Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Nimta

‘মা রোজ মারে’, থানায় এসে বলল ছ’বছরের মেয়ে

সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে নিমতায়। শুধু তা-ই নয়, মেয়েটি পুলিশকে তার স্কুলের আরও এক শিক্ষিকার নাম বলে যিনি স্কুলের মিড-ডে মিলের স্বর্ণজয়ন্তী গোষ্ঠীর সম্পাদক।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০ ০৩:২২
Share: Save:

থানার আশপাশে বহু ক্ষণ ধরে ঘুরছিল বছর ছয়েকের বাচ্চা মেয়েটি। তার থেকেও ছোট একটি ছেলের হাত ধরে। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, ছেলেটি তার ভাই। মেয়েটির মুখে মারধরের চিহ্ন স্পষ্ট। মারের চোটে একটি চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। লকডাউনে যখন সকলকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে, সেই সময়ে এ ভাবে দু’টি শিশুকে রাস্তায় ঘুরতে দেখে তাদের থানায় দিয়ে এসেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। তখনই মেয়েটি পুলিশকে অভিযোগে জানায়, ‘‘মা আমাকে আর ভাইকে রোজ মারে। আমি স্কুলের বড়দির কাছে যেতে চাই। দিদিমণির কাছে থাকলে বেঁচে যাব। কিন্তু মায়ের কাছে যাব না।’’

সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে নিমতায়। শুধু তা-ই নয়, মেয়েটি পুলিশকে তার স্কুলের আরও এক শিক্ষিকার নাম বলে যিনি স্কুলের মিড-ডে মিলের স্বর্ণজয়ন্তী গোষ্ঠীর সম্পাদক। জানায়, তাঁর বাড়িতে দিয়ে এলেও সে বড়দির কাছে পৌঁছে যাবে। শিশুটির কথা যাচাই করতে থানা থেকে ডেকে পাঠানো হয় মিড-ডে মিলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকা সোমা হালদারকে। খবর পাঠানো হয় নিমতার নারায়ণপল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মানসী মণ্ডলকেও। মানসীদেবী জানান, মেয়েটি তাঁদের স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। আগে তারা স্কুল সংলগ্ন একটি বাড়িতে ভাড়া থাকত। কিন্তু লকডাউন শুরুর ঠিক মুখে সেই বাড়ি ছেড়ে বিরাটিতে চলে যায়। তার পরেও ওই মেয়েটি এক-দু’দিন স্কুলে এসেছিল। তার পরে আর আসেনি। এ দিকে, লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় ছাত্রীটির খোঁজও নিতে পারেননি শিক্ষিকারা।

প্রধান শিক্ষিকা জানান, লকডাউনের দ্বিতীয় দফায় মেয়েটি যে তার ভাইকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসবে, ভাবতে পারেননি তিনি। তিনি জানান, নিমতা থানায় গেলে পুলিশ অফিসারদের সামনেই একরত্তি শিশুটি তাঁর কাছে থাকার জন্য কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। এ দিকে, মায়ের বিরুদ্ধে মেয়ে অভিযোগ করায় ওই মহিলাকেও ডেকে পাঠায় পুলিশ। মায়ের দাবি, তিনি ঘরে তালা দিয়ে ছেলেমেয়েকে বাইরে রেখে রেশন আনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ের চোখ-মুখে মারধরের দাগ এল কোথা থেকে, জানাতে পারেননি তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, প্রথম দিন বাচ্চা দু’টিকে সোমাদেবীর কাছে রাখা হয়েছিল রাতটুকু কাটানোর জন্য। পরের দিন পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে আসে। মেয়েটির বয়ানের ভিত্তিতে অভিযোগ দায়ের করা হয় মায়ের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: করোনা-ধাক্কা যৌনকর্মীদের সমবায়েও

আরও পড়ুন: পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি ১০ দি‌নেও, আশঙ্কায় পরিবার

আপাতত জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির নির্দেশে মেয়েটিকে হোমে পাঠিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা চাইল্ড লাইন। চাইল্ড লাইন সূত্র এবং প্রধান শিক্ষিকা মানসীদেবী জানান, বাচ্চা দু’টির মাকে থানায় ডাকা হলে ছেলেটি মায়ের কাছে চলে যায়। কিন্তু মেয়েটি জানিয়ে দেয়, সে কিছুতেই মায়ের কাছে যাবে না। থাকবে প্রধান শিক্ষিকার কাছেই। কিন্তু আইনত তা সম্ভব না-হওয়ায় শিশুটির সেই আবেদন রাখতে পারেনি থানা, চাইল্ড লাইন বা জেলা শিশু কল্যাণ সমিতি।

চাইল্ড লাইনের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, লকডাউনের সময়ে শিশু নিগ্রহের ঘটনা যে বাড়বে, তেমন আশঙ্কা তাঁরা আগে থেকেই করেছিলেন। কিন্তু সেটা যে নিজের বাড়ি, বিশেষত মায়ের হাতে হবে, এতটাও অনুমান করা যায়নি। রাজ্যের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী জানান, লকডাউনের মধ্যে এ ধরনের অভিযোগ তাঁদের কাছে এটাই প্রথম। তিনি বলেন, ‘‘শিশুটি প্রধান শিক্ষিকার খুব কাছের হওয়ায় তার মাথায় এসেছে, মা যখন মারধর করছে, তখন ওই শিক্ষিকার কাছে গেলে সে ভাল থাকবে।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Nimta Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy