গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ঘাড়ে ‘ঘরের চাপ’ই বেশি। কারণ, বিদ্যুতের বিল বকেয়া রাখার ক্ষেত্রে সাধারণের থেকে অনেক এগিয়ে সরকারি দফতর। অভিযোগ, এক হাজার কোটি টাকার বেশি বিদ্যুতের টাকা বকেয়া রয়েছে নানা সরকারি দফতরের। এ বার এই সমস্যা মেটাতে ‘আগে টাকা, পরে বিদ্যুৎ’ পদ্ধতি চাইছে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। তাতে সায় রয়েছে নবান্নেরও। সম্প্রতি অর্থ দফতর সব সরকারি দফতরে প্রি-পেড মিটার বসানোর নির্দেশ দিয়েছে। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, বিভিন্ন ছোট সরকারি অফিসে এ বার প্রি-পেড মিটার লাগানোর কাজ শুরু হবে। অফিসগুলিকে নিয়ম মেনে মোবাইল ফোনের মতো বিদ্যুতের মিটার ‘রিচার্জ’ করাতে হবে। অর্থাৎ, আগাম দিয়ে রাখতে হবে বিদ্যুৎ খরচের টাকা। জমা রাখা টাকা শেষ হয়ে গেলে আপনা থেকেই মিটারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
রাজ্যের অর্থ দফতর গত ২৮ অক্টোবর এই মর্মে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। সেটি আনন্দবাজার অনলাইনের হেফাজতে রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সব সরকারি অফিসে ‘স্মার্ট ইলেকট্রিক মিটার’ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সব সরকারি দফতর আগাম বিদ্যুতের খরচ ‘রিচার্জ’ করে নিতে পারবে। একসঙ্গে কয়েক মাসের টাকা জমা দেওয়া গেলেও মাসে মাসে রিচার্জের কথাই বলেছে অর্থ দফতর। এর জন্য ট্রেজ়ারি থেকে আগাম টাকাও পাওয়া যাবে। তবে নির্দেশে এ-ও স্পষ্ট করা হয়েছে যে, কোনও অফিস রিচার্জের জন্য নেওয়া টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া টাকা মেটাতে পারবে না।
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন উদ্যোগ এই প্রথম নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মেনে ২০২৩ সালের মধ্যেই প্রথম পর্যায়ের ‘স্মার্ট মিটার’ চালুর কাজ শেষ করার কথা ছিল। তাতে শুরুতেই সরকারি অফিসে মিটার বসানোর কথা। কিন্তু সেই উদ্যোগ সে ভাবে সফল হয়নি। এ নিয়ে দেশের অন্য রাজ্যের মতো বাংলাতেও বিরোধিতা তৈরি হয়। এর পরে রাজ্যের বিদ্যুৎ রেগুলেটরি কমিশনে যায় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। জানানো হয়, কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের ‘রিভ্যাম্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিম’ ঘোষণা হয় ২০২২ সালের অগস্টে। পরের বছর সেপ্টেম্বরে কী ভাবে বাংলায় তা চালু করা হবে, তা ঠিক করে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। এ-ও বলা হয় যে, কোনও সরকারি অফিস যদি ‘পোস্ট-পেড’ থেকে ‘প্রি-পেড’ পদ্ধতিতে আসতে চায় তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে পরের দশ দিনের মধ্যে বকেয়া মিটিয়ে ফেলতে হবে। তাতে বকেয়ার উপরে ৪ শতাংশ ছাড়় পাওয়া যাবে। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই প্রস্তাব কার্যকরের পক্ষেই রায় দেয় বিদ্যুৎ রেগুলেটরি কমিশন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি সেই রায় মেলার পরে এ বার অর্থ দফতরও সব অফিসকে আগাম বিদ্যুৎ বিল মেটানোর অনুমতি দিয়েছে। বলা হয়েছে, প্রত্যেক অফিসকেই মিটার পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিতে হবে।
তবে শুধু সরকারি অফিসেই নয়, ধাপে ধাপে শিল্প এবং বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রেও প্রি-পেড পদ্ধতি চালু করতে চায় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। সেই সঙ্গে বড় শহরগুলি দিয়ে শুরু হবে সাধারণ গ্রাহকদের মিটার-বদল প্রক্রিয়া। প্রথম ধাপে ৫ থেকে ৫০ কেভি বিদ্যুৎ খরচ হয়, এমন সংস্থাই লক্ষ্য। এর পরে পুরসভা এবং পঞ্চায়েতগুলিতেও প্রি-পেড মিটার বসানোর লক্ষ্য রয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রথম দফায় সাধারণ ইলেকট্রনিক মিটার বদলে সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ স্মার্ট মিটার বসানোর পরিকল্পনা আছে। ধাপে ধাপে কাজ চলবে। ২০২৫ সালের মধ্যে মোট ৫০ লাখ স্মার্ট মিটার বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ইতিমধ্যেই স্মার্ট মিটার কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা। তাঁর কথায়, মিটার প্রস্তুতকারী সংস্থাকে ইতিমধ্যেই বরাত দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির লোকসান কমাতে গোটা দেশেই স্মার্ট মিটার এবং প্রি-পেড সংযোগ চালুর সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক। মূল লক্ষ্য বিদ্যুতের অপব্যবহার বন্ধ করা এবং বিল না মেটানোর প্রবণতা রোধ করা। বাংলার বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘এখানে সাধারণের থেকে বকেয়া বেশি বিভিন্ন সরকারি দফতরের। পরিমাণটা এক হাজার কোটি টাকার বেশি। খোঁজ নিয়ে হয়তো দেখা যাবে, বিদ্যুৎ বিভাগের কোনও অফিসই দিনের পর দিন বিল মেটায় না।’’ সরকারি অফিসের সংযোগ সহজে কেটে দেওয়া যায় না বলেই বিল মেটানো হয় না বলেও দাবি ওই কর্তার। স্মার্ট মিটার চালু হলে সেই সমস্যা আর থাকবে না বলেও তাঁর অভিমত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy