ফাইল চিত্র।
মহুয়া মৈত্রের সাম্প্রতিক ‘মা কালী’ নিয়ে মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণের পর দিনভর তরজা চলেছে। মোদীর বক্তৃতার অংশ তুলে ধরে মহুয়াকে নিশানা করেছিলেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান এবং বাংলার পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়। পাল্টা সুর চড়িয়েছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদও। মালবীয়-মহুয়া সংঘাতে নিজের ‘রায়’ শুনিয়েছেন আর এক তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও। এ বার দিনের শেষে এই বিতর্কে জড়ালেন স্মৃতি ইরানি। সর্বোপরি, ‘মা কালী’ বিতর্কে এই প্রথম কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সরাসরি মুখ খুললেন। তিন দিনের বঙ্গ-সফরে এসে হাওড়ায় স্মৃতি বলেন, ‘‘এক জন তৃণমূল সাংসদ মা কালীকে অপমান করবেন, এটা অসম্ভব কিছু নয়। অতীতেও দেবদেবীদের নানা ভাবে অপমান করেছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।’’
রবিবার হাওড়ার ডুমুরজলায় দলের একটি সাংগঠনিক বৈঠক করেন বিজেপির সর্বভারতীয় নেত্রী তথা কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী। সূত্রের খবর, গত আট বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার জন্য যা যা উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করেছে, তা নিয়ে মূলত আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে। সাংগঠনিক বৈঠকের পর রামরাজাতলার রাম মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন স্মৃতি। পুজো দিয়ে বেরোনোর পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের মানুষের জন্য ভগবান রামের কাছে প্রার্থনা করেছি। হাওড়া এসে এ রকম রামমন্দির দর্শন করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।’’ এর পরেই কালী বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলে স্মৃতি বলেন, ‘‘যাঁরা এ ভাবে হিন্দু ধর্মের অপমান করছেন, তৃণমূল চাইলে তাঁদের শাস্তি দিতে পারত। কিন্তু ওঁরা তা করেননি। মুখ্যমন্ত্রী (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)-র উচিত ছিল, যিনি এ ধরনের মন্তব্য করেছেন, তাঁকে দল থেকে বরখাস্ত করা।’’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আরও সংযোজন, ‘‘তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এ ভাবেই বার বার রামের অপমান করেছেন। দেবদেবীদের অপমান করে বাংলার সব নাগরিক, সব পরিবারকে আঘাত করেছেন। দেব দেবীদের অপমান করাটাই তৃণমূলের রাজনীতি।’’
প্রসঙ্গত, ভারতীয় পরিচালক লীনা মানিমেকালাইয়ের তথ্যচিত্রের একটি পোস্টারে দেবী কালী রূপে এক মহিলাকে ধূমপান করতে দেখা গিয়েছে। যা নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক প্রসঙ্গে সোমবার কলকাতার এক অনুষ্ঠানে একটি মন্তব্য করেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ। তাঁর সেই মন্তব্য নিয়ে দানা বাঁধে নতুন বিতর্ক। এক দিকে মহুয়ার মন্তব্য নিয়ে আক্রমণ শানাতে শুরু করে বিজেপি। অন্য দিকে, সর্বভারতীয় তৃণমূলের তরফেও টুইট করে জানিয়ে দেওয়া হয়, তারা মহুয়ার বক্তব্যকে সমর্থন করছে না। গত সপ্তাহখানেক ধরে এই বিতর্কে ক্রমাগত মহুয়াকে নিশানা করে চলেছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। পাল্টা জবাব দিচ্ছেন মহুয়াও। সেই আবহে রবিবার কলকাতার নজরুল মঞ্চে, রামকৃষ্ণ মঠ এবং মিশনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে, ভিডিয়ো কনফারেন্সে বক্তৃতা করতে গিয়ে বাংলায় কালীপুজোর মাহাত্ম্য নিয়ে কথা বলেন মোদী। সেই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে রামকৃষ্ণ এবং বিবেকানন্দের ভক্তির কথাও উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘কালী নিয়ে বাংলার মনীষীদের এই বোধ, কালীর প্রতি এই ভক্তি, নিষ্ঠাভরে করা বাংলার কালী পুজোতেও দেখা যায়।’’
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য ‘কালী’ পোস্টার বা মহুয়ার কালীপুজো নিয়ে করা মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কোনও কথা বলেননি। কিন্তু তাঁর এই বক্তৃতার কথা তুলে ধরেই সেই বিতর্কে ঢুকে পড়েন মালবীয়। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘মোদী যেখানে বাংলা তথা গোটা দেশের কালীভক্তির কথা স্মরণ করছেন, সেখানে বাংলার এক সাংসদ কালীকে অপমান করছেন।’ এর পরেই মহুয়া টুইট করে লেখেন, ‘বঙ্গবিজেপির ট্রোলকর্তাকে আমার পরামর্শ, আপনাদের প্রভুদের বলুন, যা জানেন না তা নিয়ে আলটপকা মন্তব্য যেন না করেন। এর আগে বাংলায় দিদি ও দিদি বলে পাদুকাঘাত খেয়েছেন, এ বার মা ও মা বলতে এলে তাঁদের বুকের উপরে পদাঘাত হবে।’
রবিবার মালবীয় ও মহুয়ার টুইট-যুদ্ধ প্রসঙ্গে তৃণমূল প্রবীণ সাংসদ সৌগত বলেন, ‘‘বাংলায় কালী পুজো কী ভাবে হবে, তা বাঙালিদের শেখাতে হবে না। তৃণমূল কোনও রকম ধর্মীয় বিতর্ক চায়নি, তাই নিজের দলের সাংসদকেও সমর্থন করেনি। তা বলে আমরা মা কালীকে নিয়ে অমিত মালবীয়র কাছ থেকে জ্ঞানও শুনব না।’’
‘মা কালী’ বিতর্ককে হাতিয়ার করে মহুয়ার গ্রেফতারির রাজ্য জুড়ে সরব হয়েছে গেরুয়া শিবির। রাজ্যের বিভিন্ন থানায় মহুয়ার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বহু অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে। বিজেপিকেও পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন মহুয়া। প্রথম কালীর জয়ধ্বনি দিয়েই একটি টুইট করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ। তিনি লেখেন, ‘জয় মা কালী! যে দেবীকে বাঙালি পুজো করে, সেই দেবী নির্ভীক এবং শান্ত।’ পরে একটি তিনি লেখেন, ‘ আমি কালীর উপাসক। ভয় পাই না। আর যা সত্যি তাকে ঠেকনা দেওয়ার অন্য শক্তির প্রয়োজন হয় না। বিজেপি যা করতে চায় করে নিক।’ এখন দেখার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতির মন্তব্যের কোনও জবাব তিনি দেন কি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy