একান্তই যদি আসতেই হয়, তা হলে হাতে সময় নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোনো উচিত। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আপনার কি বৃহস্পতিবার কলকাতায় আসার কোনও পরিকল্পনা রয়েছে? শহরের রাস্তায় বেরোতেই হবে? মনে রাখবেন, বৃহস্পতিবার ২১ জুলাই। ধর্মতলা চত্বরে তৃণমূলের সমাবেশ রয়েছে। সেই সমাবেশে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর লোক সমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে। হাওড়া, শিয়ালদহ স্টেশন তো বটেই, শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল করে তৃণমূল সমর্থকদের আসার কথা রয়েছে মধ্য কলকাতায়। মনে রাখবেন, শহরের অনেক রাস্তাতেই যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত, অনেক বাস রুট বন্ধ থাকছে বৃহস্পতিবার। এমনকি, মেট্রো পরিষেবাও বাড়তি নয়। সপ্তাহের অন্য দিনের মতোই মেট্রো পরিষেবা থাকবে। ফলে অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন না থাকলে কলকাতায় না আসাই ভাল।
তবে একান্তই যদি আসতেই হয়, তা হলে হাতে সময় নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোনো উচিত। সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে যাওয়া উচিত ধর্মতলা এলাকাকে। শহরের মধ্যে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও মাথায় রাখতে হবে কোন কোন রাস্তা বন্ধ বা কোন কোন পথে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। কারণ, বৃহস্পতিবার শহরের বহু রাস্তাই যান চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়তে পারে ভিড়ের কারণে।
করোনা কালে দু’বছর বন্ধ ছিল তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ। তার আগের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, সমাবেশের দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ জন আসতে থাকেন শহরে। দূরের জেলার লোকজন দিনকয়েক আগেই শহরে চলে আসেন। দিনের দিন যাঁরা আসেন তাঁরা শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশন থেকে মিছিল করে ধর্মতলায় আসেন। ফলে শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলামুখী এসএন ব্যানার্জি রোড রীতিমতো অবরুদ্ধ থাকে। বন্ধ থাকে হাওড়া স্টেশন থেকে শহরমুখী সমস্ত পথ। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা। তবে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনের মঞ্চ এবং সংলগ্ন এলাকায় সকাল ৭টা থেকেই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের যাতায়াত শুরু হয়ে যাবে। দুপুরের দিকে ওই মঞ্চে ভাষণ দেওয়ার কথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
কলকাতা পুলিশ আগেই জানিয়েছে, আর্মহার্স্ট স্ট্রিট, বিধান সরণি (কে সি সেন স্ট্রিট থেকে বিবেকানন্দ রোড), কলেজ স্ট্রিট, ব্রাবোর্ন রোড, স্ট্র্যান্ড রোড (হেয়ার স্ট্রিট থেকে রাজা উডমান্ট স্ট্রিট), বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, নিউ সিআইটি রোড, রবীন্দ্র সরণি (বি কে পাল এভিনিউ থেকে লালবাজার স্ট্রিট) দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ হবে। ফলে কলকাতায় এলেও এই সমস্ত রাস্তা সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে যাওয়া উচিত। তৃণমূলের সভা শেষে কর্মীরা ফিরবেন। কলকাতা পুলিশ তাই বৃহস্পতিবার ভোর ৪টে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা ১৭ ঘণ্টা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধই থাকবে। তার মধ্যে লেনিন সরণি, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ রয়েছে। কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মধ্য কলকাতার বেশির ভাগ রাস্তাতেই যানবাহন সচল থাকবে না। এটাও আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।
বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকবে কলকাতার একাধিক বাস রুট। কারণ, রাস্তাঘাটে দিনের একটা বড় সময় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। একই সঙ্গে সমাবেশ উপলক্ষে কর্মী-সমর্থকদের জন্য প্রচুর বাস তুলেও নেওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে। শহরের বাইরে থেকেও ঢুকে পড়বে প্রচুর বাস। ফলে আপনি যদি ভেবে থাকেন, বাসে করে বাইরে থেকে শহরে আসবেন বা শহরের ভিতরে যাতায়াত করবেন, সে চেষ্টা না করাই ভাল। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এলাকা থেকে হেস্টিংস মোড় অনেক রাস্তাতেই কোনও গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না বলেও কলকাতা পুলিশের পক্ষে জানানো হয়েছে। এই ১৭ ঘণ্টা কোনও রাস্তার উপরে ট্রামও দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না। সকালে তৃণমূলকর্মীদের আসা এবং দুপুরের পরে ফিরে যাওয়া, এর ফলে রাস্তাঘাট গোটা দিনই ভিড়ে ভারাক্রান্ত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। পুলিশের এই যান নিয়ন্ত্রণের বার্তা এবং রাস্তাঘাটের ভিড়ের কথা মাথায় রেখে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও শহরে যাতায়াত না করাই ভাল। অ্যাপ নির্ভর ক্যাবও ভিড়ের কারণে কতটা সচল থাকবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
শহরের ‘লাইফ লাইন’ মেট্রো পরিষেবা যদিও স্বাভাবিক থাকবে। তবে মেট্রো কর্তৃপক্ষ বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেও সপ্তাহের অন্যান্য দিনের মতোই ট্রেনের সংখ্যা একই রেখেছেন। বাড়তি কোনও মেট্রো চালানো হবে না রাজনৈতিক এই সভার কারণে। কিন্তু শহরের অন্যান্য দিনের তুলনায় ভিড়ের আধিক্য থাকবে বহু বহু গুণ। কিন্তু ট্রেনের সংখ্যা বেশি না থাকায় মেট্রোয় ভিড় প্রচণ্ড হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে খুব প্রয়োজন থাকলে মেট্রোয় সফর করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত ভিড়ের কথা মাথায় রাখবেন।
ভিড় ও যানজটের কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করেছে বেশ কিছু স্কুল। কিছু স্কুল জানিয়েছে, স্কুল খোলা থাকলেও কেউ চাইলে বাড়ি থেকে অনলাইনে ক্লাস করতে পারে। অর্থাৎ, ক্লাস হবে অনলাইন-অফলাইন পদ্ধতিতে। ডন বসকো (পার্ক সার্কাস) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পার্ক সার্কাস সাতমাথার মোড়ে তীব্র যানজট হয় অন্যান্য বার। বাড়ি ফিরতে অসুবিধায় পড়ে ছাত্রেরা। তাই স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মহাদেবী বিড়লা ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমিতেও ক্লাস হবে অনলাইনে। ছুটি থাকছে গার্ডেন হাই, লরেটো, ক্যালকাটা গার্লস, ডিপিএস (রুবি পার্ক)। শ্রীশিক্ষায়তনের পড়ুয়ারা অনলাইনে ক্লাস করতে পারবে। সাউথ পয়েন্ট স্কুলও অনলাইনে ক্লাস করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মর্ডান হাইস্কুল ফর গার্লস। লা মার্টিনিয়র যদিও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে সরকারি সব স্কুল খোলা। কাজেই আপনাকে জেনে নিতে হবে, আপনার সন্তানের স্কুল খোলা না কি অনলাইনে ক্লাস করা যাবে। ছুটি থাকলে তো কোনও অসুবিধাই নেই, তবে স্কুল খোলা থাকলে অনলাইনে ক্লাস করাই ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy