Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
সাউথ ক্যালকাটা গার্লস কলেজ

ফের মেয়েদের হস্টেলে ঢোকার ‘চেষ্টা’, গ্রেফতার

লেডি ব্রেবোর্নের পরে সাউথ ক্যালকাটা গার্লস কলেজ। ফের প্রশ্ন উঠল মেয়েদের একটি কলেজের হস্টেলে নিরাপত্তা নিয়ে। লেডি ব্রেবোর্নের ঘটনায় কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি। কিন্তু সাউথ ক্যালকাটা গার্লস কলেজের হস্টেলে পাইপ বেয়ে উঠে শৌচাগারের জানলার শিক ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে কলেজেরই সাফাইকর্মী এক যুবক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ২৩:৫৩
Share: Save:

লেডি ব্রেবোর্নের পরে সাউথ ক্যালকাটা গার্লস কলেজ। ফের প্রশ্ন উঠল মেয়েদের একটি কলেজের হস্টেলে নিরাপত্তা নিয়ে।

লেডি ব্রেবোর্নের ঘটনায় কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি। কিন্তু সাউথ ক্যালকাটা গার্লস কলেজের হস্টেলে পাইপ বেয়ে উঠে শৌচাগারের জানলার শিক ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে কলেজেরই সাফাইকর্মী এক যুবক। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ওই ঘটনার পরে হস্টেলে নিরাপত্তার দাবিতে শুক্রবার কলেজে বিক্ষোভ দেখান আবাসিক ছাত্রীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী আবাসিক ছাত্রীদের অভিযোগ, ওই রাতে দেড়টা নাগাদ হস্টেলের ঘর থেকে বাইরে একটা শব্দ পান তাঁরা। তাঁরা বলেন, “বারান্দায় এসে দেখি, শৌচাগারের বাইরে পাইপ ধরে কেউ ঝুলছে। আমরা ‘কে কে’ বলে চিৎকার শুরু করি! ততক্ষণে বারান্দায় অনেক মেয়ে জড়ো হয়ে যায়।”

অন্ধকারের মধ্যেও তাঁরা লোকটিকে চিনতে পারেন বলে জানান অভিযোগকারী ছাত্রীরা। তাঁদের দাবি, কলেজ ও হস্টেলের সাফাইকর্মী সরযূ দাসই রাতে পাইপ বেয়ে উঠে শৌচাগারের জানলার শিক ভাঙছিল। এমনকী শিক ভেঙে জানলার কিছুটা অংশ ফাঁকা করে সে মাথা গলানোর চেষ্টা করছিল বলেও অভিযোগ। মেয়েরা চিনে ফেলায় এক বার পিছন ফিরে তাকিয়ে সে পাইপ ছেড়ে নীচে নেমে যায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

রাতেই খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে আসে পুলিশ। সেখানে নিজের ঘর থেকেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সরযূ। শুক্রবার দুপুরে হস্টেল সুপারের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় সরযূকে। যদিও তাঁরা যাতে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের না করেন, সে জন্য কলেজের শিক্ষাকর্মীদের কেউ কেউ চাপ সৃষ্টি করছিলেন বলে ছাত্রীদের অভিযোগ। শিক্ষাকর্মীরা সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। শুক্রবার দুপুরে পুলিশ ক্যাম্পাসে পরিদর্শনেও যায়।

দক্ষিণ কলকাতার ল্যান্সডাউনের ওই কলেজ ক্যাম্পাসেই ছাত্রীদের হস্টেল। হস্টেলের পাশে শিক্ষাকর্মীদের ঘর। শুক্রবার দুপুরে ওই কলেজে গিয়ে দেখা যায়, হস্টেলে নিরাপত্তার দাবিতে মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন অনেক ছাত্রী। তাঁদের অভিযোগ, মাসে তিন হাজার টাকারও বেশি ফি নেওয়া সত্ত্বেও হস্টেলে কোনও নিরাপত্তা বা পরিষেবার বালাই নেই।

তিনতলা হস্টেলের সামনে পৌঁছেই চোখে পড়ল দোতলার শৌচাগারের জানলায় বেশ কয়েকটি শিক নেই। ফাঁক গলে ভিতরে ঢোকা বিশেষ কষ্টসাধ্য কাজ নয় এবং জানলাটি খুব একটা উঁচুতেও নয়। জানলার নীচে পাইপ, পাশে শিক্ষাকর্মীদের শৌচাগারের অ্যাসবেস্টসের ছাদ। বারান্দায় সরু লোহার রেলিং, তার উপর দিকটা ফাঁকা। এক ছাত্রীর কথায়, “ওই ফাঁক গলেও যে কেউ ভিতরে ঢুকে যেতে পারে। আমাদের নিরাপত্তাটা কোথায়!”

সামনেই একটি একতলা বাড়িতে হস্টেলের আর একটি অংশ। সেখানে ঘরের জানলায় কাচ, শৌচাগারেও কাচের জানলা। জানলা খুললে তো বটেই, কাচের বাইরে থেকেও উঁকি মেরে ভিতরের কিছুটা দেখা যেতে পারে। ছাত্রীদের অভিযোগ, সরযূ অনেক সময়ে ঘরের বাইরে এসে উঁকিঝুঁকি মারত, তাই গরমে হাঁসফাঁস করলেও জানলা খোলা যায় না। তার উপরে এক-একটি ঘরে আট-দশ জন, কোথাও বা ৩০ জন মেয়ে একসঙ্গে থাকেন বলে জানিয়েছেন আবাসিকেরা। তাঁদের বক্তব্য, “৬০ জন মেয়ের জন্য মাত্র চারটি শৌচাগার। প্রচণ্ড অসুবিধায় থাকতে হয়।”

সমস্যার কথা কলেজ কর্তৃপক্ষেরও অজানা নয়। তবে সব ঠিকঠাক করার চেষ্টা চলছে বলে দাবি অস্থায়ী ভাবে কলেজের দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকা (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা ছুটিতে) শক্তি রায়চৌধুরীর। তিনি বলেন, “যে ছেলেটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে বহু দিন ধরে এই কলেজে কাজ করছে। তাই এই ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। তবে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে জানানো হয়েছে। হস্টেলে নিরাপত্তা জোরদার করার ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা চলছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

south calcutta girls college girls hostel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE