দুপুর ১২টা। হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট থেকে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বাইরের রাস্তায় এসে দাঁড়াল মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। গাড়ি থেকে নেমে হনহন করে রাস্তা পেরিয়ে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের মেন গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে সময় কয়েক জন বন্দিকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় চলছিল। হঠাৎই মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে হতবাক হয়ে যান জেলরক্ষীরা। দৌড়ে গিয়ে তাঁদেরই এক জন খবর দেন আলিপুর জেলের সুপার চিত্তরঞ্জন ঘড়াইকে। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি নিজের অফিস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন জেল সুপার।
তাঁকে দেখেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম প্রশ্ন, “কী ব্যাপার? জেলের মধ্যে এত বন্দিমৃত্যুর ঘটনা কী করে ঘটছে?” প্রশ্ন শুনে বেশ কিছুটা থতমত খেয়ে যান জেল সুপার। তার পর নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, “ম্যাডাম, এই জেলে কিছু হয়নি তো! এ মাসে দু’টি মৃত্যুর ঘটনাই ঘটেছে প্রেসিডেন্সি জেলে।” জবাব শুনে প্রসঙ্গ বদলে জেলের কাজকর্ম নিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে নিয়মিত কারা দফতরের এডিজি এবং ডিআইজি-রা আসেন কি না, এমন নানা বিষয় জানতে চান সুপারের কাছে। সন্তোষজনক উত্তর পেয়ে দ্রুত হেঁটে ফিরেও যান গাড়িতে। নবান্নের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায় তাঁর কনভয়।
প্রেসিডেন্সি জেলে গত ৫ মে সকালে সেলের বাইরে যোগাসন করার সময়ে খুন হন খাদিমকর্তা অপহরণ মামলার অন্যতম সাজাপ্রাপ্ত বন্দি হরপ্রিত ওরফে হ্যাপি সিংহ। অভিযোগ, হ্যাপির মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে তাঁকে খুন করেন জেলেরই আর এক বন্দি নিজামুদ্দিন। ইতিমধ্যেই ওই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব সিআইডি-র হাতে তুলে দিয়েছে রাজ্য সরকার। তার পরে, গত ২০ মে ফের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে প্রেসিডেন্সি জেলে। এ বার জেলের মধ্যেই আত্মঘাতী হন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি সনাতন সাঁতরা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কেন প্রেসিডেন্সি জেল ছেড়ে আলিপুর জেলে গিয়ে বন্দিমৃত্যুর খোঁজ নিলেন, তা বুঝতে পারছেন না কারাকর্তারা।
সরকারি মহলের অনেকে আবার বলছেন, আলিপুর জেলে আমেরিকান সেন্টারে হামলার মূল আসামি আফতাব আনসারি, মাওবাদী নেতা তেলুগু দীপক, সারদা কেলেঙ্কারির মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন-সহ বহু ‘হাই প্রোফাইল’ বন্দি রয়েছেন। ফলে জেলের নজরদারির দিকে সুপার যাতে কড়া নজর রাখেন, সেই বার্তা দিতেই মুখ্যমন্ত্রী আলিপুর সংশোধনাগারে গিয়েছিলেন।
নবান্ন সূত্রের খবর, প্রেসিডেন্সি জেলে পর পর দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই তিনি মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র এবং স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই বিষয়ে বৈঠক করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জেলের ভিতরে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশও দিয়েছেন। সেই মতো ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশনের (সিসিটিভি) সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলের মধ্যে রক্ষীর সংখ্যাও আরও বাড়ানো হচ্ছে বলে কারা দফতর সূত্রে খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy