২০১৯ সালে নিজেদের চক্র স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য কলকাতা জেলা ২৩ লক্ষ টাকা পেয়েছিল। ফাইল চিত্র।
প্রাথমিক শিক্ষায় কলকাতা জেলায় আছে ২৩টি ‘চক্র’। ওই জেলার এক প্রাথমিক শিক্ষক জানাচ্ছেন, ২০১৯ সালে নিজেদের চক্র স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য কলকাতা জেলা ২৩ লক্ষ টাকা পেয়েছিল। তদুপরি জেলায় স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য তারা পেয়েছিল আলাদা পাঁচ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে প্রাপ্তি ছিল ২৮ লক্ষ। এ বার বার্ষিক ক্রীড়া খাতে এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে কলকাতার ভাগ্যে জুটেছে মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা।
এটা বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। জেলায় জেলায় একই ছবি। প্রাথমিক স্তরের বার্ষিক ক্রীড়া খাতে এ বার এত সামান্য সরকারি টাকা মিলেছে যে, সেটা কার্যত নবান্নের ভাঁড়ারের শোচনীয় অবস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে শিক্ষা শিবির, রাজনৈতিক মহল-সহ বিভিন্ন স্তরের পর্যবেক্ষণ। তাদের অনেকের প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় বাজেটে শিক্ষায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না-থাকায় রাজ্য সরকার প্রতিবাদে মুখর। আর সেই রাজ্যই খুদে পড়ুয়াদের খেলা খাতে মুষ্টিভিক্ষা দিচ্ছে কেন? প্রধান বিরোধী দল বিজেপির অভিযোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার খাতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ সত্ত্বেও রাজ্য সরকার কচিকাঁচাদের বার্ষিক ক্রীড়ার বরাদ্দটুকুও দিতে পারছে না। বিজেপির শিক্ষক সেলের রাজ্য কো-কনভেনর পিন্টু পাড়ুই বলেন, ‘‘কেন্দ্রের কাছ থেকে সমগ্র শিক্ষা খাতে খেলার জন্য কয়েক কোটি টাকা পায় রাজ্য। অথচ রাজ্য খুদে পড়ুয়াদের খেলার খরচ দিচ্ছে না।’’
প্রাথমিক শিক্ষায় প্রতিটি জেলাকে বেশ কয়েকটি চক্রে ভাগ করা হয়। এক-একটি জেলার অধীনে ৩০ থেকে ৫০টি পর্যন্ত চক্র থাকে। কলকাতা জেলায় চক্রের সংখ্যা যেমন ২৩। প্রতিটি চক্রের অধীনে ৫০ থেকে ৭০টি প্রাথমিক স্কুল থাকে। এত দিন পর্যন্ত প্রাথমিক স্কুলের ওই বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে প্রতিটি চক্রের হাতে এক লক্ষ টাকা দেওয়া হত। অর্থাৎ যে-জেলার অধীনে ৪০টি চক্র আছে, সেই জেলা পেত ৪০ লক্ষ টাকা। ৪৫টি চক্রের জেলা ৪৫ লক্ষ টাকা পেত।
এই টাকা দেওয়া হত প্রথমে স্কুল এবং পরে চক্র স্তরের প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য। তার পরেও থাকে জেলা স্তরের প্রতিযোগিতা। তার জন্য শিক্ষা দফতর আলাদা টাকা পাঠাত বলে জানাচ্ছে শিক্ষক শিবির। অভিযোগ, এ বার রাজ্য সরকার প্রতিটি জেলার হাতে গড়ে সাকুল্যে পাঁচ লক্ষ টাকা ধরিয়ে দিয়েছে। ৩০টি চক্রের জেলার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা, আবার যে-চক্রের অধীনে ৪০টি চক্র আছে, তাদের জন্যও পাঁচ লক্ষ। এবং বলে দেওয়া হয়েছে, এই টাকায় স্কুল, চক্র, জেলা— সব স্তরেরই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সারতে হবে।
ওই টাকা আসার অনেক আগেই বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুল বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছিল। অনেক জায়গায় সেই প্রতিযোগিতা শেষও হয়ে গিয়েছে। পরে সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ টাকা আসবে, এই আশায় সেই সব ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে স্কুল তহবিলের টাকা নেওয়া তো হয়েছেই, পকেট থেকে টাকা দিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। এখন সরকারের কাছ থেকে এত কম টাকা আসায় তাঁদের মাথায় হাত পড়েছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, খেলার সূচি ঘোষণার পরে বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে এখন জেলা স্তরের খেলাও প্রায় শেষ। বহু দিন ধরে সরকারকে তাগাদা দিয়ে এত দিনে যদিও বা টাকা পাওয়া গেল, তার পরিমাণ খুবই কম।
স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য নিজের পকেটের টাকা দিয়েছেন বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হন্ডাও। তাঁর অভিযোগ, ‘‘প্রাথমিক স্তরে স্কুলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা করার জন্য যদি টাকা না-মেলে, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার আয়োজন করব কী ভাবে?’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বিকাশ নস্কর জানান, তাঁদের এলাকায় প্রাথমিক স্কুলের চক্র স্তরের খেলা হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। যে-সব শিক্ষক পকেট থেকে টাকা দিয়েছিলেন, তাঁরা একটা টাকাও ফেরত পাননি। কলকাতা জেলার এক প্রাথমিক শিক্ষক জানান, কলকাতা জেলায় ২৩টি চক্র আছে। ২০১৯ সালে কলকাতা জেলা ২৩ লক্ষ টাকা পেয়েছিল। এ ছাড়া জেলায় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য পেয়েছিল আলাদা পাঁচ লক্ষ টাকা। এ বার সব মিলিয়ে কলকাতা এখনও পর্যন্ত পেয়েছে মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা।
পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র বলছেন, “শিক্ষকেরা ধারবাকি রেখে প্রাথমিক স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উতরে দিয়েছেন। আশা করি, বাকি টাকা পাওয়া যাবে।”
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পালের আশ্বাস, মোট টাকার একটি অংশ এখন দেওয়া হয়েছে। পরে আরও টাকা পাঠানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy