মহেশতলা চিংড়িপোতায় বাজি তৈরি (বাঁ দিকে)। সেখানেই দোকানে অবাধে বিকোচ্ছে শব্দবাজি। ছবি: অরুণ লোধ
দাগি আসামি চিহ্নিত করে পুলিশ। এ বার সেই পথে হেঁটে শব্দতাণ্ডবের দৌরাত্ম্যের নিরিখে আসন্ন কালীপুজোর আগে ‘দাগি থানা এলাকা’ চিহ্নিত করল পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’।
গত কয়েক বছরে শব্দবাজি ফাটানোর নিরিখে ওই এলাকাগুলি থেকেই সর্বাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছিল সংশ্লিষ্ট সংগঠনের কন্ট্রোল রুমে। কালীপুজোর সময়ে শব্দবাজি, মাইক, ডিজে-সহ শব্দদূষণের বিভিন্ন উৎসের ঠেলায় কান ঝালাপালা হওয়া নিরুপায় বাসিন্দারা ওই কন্ট্রোল রুমে ফোন করে নিজেদের অসহায়তার কথা জানিয়েছিলেন। এ বার ওই সব ‘দাগি থানা এলাকা’ নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে রাজ্য প্রশাসনের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবুজ মঞ্চ। যাতে আগেভাগেই ওই সব এলাকায় বাড়তি নজরদারি চালানো যায়। শুধু তা-ই নয়, বরাবরের মতো এ বারও সংগঠনের একটি বিশেষ দল শহর জুড়ে ঘুরবে। শহরের হাসপাতাল এলাকাগুলি-সহ ‘সাইলেন্ট জ়োন’গুলিতে বিশেষ নজর দেওয়া হবে বলে সংগঠন সূত্রের খবর।
সংগঠনের সম্পাদক নব দত্ত বলেন, ‘‘ধারাবাহিক ভাবে কলকাতা পুলিশের কয়েকটি থানা এলাকায় কালীপুজোর সময়ে শব্দদানবের তাণ্ডব চলে। আমাদের সমীক্ষায় তেমনটাই উঠে এসেছে। সেই এলাকাগুলি চিহ্নিত করে আগাম সতর্কতার জন্য আমরা ডিজি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে চিঠি দিচ্ছি।’’
সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, বাজি ফাটানো, ডিজে বাজানো-সহ শব্দমাত্রা লঙ্ঘন করার ক্ষেত্রে দক্ষিণ কলকাতার অবস্থা শোচনীয়। শুধুমাত্র গত বছরই নয়, লাগাতার ওই এলাকাগুলি থেকে শব্দমাত্রা লঙ্ঘনের অভিযোগ সব থেকে বেশি দায়ের হয়েছে বলে সংগঠন সূত্রের খবর। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, কলকাতা পুলিশের মোট ২২টি থানা ভীষণ ভাবে ‘শব্দতাণ্ডব প্রবণ’। অর্থাৎ, শহরের প্রায় ৩০ শতাংশ থানাই কালীপুজোয় শব্দদানবের ‘শিকার’! এর মধ্যে উত্তর কলকাতার আটটি থানা এবং দক্ষিণ কলকাতার ১৪টি থানা রয়েছে বলে জানাচ্ছে সমীক্ষা। বিশেষ করে কসবা ও গরফা থানা এলাকা শব্দবাজি ফাটানোর ক্ষেত্রে ‘ব্ল্যাক স্পট’, জানাচ্ছেন সংগঠনের সদস্যেরা। সংগঠনের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত পবন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট কয়েকটি থানা এলাকা থেকেই গত কয়েক বছর ধরে আমরা অভিযোগ পাচ্ছি। সেগুলিকেই আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’’
লাগাতার অভিযোগ দায়ের হওয়া সত্ত্বেও কেন এই বিষয়ে কোনও নিয়ন্ত্রণ আনা যাচ্ছে না, তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘শব্দদূষণের ব্যাপার অনেকটা এমন হয়ে গিয়েছে যে, রোগের উৎস জানা গিয়েছে, অথচ ওষুধই প্রয়োগ করা হচ্ছে না বা শব্দমাত্রা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে বারবার রোগ নিয়ে শুধু আলোচনাই চলছে। কিন্তু নিরাময় হচ্ছে না।’’ আর এক পরিবেশকর্মী অজয় মিত্তল বলেন, ‘‘শব্দবাজি রুখতে যা যা করা দরকার, তাতে প্রতিবারই খামতি থাকছে। পুরো বিষয়টাই শুধু প্রচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে।’’
পরিবেশকর্মীদের একাংশ এ-ও বলছেন, বারবার অভিযোগ আসা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ যে করা হচ্ছে না, তার কারণই হল রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। বরং পুরো বিষয়ে পরোক্ষ ভাবে রাজনৈতিক মদত রয়েছে। অনেকের কাছে বাজি ফাটানোর বিষয়টা শুধুই কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। কিন্তু তার ফলে দীর্ঘকালীন যে ক্ষতি হয়, সে দিকে কেউই নজর দেন না! নববাবুর কথায়, ‘‘বাড়িতে রোগী, শিশু বা পোষ্য থাকলে শব্দবাজিতে তাঁদের কী অসুবিধা হতে পারে, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে শব্দতাণ্ডব চলতেই থাকে!’’ কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘শব্দদূষণ রুখতে ইতিমধ্যেই থানাগুলিকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী যা ব্যবস্থা নেওয়ার, নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy