নব্য হেস্টিংসকে ছেড়ে আদি মুরলীধরেই মন বিজেপি-র। ফাইল চিত্র
মুরলীধর সেন লেনের সাবেক দফতরই ভাল। বিধানসভা নির্বাচনে দলকে ‘ডোবানো’ হেস্টিংসের ‘আগরওয়াল হাউস’ আর নয়। তাই বিজেপি-র পুরভোটের ‘ওয়ার রুম’ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত পুরনো দফতরেই। ইতিমধ্যেই এমন পরিকল্পনা করে ফেলেছে রাজ্য বিজেপি। সেই মতো উত্তর কলকাতার ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের বাড়িতেই তৈরি হচ্ছে পুর-যুদ্ধের রণভূমি।
কিন্তু হেস্টিংসের খোলামেলা বড় অফিস ছেড়ে আদিতে ফিরে আসা কেন? মুখে স্বীকার না করলেও একান্ত আলোচনায় বিজেপি নেতাদের একাংশ বলছেন, ওই বাড়ি দলের জন্য ‘অপয়া’। এমন আলোচনা শোনা যাচ্ছে রাজ্য নেতাদের একাংশের মুখেও। তাঁদের বক্তব্য, আগরওয়াল হাউসের বৈভবের চেয়ে মুরলীধরের সাবেকিয়ানাই দলের জন্য ভাল। এই বাড়ি থেকে লড়েই গত পুরসভা নির্বাচনে অর্থাৎ ২০১৫ সালে কলকাতায় সাতটি আসনে জয় এসেছিল। ২০১৯ সালে এই বাড়ি থেকেই জয় মিলেছিল ১৮টি লোকসভা আসনে। গেরুয়া শিবির এগিয়ে ছিল রাজ্যের ১২১ বিধানসভা আসনে।
সেই প্রেক্ষাপটেই তৈরি হয়েছিল নবান্ন দখলের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন সফল করতেই নবান্নের কাছাকাছি গঙ্গার এ পারে আগরওয়াল হাউসের পাঁচটি তলা নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল বিশাল দফতর। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি আর তার পর থেকে ক্রমেই বিপর্যস্ত বিজেপি আর ফিরতে চায় না ওই বাড়িতে।
সেই জনসঙ্ঘের আমল থেকে ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের ভাড়াটিয়া গেরুয়া শিবির। এই বাড়ি দেখেছে বাংলার গেরুয়া রাজনীতির সব উত্থানপতন। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে হেস্টিংস ‘সুয়োরানি’ আর আদি দফতর ‘দুয়োরানি’ হয়ে গিয়েছিল। এই বাড়িতে শুধু কলকাতা জোনের জন্য শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়দের ঘর ছিল। বাকি সবাই হেস্টিংসে।
প্রতিদিন মুকুল রায় অনুগামীদের নিয়ে হেস্টিংসের দফতরে দরবার বসাতেন। আলাদা ঘর ছিল রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এঁরা কেউ আর গেরুয়া শিবিরে নেই। ওই বাড়ির তিনটি তলা ইতিমধ্যেই ছেড়ে দিয়েছে বিজেপি। এখন ন’তলায় দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অমিত মালব্য, অরবিন্দ মেননদের ঘরের সঙ্গে রয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘর। তবে কোনও নেতারই বিশেষ যাতায়াত নেই ওই বাড়িতে। কৈলাস, অমিত, অরবিন্দরা এখনও রাজ্যের দায়িত্বে আছেন। তবে তাঁরা খুব একটা বাংলামুখো হন না। পাঁচ তলায় রয়েছে একটি হল ঘর। সেখানে সাম্প্রতিক কালে কার্যকারিণী বৈঠক কিংবা বিধায়কদের প্রশিক্ষণ শিবির ছাড়া কিছুই হয়নি।
ওই দফতরের এক কর্মী বলেন, ‘‘এখন আর কেউ আসেন না। ঘর খুলে খুলে সাফসুতরো করা হলেও কোনও ঘরের মালিকই আর আসেন না।’’ গত এপ্রিল মাসে যে আগরওয়াল হাউস চত্বরে গাড়ি রাখার জায়গা মিলত না, সেই বাড়ির সামনেটা এখন চেনাই যায় না। একলা ‘হেস্টিংস’ এ বার পুরভোটের আগে আরও একা হতে চলেছে। কারণ, এখনও পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্বের যা সিদ্ধান্ত, তাতে পুরভোট পরিচালনা হবে সাবেক মুরলীধর সেন লেন থেকেই।
হেস্টিংসের বাড়িকে খোলাখুলি ভাবে ‘অপয়া’ না বললেও দলের সহ-সভাপতি তথা কলকাতা পুরসভা নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হেস্টিংসের বাড়ি আমরা আস্তে আস্তে ছেড়ে দিচ্ছি। পুরনো অফিস থেকেই পুরভোট পরিচালনা করা হবে।’’ বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও চান, মুরলীধর সেন লেনের বাড়ি থেকেই পুরভোটের লড়াই হবে। প্রসঙ্গত, হেস্টিংসে সুকান্তর জন্যও কোনও ঘর তৈরি হয়নি। রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত তিনি ওই দফতরে যানওনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy