Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

বিয়ে রুখে দেওয়া মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চুপ পরিবার

বাড়ির দরজায় ঝোলানো ফুলের মালাগুলি এখনও তাজা। কিন্তু উৎসবের পরিবেশ বদলে গিয়েছে ধাপার বৈঁচতলার বাড়িতে। মেয়ে রয়েছে হোমে, অভিভাবকেরা হাজতে। আত্মীয়দের বদলে বাড়িতে আনাগোনা পুলিশ-সংবাদমাধ্যম-স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৪ ০১:০১
Share: Save:

বাড়ির দরজায় ঝোলানো ফুলের মালাগুলি এখনও তাজা। কিন্তু উৎসবের পরিবেশ বদলে গিয়েছে ধাপার বৈঁচতলার বাড়িতে। মেয়ে রয়েছে হোমে, অভিভাবকেরা হাজতে। আত্মীয়দের বদলে বাড়িতে আনাগোনা পুলিশ-সংবাদমাধ্যম-স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের।

দিন কয়েক আগেই উত্তর ২৪ পরগনার একটি ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল বাড়ির কিশোরী মেয়ের। ঠিক ছিল, শুক্রবারই চার হাত এক করে দেবেন অভিভাবকেরা। কিন্তু মেয়েটি তা চায়নি। বিয়ের আগের রাতে এক বান্ধবীর মোবাইল থেকে সে খবর দেয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায়। সেই সংস্থার কর্মী ও পুলিশ এসে বন্ধ করে দেয় বিয়ে। উদ্ধার করে মেয়েটিকে। গ্রেফতার করা হয় নাবালিকা পাত্রীর মা-বাবা-দাদাকে।

শনিবার সেই বাড়িতেই যান স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। সঙ্গে পুলিশ। তাঁরা দেখলেন, পাকা গাঁথনির বাড়ি। অ্যাসবেস্টসের চাল। তবে সামনের দরজা বন্ধ। আশপাশের বাড়ি থেকে উঁকি দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা।

বন্ধ দরজার সামনে ডাকাডাকি করতেই ভিতর থেকে বেরিয়ে এল বছর চোদ্দোর এক কিশোর। পুলিশ দেখে কিছুটা ভীত। ভিতরে ঢুকতেই পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা দেখলেন, থমথমে মুখে একটি ঘরে বসে ওই নাবালিকার বছর তেরোর ভাই। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এলেন এক মহিলা। ওই নাবালিকার বৌদি। পুলিশের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা পুরো ঘটনাটির বিবরণ জানতে চাইলে এ দিন অবশ্য তাঁরা বেশি তথ্য দিতে পারেননি। ওই নাবালিকার বৌদি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের জানান, কোথায় বিয়ে ঠিক হয়েছে, তাঁরা জানেন না। শুধু জানেন পাত্রের ফাস্ট ফুডের দোকান রয়েছে।

বাড়ির ভিতরে বিয়েবাড়ির আয়োজনও চোখে পড়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের। ঘরে নতুন খাট, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল। এ সবই যে যৌতুকের জন্য, তা স্বীকার করে নিয়েছেন কিশোরীর বাড়ির লোকেরা। সঙ্গে আরও জানিয়েছেন, নগদ ৫০ হাজার টাকা পণ হিসেবে পাত্রপক্ষকে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছিলেন। বরযাত্রী-সহ শ’দুয়েক লোক নিমন্ত্রিতও ছিলেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, মেয়েটির বাবার আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল নয়। বাবা-মা ও বড় ছেলে তিন জনেই হকারি করেন। তা সত্ত্বেও কষ্ট করে এত কিছু জোগাড় করেছিলেন তাঁরা। মেয়েটি বারংবারই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তাদের বলেছে, সে নবম শ্রেণিতে পড়ে। আরও পড়তে চায়। কিন্তু বাড়ির লোক মানছে না। তার এই আর্জির কথা স্বীকার করেছে পরিবারও। তা হলে জোর করলেন কেন?

মেয়েটির বৌদি বলেন, “ভাল পাত্র মিলেছিল। তাই শ্বশুর-শাশুড়ি সুযোগ ছাড়তে চাননি। মেয়ের আর্জি না শুনে জোর করেই বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।” কিন্তু মেয়েটি যে এমন করবে, তা ভাবতে পারেননি পরিবারের লোকেরা। তাঁরা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বান্ধবীদের সঙ্গে বসে মেহেন্দি পরেছিল সে। গল্পগুজবও করছিল। তার পরে হঠাৎই মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে উল্টো দিকের একটি বাড়িতে চলে যায়। আর তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাড়িতে হাজির হন পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তারা।

এ বার মেয়েকে পড়তে দেবেন?

উত্তর দিলেন না বৌদি। তবে তাঁর হাবভাবে স্পষ্টই বোঝা গেল, মেয়েকে ঘরে ফেরাবেন কি না, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন ঘুরছে তাঁদের মনে। ঘরে ফিরবে কি না, সেই প্রশ্ন হয়তো ঘুরপাক খাচ্ছে ওই কিশোরীর মনেও। শুক্রবারই তাকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোমে পাঠায় শিশুকল্যাণ সমিতি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রের খবর, হোমে গিয়ে তার আচরণে কোনও অস্বাভাবিকতা চোখে পড়েনি। বরং কিছুটা যেন স্বস্তিই দেখা গিয়েছে। খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক করেছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কো-অর্ডিনেটর দিলীপ বসু জানান, মেয়েটির অভিযোগ বাবার বিরুদ্ধে। তাই এখনই তাকে বাড়ি ফেরানো হচ্ছে না। পুলিশকে বলা হয়েছে, মেয়েটিকে ফের শিশুকল্যাণ সমিতির কাছে আনতে। সমিতি নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। তবে তার আগে আরও এক বার কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে কথা বলবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি।

অন্য বিষয়গুলি:

deeksha bhuiya marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy