সাড়ে তিন মাস আগে বহিরাগতদের তাণ্ডবে মাথা বাঁচাতে ফাইলপত্রকে ঢাল করে টেবিলের তলায় ঢুকে কলকাতা পুলিশের মুখে কালি মাখিয়ে দিয়েছিল আলিপুর থানার পুলিশ। সেই থানার ওসি বুদ্ধদেব কুণ্ডুকে অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হল। থানায় ঢুকে ভাঙচুরের সেই ঘটনায় আঙুল উঠেছিল শাসক দল তৃণমূলের দিকে। আর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ওই ওসি-র বিরুদ্ধে। তার পরেই বুদ্ধদেববাবুকে সরানোর দাবি ওঠে।
সোমবার বুদ্ধদেববাবুর সঙ্গেই কলকাতা পুলিশের আরও কয়েক জন ওসি এবং অতিরিক্ত ওসি-কে বদলি করা হয়েছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। লালবাজারের কর্তাদের দাবি, অন্যদের মতো বুদ্ধদেববাবুকেও রুটিনমাফিক বদলি করা হয়েছে। যদিও পুলিশেরই একাংশ মনে করছেন, গত ১৪ নভেম্বর আলিপুর থানায় হামলার ঘটনার জেরেই ওই ওসি-কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ওসি এবং অতিরিক্ত ওসি-দের বদলির তালিকার মধ্যে তাঁর অপসারণকে অন্তর্ভুক্ত করাটা আসলে বিষয়টিকে স্বাভাবিকতার মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা।
১৪ নভেম্বর সরকারি জমিতে আবাসন তৈরিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ বেধেছিল। তার পরেই ক্ষিপ্ত জনতা আলিপুর থানায় ঢুকে ভাঙচুর চালায়। তৃণমূলের আমলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের হাতে বারে বারেই আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। থানায় চড়াও হওয়ার ঘটনাও বিরল নয়। তবু খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাসতালুকেই (আলিপুর মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরের অন্তর্ভুক্ত) এমন ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছিলেন প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের অনেকেই। যে-কলকাতা পুলিশের প্রতাপের পরিচয় দিতে একদা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের তুলনা টানা হত, সেই পুলিশ টেবিলের তলায় সেঁধিয়ে যাওয়ায় ধিক্কার ওঠে রাজ্য জুড়ে।
অভিযোগ ওঠে, স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহার মদতেই থানায় হামলা চালানো হয়েছে। প্রতাপকে আড়াল করতে উঠেপড়ে লাগেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম। বুদ্ধদেববাবু বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। মূল অভিযুক্ত প্রতাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও চেষ্টাই করেনি পুলিশ। উল্টে পরিস্থিতি কী ভাবে সামাল দেওয়া হবে, তা ঠিক করতে প্রতাপের সঙ্গেই থানায় বৈঠকে বসেন কয়েক জন পুলিশকর্তারা। পরে লালবাজারের কর্তাদের হস্তক্ষেপে অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু ভুল ব্যক্তিকে গ্রেফতার করায় আদালত বুদ্ধদেববাবুকে ভর্ৎসনা করে।
সেই ঘটনার এত দিন পরে বুদ্ধদেববাবুকে ওই থানা থেকে কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চে সরানো হল। তাঁর জায়গায় এসেছেন চন্দন রায় মুখোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy