পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিনের হাঁটুর তলায় জর্জ ফ্লয়েড। বিশ্ব জুড়ে ভাইরাল হওয়া সেই দৃশ্য। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
ভিডিয়ো ক্লিপটা দেখে দু’বছর আগে আমেরিকার মিনিয়াপোলিসের সেই দৃশ্যটা মনে পড়তেই পারে।
কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের গলায় হাঁটু চেপে যেখানে দাঁড়িয়েছিল শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিন। কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের টানা শ্বাসরোধ করার জেরে তাঁর মৃত্যু হয়। কোভিড ধ্বস্ত সময়েও সেই দৃশ্য কাঁপিয়ে দিয়েছিল আমেরিকার রাজনীতি। এবং উস্কে দিয়েছিল ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন। কলকাতার এক্সাইড মোড়ের একটি দৃশ্যে সিভিক বা গ্রিন পুলিশের ভঙ্গিও প্রায় সেই নিষ্ঠুরতাই মনে পড়িয়েছে।
‘ছিনতাইকারী’ সন্দেহে ধৃত রোগাটে যুবককে বার বার লাথি মেরে মাটিতে ফেলে বুকে পা চিপে দিচ্ছেন এক পুলিশকর্মী। এ ক্ষেত্রে অবশ্য অভিযুক্ত সুস্থই আছেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তথা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন সভাপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে কাজটি অত্যন্ত গর্হিত। তাঁর কথায়, “কাউকে ধরতে গিয়ে ধস্তাধস্তি হতে পারে, কিন্তু পুলিশের এমন নিষ্ঠুরতা বেআইনি এবং অমানবিক। ভিডিয়োটি তোলা হয়েছে বলেই পুলিশের এই আচরণ প্রকাশ্যে এল।”
সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে সর্বত্র। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির তরফে রঞ্জিত শূরও বলেন, “আমেরিকার ঘটনাটিতে সেই পুলিশের সাজা হয়েছিল। এখানে পুলিশদের পিছনে নেতা বা বড় অফিসারেরা থাকেন। তাই বিষয়টা ঝেড়ে ফেলা হবে। রাজ্যে মানবাধিকারের দশা একেবারে বেহাল।” তবে তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “আমি ঘটনাটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নই। কোনও একটা ফ্রেম দেখে কিছু বলা যায় না। শুধু বলব, আইনরক্ষকদের আইনের বাইরে কিছু করা উচিত নয়।”
তবে বিরোধিতার সুর চড়িয়েছেন বিরোধী রাজনীতিকেরা। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রচারে এসেছে। সারা রাজ্যের দিকে তাকালে বোঝা যাবে এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা এবং মানবাধিকারের পরিস্থিতি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “রাস্তার উপরে অপরাধীসুলভ আচরণ করছেন জনৈক সিভিক পুলিশ! তাঁকে পুলিশের এক্তিয়ার দেওয়া হয়েছে। লুঠেরা বাহিনীর এক্তিয়ারও কি দেওয়া হয়েছে? মানুষের অধিকার হরণ করার সুযোগ কাউকে দেওয়া যায় না।”
বিষয়টি নজরে এসেছে কলকাতা বা রাজ্যের কোনও কোনও পোড়খাওয়া পুলিশ অফিসারেরও। লালবাজারে গোয়েন্দা বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার বা এসি (ডিডিআই) হিসেবে অবসর নিয়েছেন অভ্রান্তবন্ধু মজুমদার। সাব-ইনস্পেক্টর স্তর থেকে হাতেকলমে অপরাধ দমনের বিপুল অভিজ্ঞতা তাঁর। তিনি বলছেন, “যা হয়েছে বলে শুনছি, আইনত তা হওয়া উচিত নয়। কিন্তু পুলিশের হাত ফস্কে এক জন দুষ্কৃতী পালালেও তাঁকে চরম অপদস্ত হতে হয়। তাই কখনও কিছু বাড়াবাড়ি ঘটে।” এর পাশাপাশি, উঠে আসছে এই স্মার্টফোন সর্বস্ব যুগে যত্র তত্র ভিডিয়ো ওঠার ‘বিপদের’ দিকও। অভ্রান্তবাবুর মতে, “প্রযুক্তির নানা দিক আছে। তাই কোথায় কী ঘটতে পারে বুঝেই সতর্ক থাকা উচিত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy