৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টা থেকে ১ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় পিজির ট্রমা কেয়ারে নিয়ে আসা হয়েছিল পথ দুর্ঘটনায় জখম ১০৩ জনকে। ফাইল ছবি।
বর্ষবরণের রাত থেকে নতুন বছরের প্রথম রাত। ২৪ ঘণ্টায় দুর্ঘটনার কবলে ১৬৫ জন!
নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উল্লাসে দু’দিন ধরে বিধি ভেঙে বেপরোয়া গতির শিকার কলকাতা থেকে জেলা। ফলে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় পথ দুর্ঘটনায় জখম এত জনকে আনতে হল এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেলেন চিকিৎসকেরা। নতুন বছরের প্রথম দিনের সকালে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে বুঝে ট্রমা কেয়ারের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা ওয়ার্ড চালু করতে হয়। অন্য ওয়ার্ড থেকে নিয়ে আসতে হয় ভেন্টিলেটর।
অতিমারির দু’বছর পরে বর্ষবরণে বিধি ভাঙার অভিযোগ যে মোটেও অমূলক নয়, তার প্রমাণ রাজ্যের মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার। সূত্রের খবর, ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টা থেকে ১ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় পিজির ট্রমা কেয়ারে নিয়ে আসা হয়েছিল পথ দুর্ঘটনায় জখম ১০৩ জনকে! তাঁদের মধ্যে ২৫ জনকে ভর্তি করতে হয়েছে। এ দিন রাত ৮টা পর্যন্ত এসেছেন আরও ৬২ জন। যাঁদের সকলেই পথ দুর্ঘটনায় জখম। এঁদের মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ১৫ জন। পুলিশি সূত্রের খবর, যত জন রোগী এসেছেন, তাঁদের বড় অংশের দুর্ঘটনা ঘটেছে কলকাতা পুলিশ এলাকায়। এ ছাড়া হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, এমনকি বর্ধমান-সহ অন্য জেলা থেকেও এসেছেন আহতেরা।
পরিসংখ্যান বলছে, বর্ষশেষের রাত থেকে নতুন বছরের প্রথম দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ এলাকা থেকে ৩৮ জনকে (১০৩ জনের মধ্যে) ট্রমা কেয়ারে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে ভর্তি হন তিন জন (২৫ জনের মধ্যে)। আবার নতুন বছরের রাত ৮টা পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ এলাকা থেকে ১৫ জনকে (৬২ জনের মধ্যে) আনা হলে ভর্তি করা হয় তিন জনকে (১৫ জনের মধ্যে)। পুলিশ ও চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আহতদের ৮০ শতাংশ বাইকচালক ও আরোহী এবং ৭০ শতাংশ পুরুষ। প্রায় প্রত্যেকেরই বয়স চল্লিশের কোঠায়। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘হাসপাতালে আসা দুর্ঘটনাগ্রস্তদের প্রায় সবাই চালক ও সওয়ারি। হিমশিম খেতে হয়েছে।’’ যত জন ২৪ ঘণ্টায় এসেছেন, তাঁদের মধ্যে এক জনকেই মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আহতদের হাত, পা এবং শরীরের অন্যান্য জায়গার হাড় ভেঙেছে। কারও হাড় ভেঙে বেরিয়ে এসেছে। অনেকেরই মাথায় চোট লেগেছে। সূত্রের খবর, ২৪ ঘণ্টায় অস্থি-শল্য বিভাগে ১০টি, স্নায়ু-শল্য বিভাগে ১০টি এবং শল্য, নাক-কান-গলা বিভাগ মিলিয়ে ২৫টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। ট্রমা কেয়ারে রেড জ়োন, ইয়েলো জ়োন, সিসিইউ মিলিয়ে ৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। সেগুলিতে রোগীর ভিড় বাড়তে থাকায় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা ওয়ার্ডও খুলে দিতে হয়। সেখানে রয়েছে আরও ২৫টি শয্যা।
বর্ষবরণের রাতে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কায় ২৯ ডিসেম্বর বৈঠক করেন পিজি কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত মতো, ট্রমা কেয়ারে সাধারণ ভাবে ২০-২৫ জন চিকিৎসকের সঙ্গে আরও ১২ জন চিকিৎসককে যুক্ত করা হয়। স্নায়ু-শল্য, অস্থি-শল্য এবং শল্য বিভাগের এক জন করে শিক্ষক-চিকিৎসকও নির্দিষ্ট সময় অন্তর রাউন্ড দিয়েছেন।
রবিবার রাতে পরিস্থিতি দেখতে ট্রমা কেয়ারে যান হাসপাতালের আধিকারিকেরা। জানা যাচ্ছে, ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে ট্রমা কেয়ারে ৬টি ভেন্টিলেটর (মোট রয়েছে ২৫টি) ফাঁকা ছিল। এ দিন সকালে আরও যন্ত্রের প্রয়োজন হওয়ায় মেন ব্লক থেকে তিনটি আনা হয়। দুর্ঘটনায় আহত ন’জন ট্রমা কেয়ারে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘বর্ষবরণে একাংশ কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন, এটাই তার প্রমাণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy