Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
George Floyd

Green police: তরুণকে রাস্তায় ফেলে বুকে পা তুলে দিলেন গ্রিন পুলিশ! দুঃখপ্রকাশ পুলিশ কমিশনারের

কী করে এই অমানবিক ঘটনা ঘটল, তা জানতে চাওয়া হবে। অফিসারদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশ কমিশনার।

তখনও ডিউটিতে। রবিবার এক্সাইড মোড়ে।

তখনও ডিউটিতে। রবিবার এক্সাইড মোড়ে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২১ ০৭:০০
Share: Save:

মহানগর এ দৃশ্যে অভ্যস্ত নয়।

রোগা চেহারার বছর কুড়ির যুবক ফুটপাথে পড়ে। তাঁর বুকের উপরে বুট পরা পা দিয়ে ঠেসে ধরেছেন আর এক যুবক। পরনে সবুজ-রঙা পোশাক। তিনি সিভিক ভলান্টিয়ার, কথ্য ভাষায় ‘গ্রিন পুলিশ’। মাটিতে পড়ে থাকা যুবক নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন বার বার। আর মাটিতে শুইয়ে রাখতে বার বার বুকে-পিঠে লাথি মারছেন গ্রিন পুলিশ। বুট পায়ে ঠেসে ধরছেন ওই যুবককে।

রবিবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্র সদনের এক্সাইড মোড়ে এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল মহানগর। এই দৃশ্য ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন অনেকে। যার জেরে শুরু হয় সমালোচনার তীব্র ঝড়। কলকাতা পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র রাতে বলেন, ‘‘আমি ঘটনাটি দেখে বিব্রত। ঘটনার জন্য দুঃখিত। রাতেই ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই সময়ে ওখানে ডিউটিতে থাকা ট্রাফিকের সমস্ত অফিসারদের সোমবার সকালে আমার অফিসে ডেকে পাঠিয়েছি। তাঁরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কী করে এই অমানবিক ঘটনা ঘটল, তা জানতে চাওয়া হবে। অফিসারদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য তদন্ত হবে।’’

প্রকাশ্য রাস্তায় ফেলে সেই যুবকের বুকে-পিঠে লাথি মারা হচ্ছে । রবিবার সন্ধ্যায় এক্সাইড মোড়ে।

প্রকাশ্য রাস্তায় ফেলে সেই যুবকের বুকে-পিঠে লাথি মারা হচ্ছে । রবিবার সন্ধ্যায় এক্সাইড মোড়ে। নিজস্ব চিত্র।

তার আগে এ দিন এক্সাইড মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, তখনও ডিউটি করছেন তন্ময় বিশ্বাস নামে ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। রয়েছেন সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডের কর্মীরাও। তন্ময় নিজে অকপটে ঘটনার কথা স্বীকারও করে নেন। তিনি এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্য পুলিশকর্মীরা জানান, এ দিন সন্ধ্যায় এক্সাইড মোড় থেকে হাওড়াগামী একটি চলন্ত বাস থেকে মহিলার ব্যাগ ছিনতাই করেছিলেন ওই যুবক। বাস থেকে নেমে পালাতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে মার খাচ্ছিলেন তিনি। তন্ময় প্রথমে তাঁকে উন্মত্ত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করেন। তখন ওই যুবক পালানোর চেষ্টা করতেই তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেন তন্ময়। সেই কারণেই ফুটপাথে ফেলে পা দিয়ে ঠেসে ধরেছিলেন। যে দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছে এ মহানগর।

পুলিশের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে মাঝে মাঝেই। কিন্তু তা বলে প্রকাশ্য রাজপথে এ ভাবে বুট-পরা পায়ে এক জনকে লাথি মারার দৃশ্য কার্যত নজিরবিহীন। আদতে পুলিশকে সাহায্য করার জন্য রাখা হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। ক্ষমতার আস্ফালন কি তাঁদের মধ্যেও সংক্রমিত হল, প্রশ্ন উঠেছে জনমানসে।

প্রশ্ন উঠেছে, যে অপরাধই ওই যুবক করুন না কেন, ধরা পড়ার পরে এমন অমানবিক ভাবে পা দিয়ে ঠেসে ধরে মারধর করতে হবে কেন? কেন তাঁকে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হল না? তন্ময়ের যুক্তি, ‘‘সেই সময় ওই যুববকে সামলানো যাচ্ছিল না। নেশাগ্রস্ত ওই যুবকের গায়ে ভীষণ জোর। তাই বাধ্য হয়েই তার বুকে পা দিয়ে কোনও মতে আটকে রাখা হয়েছিল।’’

প্রসঙ্গত, এই কথোপকথনের সময় ফুটপাতে জোড়হাত করে জবুথবু অবস্থায় বসে ছিলেন ওই যুবক। মুখ দিয়ে অস্ফুট কিছু শব্দ করছিলেন। কোনও কথাই স্পষ্ট ভাবে বলতে পারছিলেন না তিনি। এমনকি নিজের নামও নয়। তাঁকে ঘিরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সাউথ ট্রাফিক গার্ডের কয়েক জন পুলিশকর্মী ও তন্ময়। কুঁকড়ে থাকা ওই যুবককে দেখে অবশ্য মনে হয়নি, তিনি প্রবল শক্তিধর।

ওই এলাকায় কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের এক আধিকারিক জানান, অভিযুক্ত যুবকের পকেট থেকে একটা চোরাই মোবাইল উদ্ধার হয়েছে। এবং যাঁর মোবাইল তাঁকে নাকি সেটি ফেরতও দেওয়া হয়েছে। তিনি কোনও অভিযোগ করেননি। যে মহিলার ব্যাগ ছিনতাই করার চেষ্টা করা হয়েছিল, তিনি নিজের ব্যাগ ফেরত পেয়ে গিয়ে কোনও অভিযোগ করেননি। তবে অভিযোগ না-হলেও যুবককে শেক্সপিয়র সরণি থানার হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। কারণ, ঘটনাস্থল ওই থানার অধীনে এবং নিয়ম অনুযায়ী তাঁরাই যুবকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy