কর্মকাণ্ড: বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনে এখনও চলছে মেট্রোর কাজ। চার বছর পরেও ঘরছাড়া ভাঙা বাড়িগুলির বাসিন্দারা। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
কেটে গিয়েছে চার বছর। এখনও নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারলেন না তাঁরা। কবে ফিরবেন, তা-ও ঘোরতর অনিশ্চয়তার আঁধারে। ভাড়ার ফ্ল্যাটে বসে এমনটাই জানালেন বৌবাজারে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ-বিপর্যয়ের জেরে সেকরাপাড়া লেন এবং দুর্গা পিতুরি লেনের ঘরছাড়া বাসিন্দারা। তাঁরা জানালেন, চার বছর আগে এই ৩১ অগস্টের অভিশপ্ত রাতেই বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল তাঁদের। ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, দু’বছর পরে তাঁরা নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দুই নয়, কেটে গিয়েছে চার বছর। এখনও বাড়ি ফেরার বিষয়ে নিশ্চিত কোনও আশ্বাসবাক্য শুনতে পাননি তাঁরা।
দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা সঞ্জয় বসাক বললেন, ‘‘সেই রাতে আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলাম। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মেয়ে ফোন করে বলল, ‘বাবা, তুমি এখনই বাড়ি এসো। বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাড়ি কাঁপছে। দরজা জানলা বন্ধ করতে পারছি না।’ তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরে আসি।’’ সঞ্জয় জানান, ফিরে এসে তিনি দেখেন, বাড়ির স্তম্ভ নড়ে গিয়েছে। সেই রাতেই তাঁদের বাড়ি ছাড়তে হয়। সঞ্জয় এখন থাকেন বেলেঘাটায় একটি ভাড়ার ফ্ল্যাটে। তিনি বলেন, ‘‘দুর্গা পিতুরি লেনে আমাদের বাড়ির নামই ছিল ‘ঝুলন বাড়ি’। খুব বড় করে ঝুলন হত। কৃষ্ণলীলা দেখানো হত ঝুলনে। কত মানুষ আসতেন সেই ঝুলন দেখতে। এখন সবই স্মৃতি। আর কি কোনও দিন বাড়ি ফিরতে পারব?’’
দুর্গা পিতুরি লেনের আর এক বাসিন্দা সোনাক্ষী সরকার তাঁর পরিবারের সঙ্গে থাকেন বেলেঘাটার একটি ছোট ফ্ল্যাটে। তিনি বললেন, ‘‘প্রথম দু’বছর ৩১ অগস্টের দিন নিজের পাড়া দেখতে যেতাম। বাড়ি তৈরির কাজের অগ্রগতি হয়েছে কি না, দেখে আসতাম। কিন্তু কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় গত দু’বছর ধরে আর যাই না। গেলে মনখারাপ হয়ে যায়। মেট্রো কর্তৃপক্ষের মতে, আমাদের নাকি কোনও অসুবিধা হচ্ছে না ভাড়া বাড়িতে। ওঁদের বলেছি, ভিটেছাড়া হয়ে বছরের পর বছর ভাড়া বাড়িতে থাকা যে কত কষ্টের, তা আমরাই জানি।’’
যদুনাথ দে রোডের ভাড়া বাড়িতে আছেন সঞ্জয় সেন। তাঁর কথায়, ‘‘ঘটনার পরে ২০১৯ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাড়ি ফেরত পাওয়া যাবে। ২০২১-এ মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানান, করোনার জন্য কাজের অগ্রগতি হয়নি। ২০২৩-এ নাকি বাড়ি পাব। কিন্তু কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় ওঁরা বললেন, বাড়ি মিলবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ তা লিখিতও দিলেন। কিন্তু এখন আবার শুনছি, ২০২৭ সালের আগে পুরনো পাড়ায় নিজের বাড়িতে ফেরার কোনও সম্ভাবনা নেই। ২০২৭ সালেও কি নিজের বাড়িতে ফিরতে পারব?’’ মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বৌবাজারের ওই এলাকায় মাটির নীচের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন আর খোঁড়াখুঁড়ির বিষয় নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি তৈরির কাজ ধাপে ধাপে এগোচ্ছে।’’
নিজেদের ভিটে-মাটি ফেরত পাওয়ার দাবি নিয়ে সেকরাপাড়া লেন ও দুর্গা পিতুরি লেনের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির বাসিন্দারা ‘বৌবাজার মাটি ও মানবকল্যাণ সোসাইটি’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। আজ, বৃহস্পতিবার তাঁদের বাড়ি ভাঙার চার বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি মোমবাতি মিছিল করা হবে। হবে স্মরণসভাও। কারণ, ক্ষতিগ্রস্তেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের পাড়ার বেশ কয়েক জন বয়স্ক মানুষ গত চার বছরে মারা গিয়েছেন। যাঁরা আর নিজের বাড়িতে ফিরতে পারলেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy