বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা এমপিএস তাদের সব কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেছে। স্থগিতাদেশের আবেদনের ব্যাপারে কোনও নির্দেশ না-দিয়ে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিয়েছে, ওই সংস্থার আমানতকারীদের টাকা ফেরতের বিষয়টিকেই তারা বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছে।
প্রধান বিচারপতি চেল্লুর এবং ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এ দিন নির্দেশ দেন, আমানতকারীদের টাকা কী ভাবে ফেরত দেওয়া যায়, সেই ব্যাপারে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-সহ এমপিএসের বিরুদ্ধে সব তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমাধানসূত্র বার করতে হবে। সেই জন্য এই মামলায় (স্থগিতাদেশের আবেদন সংক্রান্ত) যুক্ত করতে হবে ইডি-কেও। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, এই মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-কে যুক্ত না-করলে আমানতকারীরা আগামী ১০ বছরেও টাকা ফেরত পাবেন না। বেঞ্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করেছে ২১ এপ্রিল।
‘এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপার্স লিমিটেড’-এ টাকা বিনিয়োগ করেও তা ফেরত না-পেয়ে কয়েক জন আমানতকারী হাইকোর্টে মামলা করেন। গত ৩০ মার্চ বিচারপতি সৌমিত্র পাল রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলকে নির্দেশ দেন, রাজ্য জুড়ে এমপিএসের সব কার্যালয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করে দিতে হবে। রাজ্য জুড়ে ওই অর্থ লগ্নি সংস্থার কমবেশি ৩০০ কার্যালয় রয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশের ভিত্তিতে পুলিশ লেক টাউন, ঝাড়গ্রাম, উত্তরবঙ্গ-সহ ওই সংস্থার সব অফিস ‘সিল’ করে দেয়।
আমানতকারীদের আইনজীবী অরিন্দম দাস জানান, এমপিএস যাতে বাজার থেকে টাকা না-তোলে, সেই জন্য সিকিওরিটি এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া বা সেবি ২০১৩ সালেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। হাইকোর্ট ওই বছরেই নির্দেশ দিয়েছিল, এমপিএসের সব অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ রাখতে হবে। জোড়া নির্দেশ সত্ত্বেও এমপিএস বাজার থেকে টাকা তোলা অথবা অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করেনি বলে অভিযোগ।
আইনজীবী অরিন্দমবাবু গত ৩০ মার্চ এমপিএসের টাকা তোলার দু’টি রসিদ জমা দেন আদালতে। দেখা যায়, এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপার্স লিমিটেড তাদের অ্যাগ্রো-বন্ডের জন্য প্রতীক মুখোপাধ্যায় ও অন্তরা দাশগুপ্ত নামে দু’জন আমানতকারীর কাছ থেকে মাথাপিছু ২০০ টাকা তুলেছে। এবং ওই টাকা তোলা হয়েছে মার্চের ২ এবং ২৫ তারিখে। তার ভিত্তিতেই বিচারপতি সৌমিত্র পাল ৩০ মার্চ এমপিএসের সব অফিস বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
সেই নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ চেয়ে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করে ‘এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপার্স লিমিটেড’। এ ছাড়া ওই বেঞ্চে পৃথক একটি মামলা দায়ের করে এমপিএসের সহযোগী অন্য তিনটি সংস্থা। মামলার আবেদনে তারা জানায়, বিচারপতি পাল এমপিএসের দফতর বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশে এটা বলা নেই যে, এমপিএসের সহযোগী সংস্থার অফিসও বন্ধ করতে হবে। এমপিএসের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থায় এক হাজারের বেশি লোক কর্মরত। সেই সব অফিস বন্ধ হয়ে গেলে ওই কর্মীরা বেকার হয়ে যাবেন।
কিন্তু তদন্তকারী সংস্থা ইতিমধ্যেই এমপিএসের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে জানিয়েছে, এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপার্স লিমিটেড বাজার থেকে তোলা টাকা অবৈধ ভাবে বিনিয়োগ করেছে সহযোগী সংস্থাগুলিতেই। এবং সেবি-র অনুমতি না-নিয়েই তারা নিয়মিত টাকা তুলেছে বাজার থেকে। ফলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy