিব পন্থের অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধের পাশাপাশি কাজের ফিরিস্তি দিল নারায়ণস্বরূপের দফতর।
আরও পড়ুন:
এর আগে বৃহস্পতিবার হেয়ার স্ট্রিট থানা থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তাতে লেখা হয়, ‘‘আপনারা গত ৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় অনশন করছেন। জোর করে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মঞ্চ বানিয়েছেন। আপনাদের সামনে যে বোর্ড রাখা হয়েছে, তা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, আপনাদের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বুধবার আমরা আপনাদের অনুরোধ করেছিলাম, কলকাতা পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্সের সাহায্য নিতে। কিন্তু আপনারা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমরা রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে অনুরোধ করেছি, আপনাদের জন্য এক দল চিকিৎসক মোতায়েন করা হোক। আমাদের অনুরোধ, আপনারা এই জায়গা ছাড়ুন এবং চিকিৎসার সাহায্য গ্রহণ করুন। সমস্ত প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।’’ এ বার অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিলেন মুখ্যসচিব।