গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
সোমবার দুপুরেই নির্দেশ দিয়েছিলেন বিধাননগরের ১৬টি পরিবারের বাসস্থান একটি বেআইনি বাড়ি ভেঙে ফেলার। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মত বদলালেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর এজলাসে ওই বাড়ির বাসিন্দাদের দুরবস্থার কথা বলতে এসেছিলেন বিধাননগর পুরসভার কাউন্সিলর। সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে বিচারপতির সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বিচারপতিও বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর সময় মাথার উপর থেকে ছাদ চলে যাবে এটা আমিও চাই না।’’
তবে একই সঙ্গে বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছেন, এই বাড়ির নির্মাণ নিয়ে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ তলা বাড়ি তো আর হাওয়ায় হাত নাড়িয়ে পিসি সরকারের ম্যাজিকের মতো তৈরি হয়নি। কী ভাবে ওই বাড়ি সবার নজর এড়িয়ে তৈরি হল, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’’
বিধাননগর সেক্টর ফাইভ এলাকার শান্তিনগরে অবৈধ ভাবে নির্মিত একটি পাঁচ তলা ভবন দ্রুত ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার বিধাননগর পুরসভাকে তিনি নির্দেশ দেন, অবিলম্বে ওই বাড়ির জল এবং বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে। সোমবার দুপুর ১টার মধ্যে বাড়ি ভাঙার কাজও শুরু করতে বলেছিলেন বিচারপতি। একই সঙ্গে পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, মঙ্গলবার সকালে এ সংক্রান্ত প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে হবে হাই কোর্টে। কিন্তু মঙ্গলবার বিচারপতির এজলাসে এ সংক্রান্ত শুনানির পরে তিনি জানিয়ে দেন, বাসিন্দাদের বক্তব্য শোনার পরে তিনি মত পরিবর্তন করছেন। আপাতত বাড়ি ভাঙা হচ্ছে না। তবে এই ছাড় শুধু উৎসবের মরশুম পর্যন্ত।
মঙ্গলবার এজলাসে বসেই ওই বাড়ির বাসিন্দা ১৬টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন বিচারপতি। তার পরেই তিনি বলেন, ‘‘আপনারা ঠকেছেন। এটা দেখার পরে আমি মত পরিবর্তন করছি। প্রোমোটার আপনাদের ঠকাতে পারে। কিন্তু আদালত তো ঠকাতে পারে না। মানবিকতা বলে তো কিছু আছে। আপনাদের বাড়ি এখনই ভাঙছি না।’’ তবে একই সঙ্গে বিচারপতি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘‘পুজো মিটে গেলে এ নিয়ে আদালত পরবর্তী নির্দেশ দেবে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ওই নির্মাণ ভাঙা হবে।’’
মঙ্গলবার ওই ১৬টি পরিবারের হয়ে কথা বলতে বিচারপতির এজলাসে এসেছিলেন বিধাননগর পুরসভার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চামেলি নস্কর। বিচারপতির সামনে সে কথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেলেন তিনি। সেই কান্না চলে দীর্ঘ ক্ষণ। বিচারপতিকে কাউন্সিলর অনুরোধ করেন, এই পরিবারগুলির জন্য অন্তত বিকল্প কিছু ব্যবস্থা করা হোক। এর পরেই বিচারপতি বাড়ি ভাঙা নিয়ে বেশ কয়েকটি নির্দেশ দেন।
বিচারপতি বলেন:
১। আপাতত ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাঙার নির্দেশ স্থগিত থাকবে।
২। ওই ১৬টি পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিধাননগর পুরসভার মেয়র, চেয়ারম্যান এবং কাউন্সিলরের সঙ্গে আলোচনা করারও নির্দেশ দেন বিচারপতি।
৩। বিচারপতি বলেন, ‘‘মানবিক ভাবে বিবেচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, আদালতে তা রিপোর্ট দিয়ে ২৪ নভেম্বরের মধ্যে জানাতে হবে।’’
৪। ১৬টি পরিবারকে বলেন, ফ্ল্যাটের বকেয়া টাকা প্রোমোটারকে দিতে হবে না।
৫। প্রোমোটারদের উদ্দেশে বিচারপতি জানান, ফ্ল্যাট মালিকদের সব টাকা ফেরত দিতে হবে।
বিচারপতির এজলাসে হাজির ছিলেন ওই বেআইনি নির্মাণের প্রোমোটারদের আইনজীবীরাও। বিচারপতিকে দু’জন প্রোমোটার অনুরোধ করেছিলেন, ফ্ল্যাট মালিকদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ যেন না দেওয়া হয়। জবাবে বিচারপতি বলেন, ‘‘একটা ইট লাগাতে গেলে পুরসভার অনুমতি লাগে। এত ক্ষমতা যে চার তলা ভবন তৈরি হয়ে গেল! আর কেউ কিছু জানল না। পিসি সরকারের মতো হাত ঘুরিয়ে চার তলা ভবন তৈরি হল না কি?’’ এর পরে অবশ্য বিচারপতি এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy