ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্লানেড-হাওড়া ময়দান রুটের ৭০ শতাংশ যাত্রীই উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর সংযুক্ত পথের যাত্রী। ওই মেট্রোর শিয়ালদহ-সেক্টর ফাইভ রুটের যাত্রীদের সিংহভাগ শিয়ালদহ থেকে শহরতলির ট্রেনের যাত্রী। শহরে নির্মীয়মাণ মেট্রোপথগুলির সাফল্য নির্ভর করছে সেগুলি কী ভাবে অন্য এলাকার সঙ্গে যুক্ত, তার উপরে। তাই উপযুক্ত যোগাযোগের অভাবে নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর, জোকা-এসপ্লানেড মেট্রোপথের বহু স্টেশন যাত্রী হারাতে পারে। রবিবার সল্টলেকে ‘ইনস্টিটিউট অব টাউন প্ল্যানার্স’-এর পশ্চিমবঙ্গ চ্যাপ্টার আয়োজিত ‘কলকাতায় প্রস্তাবিত মেট্রো ব্যবস্থার প্রভাব’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় উঠে এল এমন একাধিক আশঙ্কার কথা।
কোনও ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কী ভাবে মেট্রোপথের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তার উপরে এর সাফল্য নির্ভর করে। আদর্শ মেট্রোপথের ক্ষেত্রে গড়ে ১ কিলোমিটার দূরত্বে স্টেশন তৈরি হয়। ইস্ট-ওয়েস্টের ক্ষেত্রে শিয়ালদহ-এসপ্লানেড ও মহাকরণ-হাওড়া স্টেশন মেট্রোপথের দূরত্ব গড়ে প্রায় দু’কিলোমিটার। ফলে যথাক্রমে বৌবাজার ও বড়বাজার লাগোয়া রবীন্দ্র সরণির একাংশ যোগাযোগ মানচিত্রের বাইরে থেকে গিয়েছে। জোকা মেট্রোয় তারাতলা স্টেশনের অবস্থান অনেকটা দূরে। একই রুটের মোমিনপুর, খিদিরপুর স্টেশন উপযুক্ত পরিবহণ পরিকল্পনায় সংযুক্ত না হলে অনেকেই পরিষেবার সুবিধা পাবেন না। উত্তর-দক্ষিণের বরাহনগর মেট্রো স্টেশনটিকে এ জন্য অনেকে এড়িয়ে যান বলে অভিযোগ।
এ দিন ওই সংগঠনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং নগর পরিকল্পক দীপঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘যাতায়াতের মূল স্রোত যেখান দিয়ে যায়, তাকে ছুঁতে না পারলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।’’ মেট্রো ব্যবস্থাকে সফল করতে বিভিন্ন স্টেশন এবং লাগোয়া মেট্রোপথগুলির মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ট্রামের ব্যবহারের কথা বলেন তিনি। তবে বাস্তব হল, টালিগঞ্জের মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশন ও জোকা স্টেশনের মধ্যে সংযুক্তিকরণের পরিকল্পনা থাকলেও ওই পথে একাধিক আবাসন থাকায় তা বাতিল করতে হয়। নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোর বরুণ সেনগুপ্ত ও বেলেঘাটা স্টেশনের সঙ্গে নিকটবর্তী জনপদের যোগাযোগ কম। চিংড়িঘাটায় কোনও স্টেশন নেই।
কলকাতা ট্রাম ইউজ়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সংগঠক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দক্ষিণ থেকে আসা যাত্রীরা ওই মেট্রোয় করে উল্টোডাঙা যেতে গেলে সমস্যায় পড়বেন। তাই তাঁরা ওই মেট্রোপথ এড়াতে পারেন।’’ নিউ টাউনের একাধিক স্টেশনও জনপদ থেকে দূরে বলে অভিযোগ। ট্রাম ও বৈদ্যুতিক বাসের মতো গণপরিবহণের অভাবে প্রকল্পের সুফল অধরা থাকবে বলেও জানান আলোচকেরা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)